কুইন্সটাউন ইভেন্ট সেন্টারের মাঠটা ছবির মতো সুন্দর। মাঠের একদিকে বিমানবন্দর, অন্যদিকে পাহাড়। পাশাপাশি সবুজের সমারোহটা চোখের জন্য দারুণ সুখানুভূতিরই। কিন্তু এমন দুর্দান্ত এক মাঠেই আজ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল মোটেও ভালো খেলতে পারল না। যুব বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে টানা জয়ের পর আজ ইংল্যান্ডের কাছে তারা হেরে গেছে ৭ উইকেটে। এই হারে অবশ্য পরের রাউন্ডে যাওয়ার আশা শেষ হয়ে যায়নি। কানাডাকে ইংল্যান্ড হারালেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত বাংলাদেশের।
টসে জিতে চমৎকার রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাইফ হাসান। কিন্তু ব্যাটিংটা মোটেও ভালো হয়নি। ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহাবিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত আফিফ হাসানের ৬৩ আর আমিনুল ইসলামের ৩১ রানে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৭৫ রান তোলে।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ড শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও অধিনায়ক হ্যারি ব্রুকসের অপরাজিত ১০২ আর ইউয়ান উডসের ৪৮ রানে ২৯.৩ ওভারেই ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে (১৭৭)।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতোই। ওপেনার পিনাক ঘোষের উইকেটটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। ডিলন পেনিংটনের বলটি লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বাঁহাতি পিনাকের অফ স্টাম্প মিস করছিল বলে মনে হয়েছে। তবে পিনাকের উইকেটটি যদি হয় দুর্ভাগ্যজনক, তাহলে অধিনায়কের ভুল অমার্জনীয়। স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া অধিনায়ক সাইফ পরের বলেই লং অফে ইথান বাম্বারের বলে হ্যারি ব্রুকসকে ক্যাচ দেন। এর আগে অবশ্য বাম্বারের বলেই জ্যাক ডেভিসকে ক্যাচ দিয়েছিলেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম।
৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভয়ংকর বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ে দলীয় ২৭ রানে কানাডার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা তৌহিদ হৃদয় আম্পায়ারের আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লু হয়ে গেলে। তৌহিদ আফিফের সঙ্গে বিপদটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাল্টা আক্রমণের চেষ্টাও করছিলেন। কিন্তু ১২ রানে তিনি ফিরে গেলে পরিস্থিতিটা অনেক কঠিন হয়ে যায় বাকিদের জন্য। কিন্তু তারপরও দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আফিফ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব চেষ্টা করেছিলেন। নিজেদের মধ্যে ৯৪ রানের এক জুটি গড়ে দলকে পথ দেখিয়েছিলেন। নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু অফ স্পিনার ইভান উডসের এক ওভারে আমিনুল ও আফিফ ফিরে গেলে আবারও বিপর্যয়ে পড়ে যায় দল। আফিফ এই টুর্নামেন্টে নিজের ব্যাটে দারুণ ধারাবাহিকতাই ধরে রেখেছেন। আজ ৬৩ রান করেছেন, ৮৫ বলে, ৮টি চারের সাহায্যে। আমিনুল ৬৪ বলে করেছেন ৩১, ২টি চার মেরে।
আফিফ ও আমিনুলের দুর্দান্ত জুটিটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বড় সংগ্রহের স্বপ্নটাও ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের। লক্ষ্যটাও নির্দিষ্ট হয়ে যায় ইনিংসের বাকি ওভারগুলো ব্যবহার করে আসার ব্যাপারে। সে লক্ষ্যে অবশ্য পুরোপুরি না হলেও প্রায় সফলই বলা যায় বাংলাদেশকে। দল শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছে ৪৯.২ ওভারে। আফিফ ও আমিনুলের পর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম আঁকন ও হাসান মাহমুদ হাল ধরেছিলেন। মাহমুদ ২৩ আর মাহিদুল ২০ রান করেন। শেষ ব্যাটসম্যান টিপু সুলতান অপরাজিত ছিলেন এক বল খেলে। তিনি অবশ্য রানের হিসাব খোলার সুযোগই পাননি।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন বাম্বার ও উডস। একটি করে উইকেট পেয়েছেন পেনিংটন, টম স্ক্রিভেন ও লুক হোলমান।
১৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রানে টম ব্যানটন আর ১৯ রানে সেভিন পেরেরাকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ৪৯ রানের মাথায় ফেরেন উইল জ্যাকস। কিন্তু অধিনায়ক ব্রুকস ও উডস বড় জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করে পৌঁছে দেন লক্ষ্যমাত্রায়। ব্রুকস ৮৪ বলে ১০২ রান করেন ১৩টি চার ও ৩টি ছয়ে। উডসের ৪৮ রান ছিল সে তুলনায় ধীরস্থির, ঠান্ডা মাথার। ৫৭ বল খেলে ৪৮ করেন তিনি।
বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ, কাজী অনিক ও নাঈম একটি করে উইকেট নেন।