বেশ কয়েকদিন ধরেই জোর গুঞ্জন উঠেছিল, অবশেষে তা সত্যি হলো। আন্ত্ররজাতিক টি-২০ সংস্করণে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন বিরাট কোহলি। সামনের মাসে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই এ সংস্করণে ভারত দলের নেতৃত্ব ছাড়বেন তিনি।
এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ৮-৯ বছর ধরে তিন সংস্করণে নিয়মিত খেলা আর ৫-৬ বছর ধরে অধিনায়কত্ব করে যাওয়ার চাপকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন কোহলি। টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়কত্বের দিকেই পুরো মনোযোগ দিতে চান বলে ‘নিজেকে কিছুটা ছাড় দেওয়া উচিত’ বলে মনে করেছেন তিনি। আর বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত।
২০১৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন কোহলি। এখন পর্যন্ত ভারতকে এ সংস্করণে ৪৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তাঁর অধীন ভারত জিতেছে ২৭টি টি-টোয়েন্টি, হেরেছে ১৪টিতে।
কোহলি নিজের দিকের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে বিসিসিআইয়ের দিকের কথা জানা গেছে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী ও সচিব জয় শাহর বিবৃতিতে। সৌরভ বলেছেন, ‘বিরাট ভারত ক্রিকেটের সত্যিকারের এক সম্পদ। অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে। সব সংস্করণেই সে অন্যতম সফল অধিনায়ক। ভবিষ্যতের রূপরেখার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য আমরা বিরাটকে ধন্যবাদ জানাই। আসন্ন বিশ্বকাপ এবং এরপরও তার সাফল্য কামনা করি। আশা করি, ভারতের হয়ে অনেক অনেক রান করবে সে।’
অন্যদিকে শাহ বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা চলেছে, ‘ভারত দলের জন্য আমাদের পরিষ্কার একটা রূপরেখা আছে। নেতৃত্বের পালাবদলের পথটা যাতে মসৃণ হয়, সে কারণে কাজের চাপের কথা বিবেচনা করে বিরাট কোহলি আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরাট ও দলের নেতৃস্থানীয় গ্রুপের সঙ্গে ছয় মাস ধরেই আমার আলোচনা হয়েছে। বেশ ভেবেচিন্তেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরাট খেলোয়াড় হিসেবে দলে থাকবে, সিনিয়র সদস্য হিসেবে ভারত ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখবে।’
ভারতের তিন সংস্করণের পাশাপাশি আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুরও অধিনায়ক কোহলি। আইপিএলের দলের অধিনায়কত্ব না ছেড়ে কোহলির জাতীয় দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণায় একটু অবাকই হয়েছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে, ‘বিরাট যে তীব্র মনোভাব নিয়ে খেলে, সেটা খ্যাপাটে। আমি ভেবেছিলাম সে আরসিবির (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে, তাহলে মাস দুয়েকের মতো নেতৃত্বের ভার থেকে মুক্ত থাকত সে। আশা করি, এরপর সে মানসিক দিক দিয়ে আরেকটু বিশ্রাম পাবে। কে জানে, হয়তো টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবে আরেকবার ফর্মের চূড়ায় উঠবে।’
ভারতের সাবেক পেসার ইরফান পাঠান বলছেন, বিশ্বকাপ জেতাটা হবে অধিনায়ক কোহলির জন্য উপযুক্ত বিদায়, ‘অবশ্যই বিশ্বকাপের পর বিরাট কোহলির নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণায় অবাক হয়েছি। ভারত বিশ্বকাপ জিতে তাকে শ্রদ্ধা জানাবে, তার সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে, এটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।’
কোহলির অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে ১৫ ম্যাচ জিতিয়েছেন রোহিত শর্মা। কোহলি নিজের দেওয়া বিবৃতিতেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, টি-টোয়েন্টিতে তাঁর পর নেতৃত্ব নিতে পারেন রোহিতই। তাঁকে ‘দলের নেতৃত্ব দেওয়া গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কোহলি। এমনিতেও আইপিএলের সবচেয়ে সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের এখনকার অধিনায়ক রোহিত।