আন্তর্জাতিক ফুটবলকে হঠাৎ করেই ‘না’ বলে দিলেন জার্মান ফুটবল তারকা মেসুত ওজিল। ২৯ বছর বয়সী এটাকিং মিডফিল্ডার ওজিল রাশিয়া বিশ্বকাপ মঞ্চে অপমানজনক ব্যবহার হজম করতে পারেননি। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ উগড়ে গিয়ে ওজিল জানালেন, এর পর আর জার্মানির জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামা সম্ভব নয় তার পক্ষে।
গেল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় ২০১৪’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বাকিদের সঙ্গে ব্যর্থতার দায় গিয়ে পড়ে ওজিলের উপরেও। তবে পারফরম্যান্স জনিত কারণে নয়, দলের মধ্যে ওজিল কোণঠাসা হয়ে পড়েন রাজনৈতিক কারণে।
ওজিল জার্মান হলেও পারিপারিক সূত্রে তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত, বিশ্বকাপের ঠিক আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতেই বেজায় চটে যায় জার্মান ফুটবল সংস্থা। কোচ জোয়াকিম লো কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন যে, বিশ্বকাপের আগে বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বৈঠক, ছবি তোলা, অটোগ্রাফ দেওয়া জার্সি উপহার, এসব তিনি বরদাস্ত করবেন না।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তী জার্মান জনমানসে স্বচ্ছ না হওয়ায় জার্মান ফুটবল সংস্থা মেসুত ওজিলকে এমন কাজের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করে। সমর্থকদেরও টিপ্পনি শুনতে হয় আর্সেনাল তারকাকে। সব মিলিয়ে রীতিমতো অপমানিত বোধ করেন ওজিল। সেই ক্ষোভ থেকেই অন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ওজিল এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে টুইটারে জানান, আমি একজন ফুটবলার। রাজনীতিবিদ নই। আমার কাজ ফুটবল খেলা। সুতরাং আমাদের বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি ছিল না। তবে এই ঘটনার জন্য জার্মান ফুটবল সংস্থার কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পেয়েছি এবং আরো অনেকেই যেভাবে অপদস্ত করেছে আমাকে, তাতে জার্মানির জার্সি গায়ে চাপিয়ে আমার পক্ষে আর মাঠে নামা সম্ভব নয়।
আমি তুরস্ক বংশোদ্ভূত তাই তুরস্কের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে। আমার পিতা আমাকে শিখিয়েছেন, আমরা যেখান থেকে এসেছি, যেখানে আমাদের পরিবার বেড়ে উঠেছে এবং আমাদের স্মৃতি রয়েছে আমরা যেন তাকে ভুলে না যাই।
তিনি বলেন, নিজেকে নিতান্তই অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। আমার মনে হয় ২০০৯’এ আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর দেশের হয়ে আমার যাবতীয় অবদানের কথা সবাই ভুলে গিয়েছে। জাতীয় দলে এমন জাতিভেদ অত্যন্ত অপমানজনক। এই অপমান সহ্য করে খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। খারাপ লাগছে জার্মানির হয়ে আর মাঠে নামব না ভেবে।
সাবেক জার্মান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোজ, লুকাস পডোলোস্কি পোলিশ নাগরিক ছিলেন। কিন্তু কখনো তাদের এরকম জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হতে হয় নি। কিন্তু ওজিল কে কেন হতে হল? অনেকের সন্দেহ মুসলিম বলে নাকি তুরস্কের নাগরিক বলে? নাকি উভয় কারনে?