কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে জুলেখা বেগম নামের এক প্রসূতির নবজাতকের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন ও জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।এর আগে হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জন ও অপারেশনে অংশ নেয়া চিকিৎসকসহ সাতজনকে হাইকোর্ট তলব করে। এর মধ্যে গঠিত হলো এ তদন্ত কমিটি। ইতোমধ্যে কুমেকের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
কুমেকের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক তারেক আবদুল্লাহকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়াহিয়া এবং গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শায়েলা নাজনীন। সাতদিনের মধ্যে ওই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার থেকে তাদের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ১৭ মার্চ রাতে জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগম (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন। এ সময় জুলেখার অপারেশন করে তার নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং জরায়ু কেটে ফেলার সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
তবে কুমেকের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার মুঠোফোনে জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রোগীর জীবন রক্ষায় তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। এতে ডাক্তারদের অবহেলা ছিল না।
এদিকে, গত রোববার মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন গত রোববার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার ফারহানা ইসলাম খান, আনিসুল হাসান ও সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। এতে আদালত ৫ ডাক্তারসহ সাতজনকে তলব করেছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
এ ঘটনায় আগামী ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, কুমিল্লার সিভিল সার্জন, গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার, ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে কুমেকের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, এ ঘটনাটি তদন্তে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এছাড়া উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার বিষয়েও আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়িত্বে কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।