ইউরোপিয়ান ফুটবল ফ্যান মানেই আড়াই-তিন মাসের ট্রান্সফার উইন্ডোর তাৎপর্য এক বাক্যেই মেনে নিবেন।ট্রান্সফার উইন্ডোতে যেমন একটা ক্লাবের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের দক্ষতা যাচাই করা যায়, তেমনি কোচ ও তার কোচিং স্টাফদের নিখাদ সোনা বাছাই করার মত ফুটবল প্রতিভাদের লুফে নিতে হয়। সবমিলিয়ে কেমন যাচ্ছে ইউরোপিয়ান জায়েন্টদের এবারের ট্রান্সফার উইন্ডো, তা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

এসি মিলান: এক সময় অন্যতম শক্তিশালী এ ফুটবল ক্লাবটি গত বছর দশেক ধরে ছিল ঘুমন্ত দৈত্য।পাইপলাইনে যোগ্য ট্যালেন্টের অভাব, ক্লাব কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রীতিমত মধ্যম সারির দলে পরিণত হয়েছিল ইতালির এ ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
গত বছরে ক্লাবটিকে কিনে নেন চাইনিজ ধনকুব লি ইয়ংহং। প্রায় তিনশো মিলিয়ন ইউরো (তিন হাজার কোটি টাকা) ঋণ নিয়ে মাঠে নেমে লি কতটা সফল হবেন তা ছিল টক অফ দা টাউন।
তবে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এবারের ট্রান্সফার ইউরোর সবচেয়ে সফল দল এসি মিলান।১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে ভিড়িয়েছে আন্দ্রে সিলভা, হেকান, লিওনার্দ বনুচ্চির মত তারকাদের। পুরো এসি মিলানকেই রীতিমত পাল্টে দেয়ার দাবি লি ইয়ংহং করতেই পারেন। এসি মিলানের শক্তিমত্তা প্রিসিজন ফ্রেন্ডলিতে বায়ার্ন মিউনিখকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করার মাধ্যমেই এক প্রকার প্রমাণিত হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার সিটি: আরব আমিরাতের ধরকু্বের অধীনাধীন ম্যানচেস্টার সিটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে যে কার্পণ্য করে না, তা আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল।এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে রীতিমত যাচ্ছেতাই মনোভাবে ইউরো খরচ করছেন সাবেক বার্সা কোচ পেপ গার্দিওয়ালা, খরচের পরিমাণ দাড়িয়েছে দুইশো মিলিয়ন ইউরো বা দুই হাজার কোটি টাকা!!

দলে ভিড়িয়েছেন, মেন্ডি,বার্নার্ডো সিলভা,এডারসন,কাইল ওয়াকার,দানিলোর মত ফুটবল তারকাদের।
আবার কয়েকটি সুত্র হতে প্রাপ্ত খবরনুসারে, ফ্রেন্চ প্রতিভা এমবাপ্পের জন্য ম্যানচেস্টার সিটি বিড করেছে প্রায় আঠারোশো কোটি টাকা!ট্রান্সফার মার্কেটে এত খরচ করার পর গার্দিওয়ালা যে সত্যিই অনেক চাপে আছেন তা অবশ্য বলার অবকাশ রাখে না।

রিয়াল মাদ্রিদ: এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে রিয়াল মাদ্রিদ তারকাদের বদলে মনোযোগ দিয়েছে তরুণ প্রতিভাবানদের দিকে।তারই ফলশ্রুতি দলে এসেছেন, থিও হার্নান্দেজ, কাবেল্যাসের মত উঠতি ফুটবল তারকারা।অন্যদিকে লোন থেকে ফিরেছেন লরেন্তে ও ভালেহো।
তবে ফ্রেন্চ তারকা এমবাপ্পেকে সাইন করানোর দৌড়ে ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ভালোই টেক্কা দিচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ।অনেক সোর্সের মতে এমবাপ্পেকে সাইন করাতে বেশ তৎপর কোচ জিনেদিন জিদান।

বার্সেলোনা: ট্রান্সফার মার্কেটে হতাশ করেছে বার্সেলোনা,সাইনিং বলতে একজনই-নেলসন সেমেডু। ভেরাত্তিকে সাইন করতে গিয়ে উল্টো নেইমারকেই হারাতে বসেছে কাতালানরা।পিএসজি অধিপতি নাকি যথেষ্ট বিরক্ত বার্সেলোনার উপর।তাই ব্রাজিলিয়ান সাম্বা বয়কে ছিনিয়ে নিয়েই শায়েস্তা করতে চান বার্সেলোনাকে।নেইমার সিচ্যুয়েশন নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে দিন দিন। সর্বশেষ নেইমারকে পরের সপ্তাহেই দলে ভেড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে পিএসজি,এমনটাই উঠে এসেছে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে।
ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হতে বাকি আর এক মাস। ইউরোপিয়ান জায়েন্টদের অনেকেরই বাকি আছে সামার শপিং। হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে কেনা ফুটবল সুপারস্টাররা কতটা প্রভাব ফেলবে আগামী সিজনে, তা সময়ই বলে দিবে।
লেখকঃ রওনক রাদ













