হযরত ঈসা (আ) কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেয়ার পর থেকে তাঁর প্রচারিত ধর্মের প্রসার হতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে দলে দলে লোক মূর্তিপুজা , শিরক ছেড়ে এক আল্লাহর আনুগত্য মেনে নিতে থাকে।
কিন্তু রোমান শাসকরা ছিল মূর্তিপুজক!
২৪৯ থেকে ২৫১ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের কায়সার বা সম্রাট ছিল ডেসিয়াস (Decius) । ঈসা (আ) এর অনুসারীদের অত্যাচার, নির্যাতনে সে চরম কুখ্যাতি অর্জন করে। সে সময় এশিয়া মাইনর (বর্তমান তুরস্ক ) এলাকায় আফসুস (Ephesus) নগরী ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান শহর ও বানিজ্যকেন্দ্র। কেউ কেউ স্পেনের গ্রানাডা শহরের এক গুহার কথা বলেছেন। তবে অধিকাংশ তাফসীরবিদ এবং খ্রীস্টান ইতিহাসবিদিদের মতে আফসুস নগরীকেই আসহাবে কাহাফের শহর বলে গ্রহণ করা হয়েছে। শহর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়ায় Ephesus লিখে সার্চ দিয়ে পড়তে পারেন।
এ শহরের ৭ জন যুবক মূর্তিপূজা ছেড়ে ঈসা (আ) এর প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করে এক আল্লাহর আনুগত্য মেনে নেয়। এ খবর ডেসিয়াস এর কানে পৌছালে তাঁদেরকে ডেকে পাঠায়।
তাঁদের ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তাঁরা সত্যতা স্বীকার করে এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে। এতে ডেসিয়াস প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হলেও বলে – “আর কখনো এসব বললে তোমাদের হত্যা করা হবে। তোমরা নেহাতই অল্পবয়সী যুবক, তাই তিনদিন সময় দিচ্ছি। যদি তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্ত পালটে আবার আমাদের ধর্মে ফিরে আস তাহলে ক্ষমা পাবে অন্যাথায় তোমাদের শিরোশ্ছেদ করা হবে।”
তিনদিন সময় পেয়ে ৭ যুবক হিজরতের অর্থাৎ শহর ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় তবুও আল্লাহর আনুগত্য অস্বীকার করে মূর্তিপুজার পথে ফিরে যেতে যাবে না।
একটি কুকুরও তাদের সঙ্গী হয়। কেউ কেউ বলেছেন এটা তাদের কারো পোষা কুকুর আবার কেউ কেউ বলেছেন এটা পথের মাঝে থেকে তাদের সঙ্গী হয়, চেষ্টা করেও কুকুরকে তাড়াতে পারেনি তারা। তারা একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। এবং ঘুমিয়ে যায়।
এভাবে দুইশত বছর অতিবাহিত হয়ে যায়! (সুবাহানাল্লাহ)
দুইশত বছর পর একদিন তাঁদের ঘুম ভাঙে। তখন রোমান সাম্রাজ্য শাসন করছে কায়সার দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস।
তো দুইশত বছর পর তাদের ঘুম ভাঙলেও তারা বুঝতে পারেনি এতদিন অতিবাহিত হয়েছে। তারা ভাবলো মাত্র ১ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ক্ষুধা নিবারনের খাদ্য কিনতে তারা তাদের মধ্য থেকে একজন কে শহরে পাঠায়। তাঁকে সতর্ক করে দেয়া হয়, সে যেন এমন ভাবে চলে যাতে কেউ চিনতে না পারে।
শহরে গিয়ে যুবক অবাক হয়ে যায়, সব বদলে গেছে, শহরে মূর্তিপুজার বদলে সবাই ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছে। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না!
খাদ্য কিনে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে বড় বিপত্তি বাধলো। যে মুদ্রা দিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে গেল তা দেখে বিক্রেতা অবাক হয়ে হট্টগোল শুরু করলো। আরো লোক জমায়েত হয়ে গেল। তারা জানতে চাইল এই মুদ্রা কোথায় পেয়েছে, কোন গুপ্তধন এর সন্ধান পেয়েছে । কিন্তু যুবকটি জোর গলায় বলল এটা তার মুদ্রা, সে কোন গুপ্তধন এর সন্ধান পায় নি। তার এমন আজগুবি কথা ও পোশাকের ধরন দেখে সন্দেহ হওয়ায় জনতা নগর কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। তারা এসে জানতে চায় এ মুদ্রা কোথায় পেল সে, কারন এ মূদ্রা দুইশত বছর পুর্বের, সম্রাট ডেসিয়াস এর আমলের।
অবশেষে নানা কথার এক পর্যায়ে যুবক নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ করতে নগরবাসীকে গুহায় নিয়ে যায়।সেখানে অবশিষ্ট যুবকদের দেখে তারা ঘটনার সত্যতা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়।
এখানে জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, সে সময় মানুষের মাঝে কিয়ামত বা মৃত্যুর পরে আবার জীবিত হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রবল হচ্ছিল। এই ঘটনা দেখে সবার কিয়ামতের প্রতি সন্দেহ দূর হয়ে যায়। আবার ইতিহাস বিদরা বলেছেন আসহাবে কাহাফের এই জাগরনের ঘটনার মাত্র কয়েকবছর আগে এই আফসুস নগরে খ্রিস্টান ধর্মনেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিক হয়। সে সম্মেলন থেকে ঈসা (আ) কে ঈশ্বর/প্রভু হিসেবে উপাসনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
যা হোক ইতিমধ্যে যুবকদের এই সংবাদ সম্রাট থিওডোসিয়াস এর কাছে পৌছে । সম্রাট নিজে গুহার কাছে এসে যুবকদের সাথে সাক্ষাত করে। কথাবার্তার এক ফাঁকে যুবকরা গুহার ভিতরে এসে পাথরে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। এবং সেভাবেই কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
সংক্ষেপে এই হল আল কুরআনে ও বাইবেলে বর্ণিত আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী যুবকদের কথা।