জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় নেতা আটক

0
জঙ্গিগোষ্ঠী

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) দুজনকে আটকের পর বাংলাদেশে ফিরে আসে তাদের মুসল (ছোট গ্রুপ লিডার) রেজাউর রহমান। এর দুই মাসের মাথায় গত ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জিন্দা পার্ক এলাকা থেকে তাকেসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব-১১।
জঙ্গিগোষ্ঠী
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযানের কারণে সাংগঠনিক নির্দেশে ২০১৭ সালের মে মাসে কলকাতায় পালিয়ে যায় রেজাউর। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা এবিটি সদস্যদের সঙ্গে আত্মগোপনে যায় সে। এসময় তার সহযোগী হিসেবে ছিল রিয়াজুল ইসলাম, শামসুদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন। কিন্তু ওই বছরের ২১ নভেম্বর কলকাতা রেলস্টেশনের কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) আটক করে রিয়াজুল ও শামসুদসহ তিনজনকে। এর পর বাংলাদেশে ফিরে আসে এবিটির মুসল রেজাউর রহমান ওরফে শাওন ওরফে সোহেল ওরফে হাসান। দেশে আসার পর সে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে না গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে গোপনে সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

কলকাতায় আটক দুই এবিটি সদস্যের কাছে ডায়েরিসহ বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেছিল এসটিএফ। সেখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে একজন ব্লগারের নামও রয়েছে। কী উদ্দেশ্যে ডায়েরিতে তাদের নাম লেখা হয়েছিল, তার কারণ জানা যায়নি।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, রূপগঞ্জের জিন্দা পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন এবিটির মুসল রেজাউর রহমান, মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদ (৩৩) ও আবু রায়হান চৌধুরীকে (২৮) আটক করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন, উগ্রবাদী বই ও জঙ্গিবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়।

রেজাউরের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা ও শিক্ষাজীবন নিয়ে কামরুল হাসান বলেন, ‘রেজাউর ২০০৫ সালে রাজধানীর মণিপুর স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৭ সালে মিরপুর কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে। উগ্রবাদে আগ্রহী হয় ২০১৩ সালে। জসিম উদ্দিন রাহমানি ও আনোয়ার আওলাকির বয়ান শুনে উগ্রবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় সে। এরপর থেকে ইউনিভার্সিটির বন্ধু জাবির ওরফে রনির সঙ্গে বসিলায় জসিম উদ্দিন রাহমানির মসজিদে যাতায়াত শুরু করে। রনির মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত অন্তত চারজনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এদের মধ্যে জুন্নুন শিকদার সিরিয়ায় গিয়ে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, সিফাত ও সোহেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে।

২০১৪ সালে এবিটির শীর্ষ নেতা মোয়াজ ভাইয়ের হাত ধরে সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ নেয় রেজাউর। একপর্যায়ে সংগঠন থেকে মুসলের (ছোট গ্রুপ লিডার) দায়িত্ব পায় সে। আটকের পর রেজাউরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিফাত ও সোহেলের মাধ্যমে শ্যামলীতে একটি বাসায় মোয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রেজাউরের। সেখানে তারা সাংগঠনিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। মোয়াজ ভাই প্রশিক্ষণের সময় তাদের ‘প্রটেকটেড টেক্সট আইডি’ খুলে দেয়। মুসল হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সাংগঠনিক কাজ জোরদার করে সে। তার অধীনে কাজ করতো মিঠু, তাউসিন, সাগর ও সাব্বির।

২০১৭ সালের মে মাসে সাংগঠনিক নির্দেশে রেজাউর বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। সে ভারতে অবস্থানকালে দেশে থাকা তার সঙ্গী মিঠু, তাউসিন, সাগর ও সাব্বির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এ অবস্থাতেই ভারতে আগে থেকে থাকা এবিটি সদস্যদের সঙ্গে আত্মগোপনে যায় সে। পরে কলকাতায় তার সহযোগী ওমর ফারুক, সাদাত হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম ও শামসুদ মিয়া আটকের পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করে আসছিল। সংগঠনে যোগদানের শুরুর দিকে ‘টেলিগ্রাম’র মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও পরে ‘প্রটেকটেড টেক্সট আইডি’র মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করত সে।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে রেজাউরের সঙ্গে আটক আরও দুজনের মধ্যে মোবারক হোসেনের সঙ্গে ২০১৩ সাল থেকেই পরিচয় ছিল তার। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, মোবারক শুরুতে কাজ করতো সিরিয়ায় ‘হিজরতে’ গিয়ে নিহত জুন্নুন শিকদারের অধীনে। পরে সে জসিম উদ্দিন রাহমানির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মাওলানা ইসহাকের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করে। কিন্তু মাওলানা ইসহাক গ্রেফতারের পর কারও অধীনে না থেকে নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে চাকরির পাশাপাশি এবিটির দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

এছাড়া, রেজাউরের সঙ্গে আটক আবু রায়হান চৌধুরী ২০১২ সালের শেষদিকে জসিম উদ্দিন রাহমানির মসজিদে যাতায়াতের মাধ্যমে উগ্রবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়। ২০১৬ সালে সে আনসার আল ইসলামের সদস্য আহমেদ উল্লাহ পাটোয়ারী ও সৈয়দ রায়হানুল কবিরের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করে। সবশেষ সে গুলশান এলাকায় মুসল হিসেবে কাজ করে আসছিল।

আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। তাদের রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।