এসইও: কি এবং কীভাবে?

0

বর্তমানে প্রায় সকল ওয়েবসাইটের বেশিরভাগ ভিজিটর আসে মূলত সার্চ ইঞ্জিন থেকে। খুব বেশি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট না হলেও আপনি আপনার সাইটটিতে ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন যদি সাইটটিতে যথাযথভাবে এসইও করা থাকে। ইংরেজি শব্দ SEO এর সম্পূর্ণ রূপ Search Engine Optimization. সহজভাবে বলতে গেলে যে পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম দিকে নিয়ে আসতে পারবেন সে পদ্ধতিকে এসইও বলা হয়। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন যেমন গুগুল, ইয়াহু, বিং অথবা পিপীলিকাতে কেউ কোনো তথ্য সার্চ করতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সার্চের কিওয়ার্ড অনুসারে সুবিন্যস্তভাবে অসংখ্য ওয়েবসাইট ভিত্তিক ফলাফল দেখায়৷ এক্ষেত্রে যেসব সাইটের ভালো এসইও করা থাকবে, সেসব সাইটকে শুরুতে দেখানো হবে। সাধারণত মানুষ প্রথম পেইজে কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি পেয়ে গেলে অন্যান্য পেইজগুলো ভিজিট করে না। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ভালো এসইও সমৃদ্ধ সাইটের ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমান যুগে এসইও ব্যতীত সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এসইও ব্যতীত কোনো ওয়েবসাইটের তথ্য সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইড করেনা।

কেনো প্রয়োজন এসইও?

মনে করুন আপনি কম্পিউটার সম্পর্কিত অনেক কাজ করতে পারেন। আপনি চান দেশব্যাপী আপনার কাজের পরিধি ছড়িয়ে দিতে। একটি ওয়েবসাইট খুলে ফেললেন নিজের কাজ বর্ণনাপূর্বক। এখন শুধু সাইট খুলে বসে থাকলেই ক্লায়েন্ট পাবেন না। আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। আপনি বড়জোর আপনার বিজ্ঞাপন আপনার এলাকায় দিতে পারবেন।

কিন্তু এর বেশি কিছু করতে গেলে আপনার বেশ বড়সড় রকমের খরচা হয়ে যেতে পারে। উপরন্তু দেখা যাবে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি৷ এক্ষেত্রে আপনার প্রচারের কাজটি একদম সহজেই করে দিতে সক্ষম এসইও। আপনি দক্ষতার সাথে এসইও করতে পারলে কোনো ইন্টারনেট ইউজার যদি আপনার কাজ সম্পর্কিত কোনো কিওয়ার্ড লিখে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটটিকেই শুরুতে দেখানো হবে ইউজারের নিকট। বর্তমান যুগে আপনি যদি ইন্টারনেট জগতে সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্যারিয়ার ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারবেন না৷

এ উপস্থাপনের কাজটি করার জন্য এসইও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওয়েবসাইট তৈরি হয় প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য৷ যত বেশি মানুষ ওয়েবসাইট ভিজিট করবে, তত বেশি তারা প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সম্পর্কে ধারণা পাবে৷ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ তথ্যের জন্য নিয়মিত সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে৷ সুতরাং নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রচারে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের শুরুতে নিয়ে আসা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন এসইও বিশেষজ্ঞ এসইও এর প্রকারভেদ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। সাধারণত মৌলিকভাবে এসইও দুই প্রকার। যথা,

১/ পেইড এসইও (Paid SEO)

২/ অর্গানিক এসইও (Organic SEO)

১: পেইড এসইও:

পেইড এসইও হলো দ্রুত আপনার ওয়েবসাইটটিকে টাক দিয়ে ট্রাফিক কিনে আনার পদ্ধতি। এতে সার্চ ইঞ্জিনকে পেমেন্ট করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেইজে আপনার সাইটটিকে স্থান দিতে পারবেন।

২: অর্গানিক এসইও :

অর্গানিক এসইও এর ক্ষেত্রে আপনার কোনরূপ টাকা খরচ হবে না। এক্ষেত্রে আপনার সাইটটিতে দক্ষতার সাথে এসইও করা থাকলে আপনি ফ্রিতেই আপনার সাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিনের শুরুতে নিয়ে আসতে পারবেন। অর্গানিক এসইও কে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ,

১/ হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO)

২/ ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO)

৩/ গ্রে হ্যাট এসইও (Gray Hat SEO)

১/ হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO) :

যে পদ্ধতিতে কোনো প্রকার স্প্যামিং না করে সার্চ ইঞ্জিনের নিয়মনীতি মেনে এসইও করা হয়ে থাকে তাকে হোয়াইট হ্যাট এসইও বলে। হোয়াইট হ্যাটের পদ্ধতিকে আবার দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা,

i)অনপেইজএসইও (ON PAGE SEO):

ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্য়াংকিং এর উদ্দেশ্যে সাইটে অভ্যন্তরে যেসব কাজ করা হয় তাকে অনপেইজ

এসইও বলা হয়। যেমন, টাইটেল ট্যাগ, কিওয়ার্ড ইত্যাদি।

ii)অফপেইজএসইও (OFF PAGE SEO):

অফপেইজ এসইও মূলত ওয়েবসাইটের প্রচারণা করা। এক্ষেত্রে নিজ সাইটের প্রচারের জন্য অন্য সাইটে URL Share, Link Building ইত্যাদি করা হয়।

২/ ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO):

সার্চ ইঞ্জিনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে যে এসইও করা হয় তাকে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও বলে।

এই পদ্ধতিতে এসইও করা হলে গুগুলের আধুনিক এলগোরিদমে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ সেক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন সাইট আপনাকে পেনাল্টি বা ডিইনডেক্সিং

করে দিতে পারে৷ এ পদ্ধতিতে এসইও না করাই ভালো।

৩/ গ্রে হ্যাট এসইও (Gray Hat SEO):

ব্ল্যাক হ্যাট ও হোয়াইট হ্যাট এর সংমিশ্রণের প্রক্রিয়াকে গ্রে হ্যাট এসইও বলা হয়৷

এক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনের কিছুটা নিয়ম মান্য করার পাশাপাশি কিছুটা অমান্যের মাধ্যমে এসইও করা হয়ে থাকে।

এসইও শিখে ইনকাম করবেন যেভাবে

বর্তমানে এসইও সেক্টরে ইনকামের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আপনার যদি এসইওতে ভালো দক্ষতা থাকে তবে ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইটে এসইও করে দেওয়ার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে ফ্লিল্যান্সার, ফাইবার, আপওয়ার্কের মত প্রচুর অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে। এসব সাইট ভিজিট করলে দেখবেন মোটা অংকের প্রচুর এসইও ভিত্তিক কাজ। পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকলে পেয়ে যেতে পারেন মনের মতো কোনো একটি কাজের সুযোগ। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যতীত যদি আপনার পরিচিতি থাকে সেক্ষেত্রে লোকাল মার্কেটেও পেয়ে যেতে পারেন এসইও ভিত্তিক কোনো একটি প্রজেক্ট। যত বেশি দক্ষতার সাথে প্রজেক্ট সম্পন্ন করবেন তত বেশি ক্লায়েন্ট বৃদ্ধি পাবে আপনার। এর পাশাপাশি আপনি নিজেই একটি সাইট খুলে মনের মত এসইও করে নিতে পারেন৷ আপনার সাইটটিতে ভালো এসইও করা থাকলে মানুষ সার্চ ইঞ্জিন থেকে কিওয়ার্ড সার্চ করে আপনার সাইটটিতে বেশি প্রবেশ করবে। গুরুত্বপূর্ণ কিওয়ার্ড রিসার্চ করে কাজ করে গুগুলের টপ পেইজে আপনার সাইটটিকে স্থান দিতে পারলে অনায়াসেই প্রতিদিন প্রচুর ট্রাফিক নিয়ে আসা সম্ভব।

এভাবে ট্রাফিক বেশি হলে আপনার সাইটে জুড়ে দিতে পারেন গুগুল অ্যাডসেন্স। পাশাপাশি যোগাযোগ করতে পারেন স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতার সাথেও। এরপর ইনকাম বাড়লে নিজে একটি বড় কোম্পানি খুলে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন উদ্যোক্তা। এছাড়াও এসইওয়ের কাজ করতে পারেন টিমওয়ার্কে। এভাবেই এসইও এর মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা আয়ের পাশাপাশি সৃষ্টি করতে পারেন অন্যের চাকরির সুযোগও।

ভবিষ্যতে যেমন থাকবে এর ডিমান্ড

  • কাজের ভবিষ্যৎ কেমন কিংবা সামনে ডিমান্ড থাকব কিনা
  • এ নিয়ে সবারই কমবেশি চিন্তা রয়েছে।
  • বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে লাভজনক ক্যারিয়ার
  • তৈরি করা খুব কঠিন।
  • এক্ষেত্রে চাকরির বাজারে যেসব সেক্টরের চাহিদা বাড়ছে, সেইসব সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। ইন্টারনেটের যুগে সকল প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে।

সকল প্রতিষ্ঠান চায় যেনো তাদের ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে দেখানো হয়। কারণ বেশিরভাগ সময় সার্চদাতা সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেইজে তার কাঙ্ক্ষিত সাইটটি পেয়ে গেলে নিচের দিকের সাইটগুলো ভিজিট করেনা।

যেহেতু এ পদ্ধতিতে প্রচারের জন্য এসইও একমাত্র সহজ পদ্ধতি সেহেতু বলা যেতে পারে এসইও এর গুরুত্ব কখনই শেষ হওয়ার নয়। ইন্টারনেট ব্যবস্থা যতদিন থাকবে, এসইও এর চাহিদা ততদিন বিদ্যমান থাকবে। বাংলাদেশে এসইও নিয়ে বর্তমানে অনেকেই কাজ করছেন, যারা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার হিসেবে গড়ে তুলেছেন সময়ের স্মার্ট ক্যারিয়ার। ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন তাদের একজন।