Grave of the Fireflies (1988) দেশ: জাপন
আপনি যত বড় মুভি প্রেমীই হন না কেন এই মুভি যদি আপনি না দেখে থাকেন তাহলে কখনোই আপনার মুভি দেখার পূর্ণতা পাবে না।
এটি এমন একটি মুভি যেটি আপনি একবার দেখলে দ্বিতীয়বার দেখার সাহস পাবেন না। কারণ মুভিতে ছোট ছোট অসহায় দুই ভাই-বোনের দুঃখ-কষ্ট,যন্ত্রণা এবং তাদের বাঁচার আকুতি আপনি এতটাই ফিল করবেন যে দ্বিতীয়বার আর তাদের এই কষ্ট দেখতে চাইবেন না।
Genres: Animation
imdb:8.4
imdb Top Rated Movies #57
my rating:10
মুভিটি নির্মিত হয়েছে জাপানের উপন্যাসিক Akiyuki Nasaka এর Grave of Fireflies উপন্যাস অবলম্বনে।
Grave of Fireflies বইটি লেখকের আংশিক আত্মজিবনী মূলক বই।
এটি একটি যুদ্ধের মুভি। যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষকে
যে অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয় মুভিতে সেটিই দেখানো হয়েছে।
…………….[ Spoiler Alert ]……………….
Storyline : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫,যে রাতে আমি মারা যাই। মুভিটি শুরু হয় এই কথাটি দিয়ে। এটি একটি স্মৃতিচারণ মুলক
মুভি ।সেইটা নামের এক কিশোর যুদ্ধের সময় যে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল মুভিতে সেটিই দেখানো হয়েছে। মুভির গল্পটি
সেইটার স্মৃতিচারণকে কেন্দ্র করে তৈারী।
মুভির শুরুটা হয় রেল স্টেশন থেকে যেখানে দেখা যায় প্রায় মৃত সেইটা খুব ধীরে ধীরে সেটসুকো..সেটসুকো…বলতে থাকে এবং এক
সময় সে মারা যায়। রাতে রেলস্টেশনের ঝাড়ুদার তার মৃতদেহ এবং পাশে পড়ে থাকা খালি একটি Fruit drop ক্যন্ডির কন্টিনার
পায় । ঝাড়ুদার খালি ক্যন্ডির কন্টিনারটি বাইরে ফেলে দেয় ঠিক তখন সেইটা ও তার ছোট বোন সেটসুকোকে পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকতে
দেখা যায় এবং তাদের চারপাশে উড়তে থাকে অসংখ্য জোনাকি পোকা ।
সেইটার বয়স হবে ১৩ বা ১৪ আর তার ছোট বোন সেটসুকোর বয়স ৪ বা ৫। তাদের মা একজন গৃহীনি এবং হার্টের রোগী ,বাবা যুদ্ধে কর্মরত
জাপানি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ।
মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা থেকে বাঁচতে সেইটা কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মাটির নিচে লুকিয়ে রেখে তার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে চলে যায় আশ্রয় কেন্দ্রের সন্ধানে ।
পিছনে থেকে যায় তার মা। হামলা শেষে তার মাকে খুঁজতে এসে দেখে তাদের এলাকা পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ এবং পুড়ে গেছে।
একজন এসে বলে তার মা প্রায় মৃত অবস্থায় রয়েছে শরনার্থী ক্যাম্পে, সেইটা তার মাকে দেখতে যায় এবং কিছু পরে তার মা মারা যায়। সে তার বোনকে তার মায়ের মৃত্যু কথা জানায় না যদিও তার ছোটবোন মাঝে মাঝে তার মায়ের কাছে যাবার জন্য কান্নাকাটি করে ।
তারা দুই ভাই বোন আশ্রয় নেয় তার এক দূরসম্পর্কের আন্টির কাছে ।ভালো থাকার জন্য আন্টিকে সেইটা লুকিয়ে রাখা জিনিসগুলি দিয়ে
দেয় কিন্তু তারপরও তারা ভালো ব্যবহার পায় না । একই সাথে খেতে বসে কিন্তু তাদের দুজনকে আলাদা খাবার দেওয়া হয় ।একসময়
সে তার মায়ের কাপড় কাপড় বিক্রি করে দেয় তার আন্টির কাছে ১৫ কেজি চাউলের জন্য। তা দিয় তারা আলাদা রান্না করে খায় এবং এক সময় তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
তারা দূরে এক টিলার নিচে পরিত্যাক্ত বাংকারে আশ্রয় নেয়। যেখানে দিনের বেলাতেই অনেক অন্ধকার থাকে। রাতের বেলা তারা অন্ধকার দূর করার জন্য বাইরে থেকে জোনাকি পোকা এনে তাদের মশারির ভিতরে রেখে দেয় যাতে পুরো ঘর আলোকিত হয়। সকালে
পোকাগুলু মারা গেলে তার বোন পোকাগুলো কে কবর দেয়।
একসময় তাদের খাবার এবং সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। খাবারের অভাবে তার বোন পুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং ডায়রিয়া হয়। অনেক খুজেও সে কোন কাজ বা খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। তাই সে মানুষের বাড়িতে গিয়ে চুরি করা শুরু করে ।বিমান হামলার আগে যখন
সাইরেন বাজানো তখন সে মানুষের বাড়িতে গিয়ে চোরে করে । করণ তখন সব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায়। একবার সে ধরা পড়ে এবং প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়।তাকে পুলিশে দেয় তবে পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
ধীরে ধীরে তার বোনের আবস্হা প্রচন্ড খারাপ হতে থাকে। সে তার বোনকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যায় ।ডাক্তার তাকে বলে:
ডাক্তার:ও পুষ্টিহীনতার জন্য দুর্বল হয়ে গেছে ।তার উপর আবার ডাইরিয়া।
সেইটা: আপনি কি ওকে কিছু মেডিসিন দিতে পারেন? দয়া করে ওকে কিছু মেডিক্যাল সেবা দিন।
ডাক্তার:মেডিসিন এ কাজ হবে না। ওর যা দরকার তা হল পুষ্টিকর খাবার।
সেইটা:পুষ্টিকর খাবার আমি কোথায় পাব??
ডাক্তারের কাছ থেকে তার বোনকে নিয়ে আসার সময় সে দেখে এক লোক রাস্তায় বরফ কাটতেছে এবং কিছু বরফ কুচি রাস্তায় পড়ে থাকে ।রাস্তায়
পড়ে থাক সেই বরফ সে তার বোনের মুখে তুলে দেয়।সে তার বোনকে জিঙ্গাসা করে সে কি খেতে চায়।তার বোন বল
সেটসুকো:টেম্পুরা, শাসিমি, তোকরোতেন নুডুলস…
সেইটা:আর কিছু?
সেটসুকো:আইস ক্রিম। আর…আরো লজেন্স খেতে চাই।
সেইটা:আমি যাই আর সব সঞ্চয় তুলে আনি। (ব্যাংকে থাকা তার মায়ের শেষ ৩০০০ ইয়েন)
সেটসুকো:আমার কিছু লাগবে না। দয়া করে আমার সাথে থাকো।
সেইটা:আমি তোমার জন্য চাল আর কিছু পুষ্টিকর খাবার নিয়ে আসছি…তারপর আমি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
সর্বশেষ সঞ্চিত টাকা উঠিয়ে সে তার বোনের জন্য কিছু মুরগির মাংস,কয়েকটা ডিম এবং একটি তরমুজ আনে।
ফিরে এসে দেখে তার বোন কি যেন খাচ্ছে। মুখ খুলে দেখে মার্বেল খাচ্ছে। তার বোন হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে সেইটাকে আরো দুটি মার্বেল দেখিয়ে বলে তাকে খাওয়ার জন্য। সে তার জন্য বানিয়েছে।
সেইটা তরমুজ কেটে তার বোনের মুখে দেয় কিন্তু সেটসুকোর খাওয়ার মত শক্তি আর আবশিষ্ট নেই। সেইটা বাইরে বোনের জন্য রান্না করতে যায়।
কিন্তু আস্তে আস্তে তার বোন ঘুমিয়ে পড়ে যে ঘুম আর কখনোই ভাঙ্গে না। পরে দেখা যায় বাইরে বৃষ্টিতে সেইটার রান্না করা খাবার ভিজছে। ভিতরে সে তার মৃত বোনকে কোলে নিয়ে বসে আছে। এভাবে সে সারা রাত তার বোন কে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
সকালে একটি ঝুড়ির মধ্যে তার মৃত বোনকে রেখে ঝুড়িটি পুড়িয়ে ফেলে।ঝুড়ির মধ্যে দিয়ে দেয় তার বোনের প্রিয় পুতুলটি। রেখে দেয় শুধু সবসময়ে তার বোনের কাছে থাকা Fruit ক্যন্ডির খালি কন্টিনারটি। যে ক্যন্ডি তার বোন চাওয়া সত্বেও সে অনেক সময় এনে দিতে পারেনি।
মুভিটি দেখতে বসলে আপনি খুবই কষ্ট পাবেন এবং আপনার চোখ দিয়ে অনেক বার পানি চলে আসবে তবে কোনভাবেই আপনি বিষন্ন বা হতাশ হবেন না। বরং আপনার মনে মানুষের প্রতি ভালোবাসা আরো জাগ্রত করবে।
Lutfor Rahman