গোটা বিংশ শতাব্দীতে যা ছবি তোলা হয়েছে তার দ্বিগুনের অধিক ছবি একবিংশ শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ সময়ে তোলা শেষ। ছবি তোলা আজকাল হাঁচির চেয়ে স্বাভাবিক। হেঁচকি প্রতিদিন না উঠলেও ছবি তোলা হয়। এদের মাঝে কোনো কোনটি তৈরি করে ইতিহাস, কোনোটি জন্ম দেয় মিশ্র অনুভূতির।
‘ইয়াও মিং’ নামের চাইনিজ ক্রীড়াবিদের অবস্থাও এমন! খুশি হবেন না-কি মুখ ভার, ভাবতে ভাবতে অবসর নিয়ে নিলেন। তিনি ভাবতে পেরেছেন কি না তা আমরা না জানলেও আমরা জানতে চাই তাকে, তার সত্যিকারের সত্ত্বাকে। ছবির আগে পরের একজন বাস্কেটবল তারকা সমন্ধে। মানুষ তার কর্মে বাঁচে, ছবিতে নয়, বয়সে নয় আরকি!
ইয়াও মিং একজন সফল চীনা অ্যাথলেট। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান মিং বিখ্যাত তার শারীরিক গড়নের কারণে। বলা ভালো, উচ্চতার কারণে! ৭ ফিট ৬ ইঞ্চি হাইটের মিংয়ের রক্তেই বইছে বাস্কেটবলের প্রতি নেশা। বাবা মা দুজনই পেশাদার বাস্কেটবলার ছিলেন। মজার ফ্যাক্ট, অস্বাভাবিক উচ্চতাও তার জিনগত! বাবার উচ্চতা ৬ ফিট ৭, মায়ের ৬ ফিট ৩ ইঞ্চি! তার সহধর্মীণী ইয়ে লির হাইট ৬ ফিট ৪ ইঞ্চি এবং সেও একজন বাস্কেটবল তারকা। ১৯৮০ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর সাংহাইয়ে জন্ম নেওয়া এই তারকা ক্যারিয়ার শুরু করেছেন ‘সাংহাই শার্কসের’ হয়ে। গতি, জাম্পিং, ট্যাকনিক্যাল প্লেয়িংয়ে তুষ্ট করেছেন সবাইকে।
২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এনবিএতে (ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন) ‘হাউস্টন রকেটের’ জার্সিতে অভিষিক্ত হন মিং। ইয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের একমাত্র প্লেয়ার যিনি পাঁঁচবার এনবিএর অলস্টার টিমে জায়গা পেয়েছেন। চীনের বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন (সিবিএ) তাকে তাদের হল অব ফেমে স্থান দিয়েছে। ইয়াও এনবিএর ইতিহাসের তার সময়ের সবচেয়ে লম্বা এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ উচ্চতার অধিকারী খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আয় ও জনপ্রিয়তায় টানা ছয়বার ঠাঁই হয়েছে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা চাইনিজ সেলিব্রেটিদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়।
ইয়াও মিংয়ের ক্যারিয়ারে অর্জনের ঝুলি বেশ সমৃদ্ধ। তন্মধ্যে নিঃসন্দেহে সেরা সাফল্য ২০০১, ০৩ ও ‘০৫ সালে টানা তিনবার দেশকে এশিয়ান বাস্কেটবলের স্বর্ণ জেতানো। এমনকি তিনটি টূর্ণামেন্টেই তিনি পেয়েছিলেন মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের খেতাব। একজন সফল অ্যাথলেটের ক্যারিয়ার আরেকটু দীর্ঘ হতে পারত। কিন্তু গোড়ালির চোটে ৩১ বছর বয়সেই অবসর নেন। ২০১১ সালের ২০শে জুলাই নিজ শহর সাংহাইয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। তার সম্পর্কে এনবিএর প্রধান বলেন, ‘সে মেধা, পরিশ্রম, ডেডিকেশন এবং মানবিকতার অনন্য মিশ্রণ। তার সেন্স অব হিউমার চমৎকার।’ তার অবসর ঘোষণায় চীনা সোশ্যাল সাইটে আসা প্রায় দেড় মিলিয়ন মন্তব্য প্রমাণ করে তার আবেদন ও জনপ্রিয়তা।
বাস্কেটবল প্রাঙ্গনে অতি পরিচিত এক নাম ইয়াও মিং আমাদের দেশে অচেনা। বাংলাদেশে বাস্কেটবল তেমন প্রচলিত নয় বলে তাকে না চেনাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, আমরা সকলেই তাকে চিনি। ২০১০ সালে এক ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার এক সাংবাদিক বন্ধু’র তোলা ছবি যা পরবর্তীতে একজন চাইনিজ কার্টুনিস্টের ছোঁয়ায় পায় ভিন্নরূপ। ওই ছবিটি ফেসবুকে গিয়ে ভাইরাল হতে সময় নেয়নি! কারণটা অনুমেয়। ঝড়ের চেয়ে বেশি গতিতে বাংলাদেশের ফেসবুক ফিডে যেকোনো কিছু ভাইরাল হয় সহজে। আমাদের কাছে হাসির খোরাক হলেও ইয়াও মিং আপন আলোয় উদ্ভাসিত নক্ষত্র যার রয়েছে যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি এবং সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, মানবিক গুণ।