এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী আটক

0
ইয়াবা সহ আটক

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ইয়াবা সরবরাহের জন্য ‘গুদাম’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট। অভিজাত ওই ফ্ল্যাটটির ভাড়া ৪০ হাজার টাকা, যা পরিশোধ করে আসছিল টেকনাফের দুই মাদক ব্যবসায়ী। তবে সেখানে থাকতেন ইয়াবা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম রুবেল ও তার স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা রিয়া।
ইয়াবা সহ আটক
সোমবার ভোরে তাদেরসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। জব্দ করা হয় এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা। মাইক্রোবাসের গোপন প্রকোষ্ঠে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে এসব ইয়াবা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হতো।

গ্রেফতার অন্য তিনজন হলো- মফিজুল ইসলাম, শাকের ও জসিম উদ্দিন। জব্দ ইয়াবার মধ্যে ২০ হাজার ইয়াবা ফ্ল্যাটের ভেতর এবং বাকি এক লাখ মাইক্রোবাসে পাওয়া যায়। অভিযানে একটি নিবন্ধনহীন মাইক্রোবাস, আটটি মোবাইল ফোন ও ইয়াবা বিক্রির ছয় হাজার ২০০ টাকা জব্দ করা হয়। জব্দ ইয়াবার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা।

বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ঘটনায় সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, গ্রেফতারকৃত রুবেল এসএসসি ও তার স্ত্রী রিয়া এইচএসসি পাস। দু’বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। রুবেল গার্মেন্টসের লট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তবে ওই ব্যবসার আড়ালে তিনি ইয়াবা চক্রে জড়িয়ে পড়ে। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার স্ত্রী। তাদের বাসাটি মূলত ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হতো। অন্য আসামি মফিজুল ইসলাম মাইক্রোবাস চালক। তার মাইক্রোবাসটি যাত্রী পরিবহনের আড়ালে ইয়াবা সরবরাহের কাজে ব্যবহূত হয়। এ জন্য মাইক্রোবাসে একটি গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত শাকের ও জসিম যাত্রীবেশে মাদক বহন করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে বাস বা ট্রেনে ঢাকায় আসে।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে টেকনাফের দু’জন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ্‌ মাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে রুবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ব্যবসার প্রস্তাব দিলে রাজি হন রুবেল। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে বসুন্ধরার মতো অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে মাদকের ট্রানজিট ও বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। গত বছরের ডিসেম্বরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জি-ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ১৫০ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটির মালিক টেকনাফের ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীর একজন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান ঢাকায় পৌঁছার পর এর একটি অংশ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, দোহার ইত্যাদি এলাকায় বিতরণের জন্য ওই ফ্ল্যাটে রেখে দেওয়া হতো। এখান থেকে তারা সাধারণত ঢাকার গুলশান, ধানমণ্ডি ও উত্তরা এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ করত। ওইসব এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাটে গিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসত। চালানের একটি অংশ জব্দকৃত মাইক্রোবাসে খুলনা, যশোর ও বেনাপোল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। জব্দ ইয়াবাগুলো ছাড়াও বেশ কয়েকটি চালান ঢাকায় আনা হয়েছিল। এই চক্রের আরও কয়েকজন সম্পর্কে তথ্য মিলেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।