ট্রাম্পের যুদ্ধ হুংকারের নেপথ্যে কি? বিশ্লেষকরা বলছে অন্য কথা!

0

ট্রাম্প প্রতিনিয়ত যে যুদ্ধ হুংকার দিয়ে যাচ্ছেন তার উদ্দেশ্য কি? তা নিয়ে হোয়াইট হাউজে ই জন্মক দিয়েছে নানা প্রশ্ন।তিনি কি রাশিয়ার বিশেষ কৌঁসুলি ম্যুলারের তদন্ত থেকে নজর সরিয়ে আনতে চাইছেন? এই প্রশ্ন ও উঁকি দিচ্ছে সবার মাঝে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে ‘অগ্নি ও ক্রোধ’ জ্বলে উঠবে, পৃথিবী তেমন শক্তির প্রকাশ আগে কখনো দেখেনি। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে এই ভাষায় সরাসরি যুদ্ধের হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প

যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজের আক্রমণাত্মক অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে টুইটারে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমেরিকার আণবিক অস্ত্রাগার এখন অনেক সমৃদ্ধ।
ছোট কিন্তু উগ্র,আবার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ও অনেক পিছিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এমন প্রত্যক্ষ ভাষায় যুদ্ধের হুমকি আমেরিকার ভেতরে ও বাইরে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা ‘কথার যুদ্ধে’ ঘৃতাহুতি দেওয়ার বদলে কূটনৈতিক পথ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রও পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, সে জন্য সর্বাত্মক সতর্কতার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস এর এক সম্পাদকীয়তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘দুই পায়ে আওয়াজ করে’ যুদ্ধের দামামা না বাজানোর অনুরোধ করে বলেছে, যে ভাষায় তিনি কথা বলছেন, তা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বিপজ্জনকও বটে। কারণ ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর আণবিক ও প্রচলিত অস্ত্রাগার। সামান্য একটু ভুল হলেও এক মহাপ্রলয় ঘটে যেতে পারে।’

তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি সব পক্ষকে আশ্বস্ত করে বলেন, আশু যুদ্ধের কোনো ভয় আছে বলে তিনি মনে করেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের উদ্দেশ্য শুধু উত্তর কোরিয়ার শাসকদের হুঁশিয়ার করে দেওয়া। তিনি মার্কিন নাগরিকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।’ জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া কথা থেকে যুদ্ধের কোনো আগাম সংকেত খোঁজার চেষ্টা না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

হোয়াইট হাউসের ভেতরেই উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে এই বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে প্রশ্ন জেগেছে, যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে ট্রাম্প কি আসলে রাশিয়া প্রশ্নে বিশেষ কৌঁসুলি ম্যুলারের তদন্ত থেকে নজর সরিয়ে আনতে চাইছেন?

এ কথা বলার কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত লক্ষণীয়ভাবে দ্রুততা অর্জন করেছে। গত সপ্তাহে তিনি একাধিক নামজাদা আইনজীবীর নিয়োগ দিয়েছেন, যাঁরা ক্ষমতাবানদের অপরাধ তদন্তে অভিজ্ঞ। এর ফলে মোট আইনজীবীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬। এ ছাড়া ম্যুলার সম্পূর্ণ গোপনীয়তায় ‘গ্র্যান্ড জুরি’র সামনে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের একাধিক সদস্যের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করেছেন। এদিকে মাত্র এক দিন আগে জানা গেছে ম্যুলারের নির্দেশে এফবিআইয়ের একটি দল ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সাবেক চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্টের ওয়াশিংটন ডিসির বাসভবনে ভোরে কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই তল্লাশি চালিয়েছে।

ম্যুলারের তদন্ত ছাড়াও ট্রাম্পের জন্য দুঃসংবাদ এসেছে একাধিক জাতীয় জনমত জরিপ থেকে। এতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের জনসমর্থন নাটকীয়ভাবে পড়ে গেছে। তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের কথা, নিজের সবচেয়ে অনুগত সমর্থকদের মধ্যে তাঁর প্রতি সমর্থন দ্রুত কমছে। CNN এক জরিপ অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে যেখানে কলেজ ডিগ্রি নেই এমন শ্বেতকায় আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ছিল ৪৭ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশে। অধিকাংশই মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের ব্যাপারে যে মেঘ হোয়াইট হাউসের ওপর বাসা বেঁধে আছে, ট্রাম্পের সমর্থন কমে যাওয়ার সেটি একটি কারণ। ভার্জিনিয়ার মিলিটারি একাডেমির অধ্যাপক ডেনিস ফস্টার গত ডিসেম্বরেই বলেছিলেন, বড় ধরনের অর্থনৈতিক (বা অন্য কোনো) সংকটের মুখে পড়লে নজর ফেরাতে ট্রাম্প যুদ্ধ বাধাতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে