ধর্ষণকারীকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে নির্বীর্য বানানো কি প্রাচীন মিশরীয় আইনের বর্বরতা ছিলো?

0
মিশরীয় নারী

মিশরীয় নারী | পর্ব-২

মিশরীয়ররা তাদের অবস্থান বিশ্বে সমৃদ্ধ রাখার জন্য নিজেদেরকে সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে রাখতে চেয়েছে ফারাওরা। তাই হয়তো তারা নারীদের পিছনে রেখতে চায় নি। প্রাচীন বিশ্বে বহুলাংশেই নারীদের ভোগ্য পণ্য ভাবা হতো। মিশরীয়রাই তখনকার জন্য ভিন্ন চিন্তার উদ্ভব করে। মনে রাখতে হবে- ফারাওদের সময়কালে পৃথিবীতে পুরুষতন্ত্রের জয়জয়াকার ছিলো। তাদের রাজ্যের রক্ষণাবেক্ষণকারী নিয়ে তাদের যথেষ্ট ভাবণা ছিলো। সে কারণেই, একজন ফারাও-এর নির্দেশ ছিল এরকম, “মেয়েদের কখনও আদালতে নিও না, তাদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখ।” যে কারণে ধর্মীয় উপাসনালয়ে মেয়েদের কিছু ভূমিকা থাকলেও পুরুষই হত প্রধান পুরোহিত ।
মিশরীয় নারী
তবে মেয়েরা সম্পত্তি ক্রয় করতে কিংবা বিক্রি করতে পারত। সে সম্পত্তির উইল করতে পারত! যেটা সেই সময়ের আলোকে আশ্চর্যের বিষয় বটে। প্রাচীন মিশরের আইন অনুযায়ী নারীরা ছিল পূর্ণ নাগরিক। নারীরা নিজস্ব সম্পদের অধিকারী হতে পারত। যে সম্পদ বিয়ের পর স্বামীর কাছে স্থানান্তর করতে হত না। একজন নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর সম্পূর্ণ অধিকার ছিলো, তাই যদি স্ত্রী বৈবাহিক জীবনে অসুখি হতো সে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। এবং পরে একা থাকারও সুযোগ ছিলো। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পোহাতে হতো অনেক ঝামেলা! আদালতে যথাযথ কারণ দর্শাতে হত। যেহেতু বিচ্ছেদের পরে সন্তানের অধিকারী স্ত্রীরা পেতো সে কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের পর নিজেদের ভরণপোষনের জন্য স্ত্রী তার প্রাক্তন স্বামীর সম্পদের একাংশ দাবী করতে পারত! তখনকার আইন অনুযায়ী সন্তানের লালন পালনের জন্য স্বামীর পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পেত স্ত্রী। আবার বিয়েতে পাওয়া সম্পূর্ণ যৌতুক নতুবা সেই পরিমান মালামালের মালিকও হতো স্ত্রী।

রাজকীয় পরিবারের বাইরে সাধারণ নারীদের তাদের পোশাক হত সাদাসিদে। শণ থেকে তৈরি করা নিজেদের কাপড় নিজেরাই পরতো। মেয়েরা ‘সে’ (লিনেন) কাপড়ের তৈরি পোশাক পরত। পারিবারিক বিত্তের ভিত্তিতে নারীদের কাপড়েও থাকতো পার্থক্য। অভিজাত ঘরের মেয়েদের পোশাক হত মসৃন, মধ্যবিত্ত নারীর পোশাক হত একটু খসখসে। বলতে পারেন সিল্কের কাপড় আর সাধারন সুতি কাপড়। কাপড়ের রং প্রধানত সাদাই হতো। আর পোশাকের একমাত্র অলংকার ছিলো মাড় দেওয়ার পর যে ভাঁজ হয় সেটা! কখনও আবার পোশাকে সুতার ঝালর ঝুলত। এই ছিল তখনকার যুগের মেয়েদের ফ্যাশন! শীতের সময়ের আলাদা পোশাক ছিলো ভারী উলের কাপড় এবং শাল। প্রাচীন মিশরের নারীদের জীবন বর্ণনায় সবথেকে লোভনীয় ব্যাপার হলো তাদের রূপচর্চার বিষয়টা! প্রাচীন মিশরের নারীরা বিচিত্র সব অলঙ্কার তো পরত। আর মেকআপ এর মধ্যে অন্যতম ছিল চোখে রং মাখা! রং মানে সবুজ ম্যালাকাইট গুঁড়ো এবং কালো সীসা চূর্ণ।

এসব গুঁড়ো ব্যবহার করলে চোখের সংক্রামক দূর হয়। এমন বিশ্বাস ছিল সে যুগের মেয়েদের। অপদেবতার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাদুলি এবং কবচও পরত এবং সেসব বস্তু তারা বিভিন্ন জিনিসের সাথে লাগিয়ে অলঙ্কারের মতো সুন্দর করে নিতো। প্রাচীন মিশরের মেয়েরা সাজসজ্জ্বার উপকরণ মাটির পাত্র কিংবা অলংকৃত কাঁচের পাত্রের ভিতরে রাখত। গয়নার বাক্স! তখনকার মেয়েরাও সুগন্ধির প্রতি দুর্বল ছিলো!তারা মরুভূমির শুস্ক বাতাস থেকে রক্ষা পেতে সারা শরীরে মাখত সুগন্ধী তেল । চুলের প্রতি অশেষ যত্ন নিত। মেহেদি মাখত চুলে। কেউ-বা চুল ছোট করে ছাঁটত।

অভিজাত মেয়েরা ভোজসভায় কিংবা অনুষ্ঠানে নকশাদার পরচুলো পরত! মনে রাখতে হবে, প্রাচীন মিশরের সমাজ ছিল পুরুষশাসিত সমাজ। যে কারণে বিয়ের আগে মেয়েদের বাবার এবং বিয়ের পর স্বামীর দেওয়া নাম গ্রহন করতে হত, যে নাম তাদের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারন করে দিত। যে কারণে: “নারীকে জিজ্ঞেস কর স্বামীর সম্বন্ধে আর স্বামীকে জিজ্ঞেস কর পদ (নাম) সর্ম্পকে।” এমন একটি কথা প্রাচীন মিশরে প্রচলিত ছিল।

তবে নারীর নিরাপত্তার জন্য সেই পুরুষশাসিত সমজ যথাযথ ব্যবস্থা করেছিল। নারীদের উত্তক্ত্য করলে তার জন্য ছিলো সালিশ ও শাস্তির ব্যবস্তা। কোনও নারীকে ধর্ষন করা হলে ধর্ষনকারীকে আইনের আওতায় এনে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে নিবীর্য খোজায় পরিনত করা হত! অর্থাৎ সে আর কখনই সন্তানের পিতা হতো পারতো না। তাছাড়া সেই যুগে এমন জটিল অস্ত্রপাচারের অসহ্য কষ্টের কথা চিন্তা করলেই বুঝা যায় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা কতটা যথাযত ছিলো!

প্রাচীন মিশরে আধুনিকতা : নারী (১ম পর্ব)

লেখক : এ এস এম মিজানুর রহমান

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে