এক নাবালিকার ধর্ষণকে কেন্দ্র করে জম্মুতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অশনিসংকেত। ওদিকে ধর্ষিতা ও নিহত মেয়েটি যে বাখরওয়াল সম্প্রদায়ের, তারা হারাতে পারে অরণ্যের অধিকার। ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল আট বছরের মেয়ে আসিফা। তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। যাযাবর বাখরওয়াল উপজাতির এই নাবালিকাকে এক সপ্তাহ ধরে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। তারপর না খাইয়ে ধর্ষণ স্থানে আটকে রাখে। এখানেই শেষ নয়। বেহুঁশ করে খুন করার আগে আবারো ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে।
জম্মু ও কাশ্মীরের জোট সরকারের শরিক বিজেপি। তারা ইসলাম ধর্মালম্বী গুজ্জর-বাখরওয়ালদের অধিকার কেড়ে নিতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুই গোষ্ঠীর জনসংখ্যা কাশ্মীরের ১১ শতাংশ। গুজ্জররা দুধ ব্যবসায় নিযুক্ত হলেও বাখরওয়ালরা মূলত অরণ্যবাসী, যাযাবরের জীবনযাপন করে।
এদের সঙ্গে জম্মুর সংখ্যাগুরু হিন্দুদের বিভাজন টানার রাজনৈতিক চেষ্টা চলছিলই। আর তাতে এবার ঘি ঢাললো আসিফার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ নাবালিকার গণধর্ষণ ও খুনের যে ১৫ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে ঘটনার ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এক নাবালকসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছে।
দীপক খাজুরিয়া নামের এক স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসারও। যাযাবর সম্প্রদায়টিকে এলাকাছাড়া করতেই নাকি তাদের এই ঘৃণ্য ছক। ১৭ জানুয়ারি জম্মু কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আসিফার দেহ উদ্ধার হয়েছে। এই আড়াই মাসের তদন্তে পুলিশ যে তথ্য পেয়েছে, তাতে এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তুলনাদিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের সঙ্গে হতেই পারে।
‘নির্ভয়া কাণ্ড’ নাগরিক সমাজে যে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল, তাতে ভারতের ধর্ষণবিরোধী আইনেও পরিবর্তন এসেছিল। কিন্তু কাঠুয়া গণধর্ষণে তা কই? বরং হিন্দুত্ববাদীরা একে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এমনকি জম্মু হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকাও কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ধৃতরা হিন্দু হওয়ায় আইনজীবীরা পুলিশকে চার্জশিট পেশ করতে বাধা দিয়েছে। আর এই বার অ্যাসোসিয়েশন সামনে রেখে বিজেপি কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ। বারের ডাকে বুধবার বনধ পালিত হয়েছে জম্মুতে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিজেপি নেতা চৌধুরী লাল সিং বলেছেন, অরণ্য তিনি দখলমুক্ত করবেন। বনে চাষবাস করতে দেবেন না। অভিযোগ উঠছে, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য যাযাবর বাখরওয়ালরা, যারা বছরভর বিভিন্ন অরণ্যে ঘুরে বেড়ায়, পশুপালন করে নিজেদের বাঁচার রসদ সংগ্রহ করে।
রাজ্য সরকারে বিজেপির জোটসঙ্গী পিডিপির ভোটার এই সুন্নি মুসলিমরা। তাই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এ নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি। গুজ্জর বাখরওয়ালদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় উপজাতি আইন অনুসারে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। এ নিয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিলে মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে