নীরবে বদলে যাচ্ছে রাশিয়ার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার বিন্যাস

0
রাশিয়ার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা

২০২০ সাল নাগাদ ২০% এ উন্নীত হবে রাশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা। প্রয়োজন উলামায়ে একরাম, মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও মুসলিম সংস্থাগুলোর সতর্ক দৃষ্টি।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী মুসলিম জনসংখ্যার দেশটির নাম রাশিয়া। রাশিয়ার মোট ১৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলিম। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মুসলিম জনবিন্যাসের চরিত্রের সাথে রাশিয়ার একটা বড় রকমের মৌলিক পার্থক্য আছে। ইউরোপের সবকটি দেশেই মুসলিমরা মূলত হয় অভিবাসী না হয় অভিবাসী বংশোদ্ভূত। সেখানে রাশিয়ান মুসলমানরা হলো মূলত রাশিয়ান আদিবাসী। রাশিয়ার মুসলমানদের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি রাশিয়ার আদিবাসী মুসলিম। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যা তাতারস্থান, দাগেস্তান, চেচনিয়া, বাশকোস্তোস্তান, উত্তর ককেশাসের প্রজাতন্ত্রে।

রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঋনাত্মক। প্রতিটি রুশ নারী গড়ে ১.৪ টি সন্তান জন্ম দেন। রাজধানী মস্কোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। মস্কোতে প্রতিটি রুশ নারী গড়ে ১.১ টি শিশু জন্ম দেন। প্রতিটি রুশ মুসলিম নারীরী গড়ে ২.১ টি সন্তান জন্ম দেন। আর তাতার রুশ মুসলিম নারীরা গড়ে ৬ টি সন্তান জন্ম দেন। আর চেচেন, ইনগুশ মুসলিম নারী গড়ে ১০ টি শিশু জন্ম দেন। রুশদের মধ্যে বিবাহের হার ব্যাপক কম এবং ডিভোর্সের হারও বেশি। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি এলকোহল কনজাম্পশনের দেশ হিসেবে রাশিয়াতে এলকোহল জনিত অসুখ ও মৃত্যুর হারও বেশি।

আরেকটি বিষয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো ( উজবেকিস্তান, কাজাখাস্তান, তুর্কমেনিস্তান) থেকে মুসলিমরা কাজের জন্য রাশিয়াতে অভিবাসী হচ্ছে। রাশিয়ান অর্থোডক্স খ্রীস্টানরাও ইসলাম গ্রহণ করছে। স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অভিমত……… যেভাবে চলছে তাতে ২০৩৫-২০৪০ সাল নাগাদ রাশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে।

রাশিয়ায় ইসলামের ইতিহাস :
সপ্তম শতাব্দীতে রাশিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছিলো। প্রথম মুসলিম প্রবেশ হয়েছিলো
” ডারবেন্ট ” শহরে। ডারবেন্ট শহরটি দাগেস্তান প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমান রাশিয়ার রাজ্য
” ভলগা বুলগেরিয়া ” য় ৯২২ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষনা করা হয়। রুশ মুসলিমদের ইতিহাস রাশিয়ায় প্রায় ১১০০ বছরের। বর্তমান রাশিয়ার একটা অংশে ( ভলগা বুলগেরিয়া, ক্রিমিয়া, তাতার) মুসলিম শাসন ছিলো।

বর্তমান রাশিয়ায় মুসলমানদের অবস্থা :
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ায় এখন পূর্নমাত্রায় সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিরাজ করছে। রাজধানী মস্কোতেই প্রায় ২৫-৩৫ লাখের মতো মুসলিমের বসবাস।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় মসজিদ ছিলো ৩০০ টি, বর্তমানে রাশিয়ায় ৮ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে। মসজিদ নির্মানে রাশিয়ান সরকার কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। ১৯৯১ তে রাশিয়ায় কোন মাদ্রাসা ছিলো না। বর্তমান রাশিয়ায় ৫০-৬০ টি মাদ্রাসায় কম করে হলেও ৫০ হাজার ছাত্র ছাত্রী পড়ছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে হজ্জ্ব যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ৪০। এটা এখন ২০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার জন্য হাজী কোটা বাড়ানোর জন্য সৌদি আরব সরকারকে অনুরোধ করেছে। রাশিয়ার ১৮২ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ টি মুসলিম আদিবাসী।

ঠিক এই মূহুর্তে কি করা উচিত???? :
১) মুসলিম দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের চোখ দিয়ে রাশিয়াকে দেখা পরিহার করতে হবে। রাশিয়াকে দেখতে হবে মুসলিম বিশ্বের সাথে রাশিয়ার অভিন্ন দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ ও রুশ মুসলিমদের বৃহত্তর কল্যানের এংগেল থেকে ।

২) কোনভাবেই রাশিয়াতে যাতে জঙ্গীবাদী সশস্ত্র তৎপরতা সুযোগ করতে না পারে সেজন্য মুসলিম বিশ্বকে সজাগ থাকতে হবে এবং রাশিয়াকে সহহযোগীতা করতে হবে ।

৩) রাজনৈতিক তৎপরতা নয় বরং শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সমাজকল্যান ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে এগিয়ে নিতে হবে রুশ মুসলিমদের মধ্যে।

৪) রাশিয়ার ভৌগলিক অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই রাশিয়ার মূল স্রোতধারায় রুশ মুসলিমদের অবদান বাড়াতে হবে।

৫) রুশ মুসলিম প্রদেশগুলোর স্বাধীনতা আন্দোলন ফোকাস হওয়া উচিত না। কারন এতে মুসলিম প্রদেশগুলো গণহত্যার শিকার হতে পারে, সংকুচিত হয়ে যেতে পারে রাশিয়াতে মুসলিম ইনফ্লাক্স, হয়তো বা রাশিয়ান সরকার তখন মুসলমানদের ধর্মীয় স্বধীনতাও খর্ব করতে পারে। আর মুসলিম প্রদেশগুলো যদি স্বাধীন হয়েও যায়, তবে মূল রাশিয়ায় মুসলিম প্রভাব বাড়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে ।

রাশিয়াতে ঐতিহাসিকভাবেই নন – রাশিয়ান ইউরোপিয়রা সমাদৃত বা আকাংখিত না। কিন্তু রুশ মুসলিমরা সেখানে এখন খুব সহজেই বিচরন করতে পারছেন। এখানে রুশ মুসলিমদের যোগ্যতা ও বিচক্ষনতাই মূল ফ্যাক্টর। আর ঋনাত্মক জনসংখ্যার কারনে মূল রাশিয়াকে রুশ মুসলিমদের উপরেই হয়তো নির্ভর করতে হবে।

Md Rifat Chowdhury