আরো একটি আবেগের রাত উপহার দিল বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আরো একটি হৃদয় ভাঙা পরাজয়। শেষ ওভারের শেষ বলের পরাজয়।দিনেশ কার্তিকের অভিজ্ঞ ব্যাটের সামনে অনভিজ্ঞ এত তরুণ পার্টটাইম বোলারের বুক চিতিয়ে লড়াই। এরপর কান্না…. সমর্থক শিবিরে নীরবতা। এই পরাজয়ে কেউ রাগ করেনি। কেউ হতাশও হয়নি। আবেগে ভেসেছে। ভালোবাসায় কেঁদেছে। এই পরাজয়ে কাকে দোষ দেওয়া যায়? ব্যাটসম্যানদের? সাব্বির তো প্রতিনিধি হয়ে একাই লড়াই করল পুরোটা ম্যাচ। এই পরাজয় সাব্বিরের জন্যও আবেগের। দীর্ঘদিন ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা ছেলেটা বীরের মতো লড়াই করেছে।
সবার ব্যর্থতার মাঝে খেলেছে ৫০ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। ১৬৬ রানের পুঁজি নিয়ে বোলাররা কী ফাইটটাই না দিল! মিরাজ নিজের প্রথম ওভারে বেদম মার খাওয়ার পর সাকিব তাকে বোলিংয়েই আনলেন না। সেটাও কিন্তু দলকে জেতনোর জন্যই।
পেস বোলিংয়ের বিশ্বতারকা মুস্তাফিজুর রহমান নিজের শেষ ওভারে ১ রান দিয়ে ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দিল। ম্যাচে কোনো উইকেট পায়নি সে। কিন্তু ওই এক ওভারই তার তাকে ম্যাচের নায়ক করে দিয়েছিল। কিন্তু দাবার চাল পাল্টে গেল রুবেলের ওভারে। ২২ রান নিলেন দিনেশ কার্তিক।
এই রুবেলই তো আগের ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। এই রুবেলই তো ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্লগ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিল। রুবেলকে দোষ দেবেন? গোটা ম্যাচে মিরাজের ওপর আর আস্থার রাখতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব। তাই শেষ ওভারে বল তুলে দিলেন সৌম্য সরকারের হাতে। একে তো পার্টটাইম বোলার, তার ওপর স্লগ ওভারে বোলিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতাই তার ছিল না।
ছেলেটির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। পাঁচটি বল দারুণ করল। কিন্তু শেষ বলটিতে অভিজ্ঞ কার্তিকের কাছে হেরে গেল অনভিজ্ঞ ছেলেটি। মাঠে শুয়ে সৌম্যর কান্না দেখলে যে কারও হৃদয় গলবে। গ্যালারিতে বসে কাঁদছিল সেই মিলন নামের সেই বাঘটি। কাঁদছিল বাংলাদেশ।
সৌম্যকে কেউ দোষ দিচ্ছে না। সবাই ভাসছে আরও একটি ফাইনাল হারের আবেগে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, ‘আমরা একদিন জিতবই।’ সাকিবের বক্তব্য মিডিয়াতে আসার আগেই সোশ্যাল সাইটে ক্রিকেটপ্রেমীরা লিখছেন, ‘একদিন আমরা জিতবই।’ সেদিন খুব দূরে নয়।
গত শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে হা হয়ে গিয়েছিল ধারাভাষ্যকার সাবকে অজি গতি তারকা ব্রেট লির মুখ। আজ অবিশ্বাস্য ম্যাচ জয়ের পর ভারতের সাবেক লিজেন্ড সুনিল গাভাস্কার কমোন্ট্রি বক্স থেকে নাগিন নাচ নাচলেন। এসব টাইগারদের অর্জন।
সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়; অচিরেই হয়তো আরেকটি ফাইনাল জিতে টাইগাররা নাগিন নাচবে। পুরো বাংলাদেশ নেচে উঠবে বিজয়ের আনন্দে….।