রুদ্র:– ভাই ছবি তুইল্যা দিবেন একখান ?
— কেন? কি করবি তুই ছবি দিয়ে ??
রুদ্র:– মায়েরে দিমু, হেতে গেরামে থাকে তো । দেখামু মায়েরে।
— ওও তুই বড্ড শহুরে হয়েছিস না?? কই থাকিস এখানে ??
রাস্তার দুইপাশে এদিক ওদিক তাকালো অনেকক্ষন। ঠিকানা খুজঁল নিজের।
এরপর চুপচাপ। ঠিকানা নেই ??
…… আছে।। পথের যেখানে শেষ, আবেগের যতখানি পরিধি, জীবন যেখানে অভিশপ্ত সবটায় রুদ্রের বাড়ি।
ওর ছবি তুলতে তুলতে গল্প হল অনেক ; রুদ্রের গল্প। সেখানে সুখের চঞ্চলতা থাকবে না জানতাম। তাই বলে এতটা অভিমান থাকবে ভাবতে পারিনি। গল্পটা বড় অনেক শুধু অভিমানটুকুই বলি। দু-বছর হল বাবা মারা গেছে রুদ্রের। মায়ের নাকি নতুন সংসার হয়েছে !। আর রুদ্র ?? সংসারে এখন ওর অস্তিত্ব যেন অবাঞ্চিত এক পাপ। আর কি কিছু বলার দরকার আছে ??। ” মা ” শব্দটিতে এখন তেমন ভালোবাসা জন্মে না ওর ,অভিমানের স্তর পরেছে ওখানে। কষ্টের তীব্রতায় হাসতে ভুলে যাওয়ার গল্প শুনেছি অনেক। সাত বছরের রুদ্র -ক্লান্তিহীন দুষ্টামি আর সদা চঞ্চল হাসিতে ছাড়িয়ে গেছে এসবকিছুকে। অভিমান পুষচ্ছে ও। দীর্ঘশ্বাস গুলোকে বাড়ির চার দেয়ালে উষ্ণ হতে দেয়নি বেশিদিন। সুখের সন্ধানে ঘর ছেড়েছে রুদ্র। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি শুভ্র সুন্দর হৃদয় কপাট থেকে দাম্ভিকতা উশৃঙ্খলতা বাদ পরেনি কিছুই। সবখানেই সুখ খুজেঁ বেড়াচ্ছে রুদ্র ; পাইনি।
পরদিন বিকেল ৫ টা। 10*15 cm সাইজের একটা ছবি পেল রুদ্র। ছবিটা হাতে নিতেই ওর সেই ভূবনভুলানো হাসিটা। আজ আর অভিমান নেই সুখ বেরুচ্ছে। যেন শুধু একটা ছবি নয়
অভিমানের ভীড়ে মায়ের জন্য ফ্রেমবন্দী এক টুকরো সুখ পেয়েছে আজ। কিছুক্ষন পর বেলী ফুলে একটা মালা দিল আমায়। এরপর কিছু বলার আগেই পেছন ফিরে উল্টো এক দৌড়। রুদ্র ফেরেনি আর। জানি ফিরবেও না । রুদ্ররা ফিরে না । বলতেই পারলাম না ভাল থাকিস রুদ্র।
” রুদ্র ”- রবীঠাকুর কিংবা শরৎচন্দ্রের গল্প উপন্যাসের কাল্পনিক কোন চরিত্র নয় । জীবনে থেকে নেয়া টকবগে এক বাস্তব চরিত্র। চারপাশে হাজারো পথ শিশুর ভীরেই অস্তিত্ব ওর। রুদ্ররা হারিয়ে যায় না। বেঁচে থাকে ঠিকানাবিহীন বাস্তবতায়।
ওর বুকে কান পাতলেই আবেক পোড়ানোর শব্দ শুনা যায়। শব্দরা গল্প হয় আর গল্পের গহীনে কবিতা জন্মে ;
আক্ষেপের কবিতা….
”আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন মনে
আর পকেট ভরা শৈশব।
জন্ম আমায় শিশু বানিয়েছে
আর জীবন কেড়েছে শৈশব
সাত বছরের শিশু আমি
তবুও পথ একটা নাম দিয়েছে ;
দু-শব্দের নাম;
শিশু নয়,
আমি পথ শিশু। ”
ভালো থাকিস রুদ্র, সুখে থাকিস।
রাজীব দাস
এমবিবিএস স্টুডেন্ট, বারডেম মেডিকেল কলেজ