“No one can become stranger than the person you once loved.”
Erich Maria Remarque
বহুদিন আগের একটা গল্প বলি। সত্য গল্প। ১১১ বছর আগের এক প্রেমের গল্প। একতরফা প্রেমের গল্প।
সাল ১৯০৬। একদিন ভিয়েনাতে রাস্তার ধারে বসে থাকা এক চিত্রশিল্পীকে দেখতে পেয়ে শখ করে এক মেয়ে গেল নিজের ছবি আঁকাতে। অসম্ভব রূপবতী সেই মেয়ের ছবি আঁকতে গিয়ে মনের অজান্তেই রাস্তায় বসে থাকা শিল্পী পড়ে গেল প্রেমে। লাভ এট ফার্স্ট সাইট! মেয়েটার বয়েস তখন ১৬, আর শিল্পীর?? ১৮।
শিল্পীর স্বপ্ন তখন একজন বড় চিত্রশিল্পী হবার। ভিয়েনার এ্যাকাদেমি অফ ফাইন আর্টস-এ ভর্তি হবেন। ছেলেটার তখন অবসর কাটে রাস্তার পাশে ছবি এঁকে। এসবে তার দু’চার পয়সা রোজগারও হয়। আর মেয়েটার বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ইহুদি ব্যবসায়ী।
শিল্পীর মন প্রেমময় হয়, মেয়েটিকে সে ভালোবাসার কথা তাই বলেও দেয়। After all ছেলেটাতো #dfallen… মেয়েটি হাঁ বা না, কিছুই বলে না। ছেলেটি মাঝে মাঝে মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকতো। একপলক দেখার জন্য। এসবই একদম সাদামাটা আটপৌরে তবে বিশ্বজনীন প্রেমের ফরম্যাট।
মেয়েটা যেহেতু ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর কন্যা। তাই সে থাকে বিশাল মহল টাইপ বাড়িতে, উঁচু পাঁচিল ঘেরা। বিশাল লোহার গেট। বাংলা সিনেমা নাটকে যেমন দেখি আমরা অমনই।
মাঝেমাঝেই ছেলেটি তার পোষা প্রিয় কুকুরকে গেটের ফাঁক দিয়ে অই বাড়িতে ঢুকায় দিত। কুকুরটার মুখে থাকত প্রেমপত্র।
ভিয়েনা আসার সময় অই রাস্তার ধারের ছবি আকা ছেলেটার মা কুকুরটাকে সাথে দিয়েছিল। কুকুরটা ছিল মায়ের দেয়া শেষ উপহার! কারণ এরপর আর কোনদিন মায়ের সঙ্গে ছেলেটির দেখা হয়নি। ছেলেটার মা মারা গিয়েছিল।
মেয়েটার পরিবারের নজরে আসে একটা ছেলের ঘুরাঘুরির বিষয়টি। ছেলে চালচুলোহীন, রাস্তার ছেলে।
ছেলেটির ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। তার উপরে ইহুদি না। অতএব এ সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নেয়া যাবে না। সম্ভব না। ছেলেটাকে নিষেধ করে দেয়া হয় বাড়ির সামনে আসতে।
কিন্তু জগত জুড়ে প্রেম কি আর কারো বারণ শোনে?
ছেলেটা তাই সুযোগ পেলেই মেয়েটাকে দূর থেকে দেখতো। উত্তর না এলেও প্রেমপত্র দিয়ে যেত নিয়মিত। একদিন প্রেমপত্র সহ কুকুরটাকে পাঠায় মেয়েটির বাড়িতে। কিন্তু কুকুরটি আর ফেরে না। ছেলেটা সারারাত অপেক্ষা করে, সকালে চলে গেল। পরদিন আবার মেয়েটার বাড়ির সামনে গেল। দেখতে পেল বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে প্রিয় কুকুরটা মরে পড়ে আছে। নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়েছে কুকুরটাকে।
কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি চলে আসলো অই বাড়ির সামনে থেকে। আর কোনদিন সে অই বাড়ির সামনে যায়নি।
চালচুলোহীন ওই রাস্তার ছেলেটা পরে যা করেছিলো তা ইতিহাস। ছেলেটি নিজ হাতে গত শতাব্দীর ইতিহাস লিখে গেছে। ছেলেটা মারা যাবার অনেক পরে মেয়েটা বলেছিল, ছেলেটাকে মনে মনে সেও ভালবাসতো। কখনই সাহস করে বলা হয় নাই।
ভিয়েনার সেই মেয়েটার নাম স্টিফানি আইজ্যাক। আর চালচুলোহীন ওই রাস্তার ছবি আঁকিয়ে ছেলেটার নাম এডলফ হিটলার।
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ৬৩ লাখ ইহুদিকে প্রাণে মেরেছিলেন যার মূলে ছিল যে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভব তার পেছনে স্টিফানির প্রেম ও বিরহ যাতনার আঘাতই দায়ী। যদিও পরে যে ক্ষমতার লোভ ও জিদ পেয়ে বসেছিল তাতে সন্দেহ নেই।
তীব্র ভালবাসার মুদ্রাটা কখনো কখনো দিনশেষে তীব্র নীল ঘৃনাতে উলটেও যেতে পারে!
প্রশ্ন হচ্ছে, হিটলার কাকে ভালবাসছিল বেশি? স্টিফানিকে নাকি মায়ের শেষ উপহার কুকুরটাকে।
আরেকটা বিষয়, ইহুদী ষোড়শী স্টিফানির প্রতি ভালবাসাটা তো তাবৎ ইহুদীদের উপর প্রক্ষেপিত হবার কথা। হিটলারের বেলায় উল্টো হল কেন?
লেখক: কামরুল হাসান
হিটলার মেয়েটির চেয়ে কুকুরটাকে বেশী ভালোবেসেছিলো। কারণ ওটা ছিলো তার মায়ের দেয়া শেষ উপহার। এবং নিশ্চিত ভাবে কুকুরটি মেয়েটির থেকে হিটলার কে বেশী ভালোবাসতো। এবং ঐ সময়ে একমাত্র কুকুরটিই ছিলো হিটলারের একমাত্র সঙ্গী।