ডার্ক ওয়ার – মুক্তিকামী চেচেনদের বীরত্বের ইতিহাস

0

যুদ্ধ মানেই আধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম বোমা ইত্যাদি । পরাশক্তি দেশ গুলো নিজেদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে এসব তৈরি ও কেনায় ব্যাস্ত । তবে এর চেয়ে বেশী প্রয়োজন যুদ্ধের ময়দানে যারা যুদ্ধ করবে তাদের মনোবল। যদি কোনো দেশ মনে করে অস্ত্র সরঞ্জাম দিয়ে সব কিছু করা যায় তাহলে ভুল । যে ভুল করেছিলো রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ।

চেচেন দের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল মনোবল

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতন ঘটলে ২৫ টি ইউনিয়ন ভেংগে আলাদা স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি পায় তবে এর মধ্যে একটি ইউনিয়ন কে শুরুতে স্বাধীনতার আশ্বাস দিলে ও পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন তা অস্বীকার করেন , তারপরই শুরু হয় চেচেন বিদ্রোহীদের স্বাধীনতার যুদ্ধ । মাত্র ২১০০০ সেনা নিয়ে শামিল বাসিয়েব যুদ্ধে নামেন ২১ লাখ সেনা সমৃদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধে । চেচেনিয়ার চারদিকে রাশিয়া ও প্রতিবেশী দেশ জর্জিয়া । ৯২ সালের যুদ্ধের প্রথম ৬ মাসে রাশিয়ার কমান্ডো বাহিনী চেচেনিয়ার বেশীরভাগ অঞ্চল দখলে নিয়ে যায় ততকালীন রাশিয়ার সেনা প্রধান জর্জ স্যামুয়েকিস যুদ্ধ সমাপ্তি করা মাত্র চেচেনিয়ার বিদ্রোহিরা পাহাড় থেকে আক্রমন শুরু করে মাত্র ৬০০ চেচেন বিদ্রোহী ৪৭ ঘন্টার মধ্যে চেচেনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি দখল করে নেয় রাশিয়ার ২১০০০ সেনা থেকে । ৪৭ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধে নিহত হন রাশিয়ার শীর্ষ সব সেনা কর্মকর্তা ও চেচেন বিদ্রোহি কমান্ডার ওয়ালিদ কাদির সহ ৫২ চেচেন বিদ্রোহী ।

চেচেন যুদ্ধে নারীরাও অংশগ্রহন নেয় । চেচনিয়া কে সাহায্য করতে আফগানিস্তান , আলজেরিয়া , পাকিস্তান , ফিলিস্তিন আরব বসনিয়া থেকে প্রচুর মুসলমান এগিয়ে যায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে ।

অস্ত্র হাতে যুদ্ধের ময়দানে চেচেন নারী

৯৫ সালের মধ্যে চেচেনিয়ার বেশীরভাগ অঞ্চল চেচেন আরেক বিদ্রোহি নেতা উসমান আবুহিচ দখলে নিয়ে যায়। রাশিয়ার সেনা বাহিনী সব বোমা অস্ত্র নিয়ে ৯৯ সালে চেচেনিয়ায় রওনা হয় এবং জর্জিয়া দিয়ে বিমান ঘাঁটি ব্যাবহার করে । ৮৫ টি রাশিয়ান বিমান মাত্র ৫ ঘন্টায় চেচেনিয়ায় প্রবেশ করে , রাজধানী গ্রোজনিকে মাত্র ২ ঘন্টায় ধবংস করে দেওয়া হয় , মাটির সাথে মিশে নিহত হয় ২৫০০০ চেচেন মানুষ । বিদ্রোহী দমনের নামে পুরো চেচেন জুড়ে ১০ লাখ সেনা মাত্র ৪৮ ঘন্টায় ৪ লাখ চেচেন কে হত্যা করে । তবে রাশিয়ার সেনাদের চড়া মুল্য দিতে হয় এজন্য । বরফের মধ্যে দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকা চেচেন বিদ্রোহীরা জড়ো হতে থাকে । চেচেন গেরিলা নেতা সুলাইমান আকিভচ এর নেতৃত্বে ৬৭০০ বিদ্রোহী যোদ্ধা চেচন থেকে রাশিয়ার সেনাদের মাত্র ৪ দিনে হটিয়ে দেয় , যুদ্ধে রাশিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোলা বারুদ , বিমান এর ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৮০০০ রাশিয়ান সেনা নিহত হয় । যুদ্ধ ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সেনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় । পরিস্থিতি খারাপ দেখে শেষে রাশিয়া কে ইসরাইল , ইউরোপ ও আমেরিকা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় । জর্জিয়া সীমান্ত দিয়ে রাসয়নিক অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে বীর চেচেন বিদ্রোহিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । সর্বশেষে চেচেন এর গণহত্যা ও স্বাধীনতা লুকাতে ইসলামী জঙ্গিতত্ত্ব হাজির করে রাশিয়া ।

চেচেন যুদ্ধে রাশিয়া চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ

ইতিহাসে চেচেন যুদ্ধ ডার্ক ওয়ার নামে পরিচিত । কোনো মিডিয়ার প্রবেশের অনুমতি ছিলোনা রাশিয়াতে । কেউ জানতে পারতো না কি হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ২০০০ সাল পর্যন্ত ৯ লাখ চেচেন নাগরিককে হত্যা করেছে রাশিয়া । সোভিয়েত আমলে হত্যা করা হয়েছে ১৫ লাখ চেচেনকে । সোভিয়েত পূর্বে জার শাসন ও কমিউনিস্ট শাসনে ৪ লাখ চেচেনিয়া কে হত্যা করা হয়েছে । চেচেন নেতা আহমেদিচ কাদিরভ ১২৮৮ সালে রাজা বেন্ডিক্ট রজার্জস কে হারিয়ে রাশিয়ার বেশীরভাগ প্রজাতন্ত্র দখলে নেন, তার ১৮০ বছর পর শুরু হয় জার শাসনের। তারপর আসে কমিউনিস্ট । পুতিন আমলে চেচেনিয়া এখন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ একটি ইউনিয়ন ।

লেখক : ভোলানাথ দাস
লেখক, সমালোচক

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে