নেইমার: কেন হয়ে উঠলেন ব্রাজিলের পোস্টারবয়?

0
নেইমার: কেন হয়ে উঠলেন ব্রাজিলের পোস্টারবয়?

ডেটলাইন ১৮/ ৬/ ২০১৮। আগের রাতে বিশ্বকাপে গ্রুপ ই-র সুইজারল্যান্ড-ব্রাজিল ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র হয়। ম্যাচে সেলেসাও উইংগার নেইমারকে প্রায় ডজনখানেক বার ফাউল করা হয়। ম্যাচে নেইমারের খেলা মনও ভরাতে পারে নাই দর্শক-সমর্থকদের।

পরদিন গোটা ব্রাজিলজুড়ে শুরু হয় নেইমারের মুণ্ডুপাত। আক্ষরিক অর্থেই; খেলা তো বটেই, নেইমারের চুলের স্টাইল নিয়েও নানানরকম সমালোচনা চলতে থাকে। ব্রাজিল ইএসপিএনের আরনাল্ডো রিবেইরো কোন রকম ভদ্রতার ধার ধারলেন না: ‘গত ম্যাচে নেইমার ছিলো পুরোপুরি একটা দুর্যোগ।’ ব্রাজিলের সাবেক খেলোয়ার জ্যা এলিয়াসের সমালোচনা ছিলো আরো মর্মান্তিক: ‘মাঠে ও পুরা স্বার্থপর ছিলো। এজন্যেই বারবার ফাউলের শিকার হইছে’। ফক্স স্পোর্টস ব্রাজিলের অসভালদো প্যাসকলের মন্তব্য ঠান্ডা মাথার খুনীদের মত: ‘এরে বলে ভালগার ফুটবল। ডগলাস কস্তারে এক মিনিটও টাইম দিলো না টিটে, মজাই পাইলাম’। ‘ও ট্যাম্পো ব্রাজিল’-র থিয়াগো নিগেইরার মন্তব্যটা লক্ষণীয়: ‘ও খুব একটা ভালো খেলে নাই, অপ্রত্যাশিত খেলা খেলছে। এইজন্যেই মূলত ব্রাজিল হারছে।’

সমালোচনার ঝড় ওঠে ওর চুলের স্টাইল নিয়াও। এরিক ক্যান্টনের মত ডাকসাইটে ফুটবলার ওর হেয়ারকাট নিয়া ট্রোল করেন ইন্সটায়। অনেকে বলতে শুরু করেন, চুলের স্টাইলের কারণেই ভাল খেলতে পারে নাই সে, নিজের চুলের পেছনে এত টাইম দিলে খেলবে কখন! কী অদ্ভুত! কিন্তু নেইমার কিছুই বলতে পারে নাই। তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২২ তারিখ পর্যন্ত।

কোস্টারিকার সাথে সেই ম্যাচে ব্রাজিল অতিরিক্ত সময়ে কৌতিনহো আর নেইমারের করা গোলে ২-০ ব্যবধানের জয় পায়। ম্যাচ শেষে দুইহাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদতে থাকেন ব্রাজিল ফুটবলের রাজপুত্র। এখানেই শেষ নয়। ম্যাচের এক পর্যায়ে ডি-বক্সে ডাইভিংয়ের কারণে তুমুল সমালোচিত হন নেইমার। হতাশা থেকেই ওরকম কাজ করেছিলো নেইমার, বোঝা যায়। এক ম্যাচ খারাপ খেলায় যে তুমুল সমালোচনা চারপাশে, তাতে মেজাজ ঠিক রাখার মত মেন্টাল স্ট্রেংথ নেইমারের এখনও হয় নাই, বলাইবাহুল্য। ডাইভিং নিয়ে সেই সমালোচনা খুবই যৌক্তিক। কিন্তু সমালোচনার ঝড় ওঠে তার কান্না নিয়েও। ব্রাজিলের সর্বাধিক বিক্রিত পত্রিকা ‘ও গোলবো’ তাদের ওয়েবসাইটে মূল আর্টিকেলের হেডলাইনে লেখে: ‘বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেই এইরকমের কান্দাকাটি নরমাল ব্যাপার না’। এবার নেইমার মুখ খোলেন, কারণ গোল তার আত্মবিশ্বাস অনেকখানিই ফিরিয়ে দিয়েছিলো। ম্যাচের পরে টুইট করেন: ‘ওটা ছিল খুশির কান্না, চাপ কাটিয়ে উঠতে পারার কান্না’। সমালোচকদের উদ্দেশ্যেও খুব মার্জিত কথাই বলেন নেইমার: ‘কথা বলা খুব সোজা, কিন্তু সময়টা এখন করে দেখানোর। আমার জীবনে কোনকিছুই কখনও সহজ ছিলো না, এখনও সহজ না। আমার স্বপ্ন, না স্বপ্ন না, আমার লক্ষ্য, অটুট।’

একজন প্লেয়ার তিনমাসের দীর্ঘ ভয়াবহ ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরলেন, শতভাগ ফিট না হয়েই প্রস্তুতিম্যাচের দুটিতেই গোল করলেন। তারপরে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটিতে উপর্যুপরি ফাউলের শিকার হলেন, হয়তো খারাপই খেললেন সেই ম্যাচে। শুরু হলো পারফরম্যান্স থেকে চুলের স্টাইল নিয়ে সমালোচনা। ব্রাজিলের মিডিয়া থেকে ইংলিশ লিজেন্ডগণ–কেউই ছাড়তেছেন না সমালোচনার সুযোগ। পাহাড়প্রমান চাপ নিয়ে পরের ম্যাচে মাঠে নামা, বারবার আক্রমণ করেও গোল না পাওয়া, হতাশায় ডাইভ দিয়ে বসা, ম্যাচ শেষে গোল পাওয়ার পরে এই আনন্দাশ্রু তো তার আরেকটু ফ্রি, আরেকটু চাপমুক্ত হওয়ার জন্যেই, আরেকটু হালকা হওয়ার জন্যেই প্রয়োজন ছিলো! খেলা শেষে সেই কান্নাটুকু নিয়েও শুরু হলো সমালোচনা। কোচ টিটে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাবার মত তার পাশে দাঁড়ালেন, সেখানেও কান্নায় ভেঙে পড়লেন নেইমার। এরচেয়ে খারাপ সময় একজন ফুটবলারের জীবনে আর কী হতে পারে!

এই খারাপ সময়ের সুযোগ নিতে লোকে ছাড়ে না। বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেয়ায় এদেশের একটা বিশেষ ফ্যানবেজের অলিখিত শত্রু হয়ে উঠেছে নেইমার। অন্যদিকে কৌটিনহো আর পাওলিনহো, এই দুই ব্রাজিলিয়ান বার্সায় যোগ দেওয়ায়, এরা কিছুটা নির্লজ্জের মতই বলতে শুরু করে, নেইমারের চেয়ে কৌটিনহো বেশি ভালো, কৌটিনহো মেইনম্যান ইত্যাদি। কিছু ইতিহাস-অজ্ঞ হুজুগে ব্রাজিল সমর্থকও এসব উদ্ভট কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ, আজ, মেক্সিকোর কোচ ওশোরিও বললেন, কৌটিনহোকেই তিনি ব্রাজিলের মূলশক্তি মনে করছেন।

হাতি গর্তে পড়লে পিঁপড়ে লাথি মারে কিনা, আমার জানা নাই। তবে হাতি গর্তে পড়লে হাতির চাইতে পাতি অনেকেই যে উদ্ভট মজা নিতে চলে আসেন, সে জানা কথা। এবারের বিশ্বকাপে আপনারা ব্রাজিলের ট্রেডমার্ক পোস্টারটা লক্ষ্য করছেন নিশ্চয়ই। নেইমার, কৌটিনহো আর জেসুস–তিনজন ফোনকলের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গোল উদযাপন করছেন। এর প্রতীকী গুরুত্ব আছে। ব্রাজিল কখনোই ‘ওয়ান ম্যান শো’র দল ছিলো না। বিশ্ব ফুটবলে লিজেন্ডের পর লিজেন্ড জন্ম দিয়ে গেছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের কোন প্রজন্মই একজনমাত্র ফুটবলারের উপরে নির্ভরশীল ছিলো না। পেলের দলেও ছিলো গারিঞ্চা, গিলমার, জারজিনহোর মত লিজেন্ড; আশির দশকের ব্রাজিল দলটারে সর্বকালের সেরা দল ধরা হয়, সেই দলেও ছিলেন জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাওদের মত তারকা ফুটবলার। নব্বইয়ের দশকে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিল বেবেতো, ব্রাঙ্কো, দুঙ্গা, রোমারিও, কাফু-র মত লিজেন্ডরা। ২০০২ এ দ্য ফেনোমেনন রোনালদো-র বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলো রোনালদিনহো, রিভালদো, কাকার মত বিশ্বসেরা প্লেয়ার। সুতরাং, ব্রাজিলের কখনোই ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’মূলক দল হয়ে ওঠার দরকার পড়ে নাই, একজনকেই সামনে রেখে ব্যক্তিপূজার ধ্বজা ধরতে হয় নাই। তাই কৌটিনহোর চে নেইমার ভালো, বা নেইমারের চে কৌটিনহো, এইজাতীয় কম্পেয়ার করার কোন অর্থ নাই। এই লেখায় আমি নেইমারের ডাইভিংয়ের পক্ষ নেব না, তারে কৌটিনহোর চাইতে গ্রেট প্রমান করব না, তার চুলের স্টাইল বা কান্নাকাটিরও সাফাই গাব না। শুধু কিছু ফ্যাক্টস দেখাব, ব্রাজিল দলের জন্যে ও কী, আর খারাপ সময়ে নিন্দুকেরা কত অসার কথাবার্তা বলতেছে ওর ব্যাপারে, সেটাই কিছুমাত্রায় বলার চেষ্টা করব।

আগেই বলেছি, ব্রাজিল ‘ওয়ান ম্যান শো’র দল না। কিন্তু, ২০১০ বিশ্বকাপের পরে, ২০১৪ বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে, ব্রাজিলের আসন্ন বিশ্বকাপের পোস্টারবয় হয়ে ওঠেন নেইমার একা। ২০১০ বিশ্বকাপের হতাশার পরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ায় যে ব্রাজিল টিম, সেই ঘুড়ে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে প্রায় একাই নেতৃত্ব দেন নেইমার। ইতিহাস সেরকমই বলে।

২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল ছিলো ওর্স্ট এভার ব্রাজিলিয়ান টিম। দুঙ্গার এই ব্রাজিলই মূলত সরে গিয়েছিলো ‘জোগো বেনিতো’ থেকে, সেলেসাওরা হারিয়েছিলো তাদের ফুটবল ঐতিহ্য। ফলও হাতেনাতে পেয়েছিলো ব্রাজিল। দুঙ্গার কড়া ডিফেন্সিভ আর কাউন্টার এটাকভিত্তিক ফুটবল খেলা সেই ব্রাজিল দল থেমে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। পরপর দুটি বিশ্বকাপে ভরাডুবি, ততদিনে ব্রাজিল হারিয়েছে ২০০২ এর সেই গোল্ডেন এরার প্লেয়ারদের। কাকা, লুইস ফ্যাবিয়ানো, রবিনহো, এলানো, আদ্রিয়ানো, মাইকন, লুসিওদের মত প্রতিভাবান ফুটবলারদের ক্যারিয়ার, কারো সময়ের নিজস্ব গতিতে, আবার কারো নানান ঘটনা-দুর্ঘটনায়, অকালেই শেষ হয়ে গেছে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনালগ্নে, নতুন প্রজন্মের উত্থানের মূহুর্তে, ২০১০ এ, সিবিএফ মানো মেনেজেসের উপর দেয় ব্রাজিল দলের ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্ব।

মানো মেনেজেসে দায়িত্ব পেয়েই তরুণদের দিকে নজর দেন। ২০১০ বিশ্বকাপেই নেইমার আর পাতোকে দলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন পেলে, দুঙ্গা শোনেন নাই সেকথা। তার বক্তব্য ছিলো, তার খেলার ধরণের সাথে অতি তরুণেরা ঠিক যায় না। তরুণ ‘অপবাদ’ নিয়ে বাদ পড়েছিলেন মার্সেলোও। ২০১০, আগস্টের ১০ তারিখ নিউ জার্সিতে মানো মেনেজেসের অভিষেক ম্যাচে তিনি দলে ডাকলেন তারদেল্লি, আন্দ্রে, ডেভিড লুইজ, এডারসন, নেইমার, পাতো, মার্সেলোর মত তরুণদের। মানেজেসের সে দলে দুঙ্গার ওয়ার্ল্ড কাপ স্কোয়াডের মাত্র চারজনের জায়গা হয়েছিলো: রবিনহো, দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা আর রামিরেস। এই ম্যাচেই অভিষেক হলো নেইমারের, ম্যাচে গোলও করলো সে। তরুণ দলটি নিয়ে বেশকিছু ফ্রেন্ডলি ম্যাচ জিতলো ব্রাজিল। নেইমারও গোল পাইতে থাকলো।

এরপরে আসলো ২০১১ কোপা আমেরিকা। কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের সাথে গোলশূন্য ড্র করলো ব্রাজিল, টাইব্রেকারে চারটা শটের সবগুলোই মিস করলো। টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ার সাথে সাথে এও বোঝা গেলো, চাপের সামনে একদমই দাঁড়াতে পারে না মেনেজেসের এই তরুণ ব্রাজিল। কোপায় ব্যর্থতার পরেই আসলো ২০১২-র সামার অলিম্পিক, একমাত্র ফুটবল আসর, যেখানে গোল্ড মেডেল নাই ব্রাজিলের। তরুণ ব্রাজিল দল নিয়া মেনেজেসে সেবার রানার আপ হইলেন, মেক্সিকোর কাছে ফাইনালে হেরে। টুর্নামেন্টে নেইমারের ছিলো ৩ গোল। অলিম্পিকের ব্যর্থতার দায় নিয়া, ২০১২ তে মেনেজেস দায়িত্ব ছাড়েন। নয়া কোচ হিশাবে দায়িত্ব নেন ২০০২ এ ব্রাজিলরে বিশ্বকাপ জেতানো ‘দ্য বিগ ফিল’, লুই ফেলিপে স্কলারি।

ব্রাজিল দলের তখন কী অবস্থা? ২০১০ বিশ্বকাপে ভরাডুবি। ২০১১ কোপায় চরম ভরাডুবি। ২০১২ অলিম্পিকে রানার আপ। ফিফার র‍্যাংকিংয়ে ব্রাজিল নেমে এলো ১১-তে, ১৯৯৩ তে র‍্যাংকিং সিস্টেম চালুর পরে প্রথমবারের মত তারা টপ টেনের বাইরে ছিটকে পড়লো। ২০১৩ সালের ৬ জুন, ফিফার পরিবর্তিত র‍্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান হলো ২২, ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং ছিলো এটা। স্বাগতিক দেশ হিশাবে সেবার কোয়ালিফায়ার না খেলেই বিশ্বকাপ ও তার আগে কনফেডারেশন কাপে জায়গা পেয়েছিলো ব্রাজিল। তরুণ দল, নতুন ম্যানেজার, দুই দুইটা কম্পিটেটিভ টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা, ইতিহাসের সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং–এই নিয়া ২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপ খেলতে আসে ব্রাজিল। তরুণ দলটার নাম্বার নাইন হলো অখ্যাত ফ্রেড, মাঝমাঠে অস্কার রাইজিং স্টার, কিন্তু যার উপর তখন পুরো জাতির ভরসা ছিলো, যে তখন হয়েছিলো ব্রাজিলের পোস্টার বয়, তার নাম নেইমার জুনিয়র। সমগ্র ব্রাজিলের ভরসার প্রতীক হিশাবে, ১১ নম্বর জার্সির বদলে তাকে দেওয়া হয় ১০ নম্বর জার্সি।

ইতিহাসে নিজেদের সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং নিয়ে কনফেডারেশন কাপ খেলতে আসলো ব্রাজিল, তরুণ ক্যাপ্টেন থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই জাপানের সাথে ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো ভলিতে বল জালে জড়ায় নেইমার। ‘ইটজ নেইমার’, যেন বিশ্ব ফুটবলে এক নতুন হিরোর আগমনী ঘোষণা করেন কমেন্ট্রেটর। পরের ম্যাচে মেক্সিকোর সাথেও গোল করলেন নেইমার, এসিস্ট করলেন জো-র গোলে। গ্রুপ পর্বের লাস্ট ম্যাচ ছিলো শক্তিশালী ইটালির সাথে। নেইমারের ফ্রি কিক থেকে ম্যাচে প্রথম গোল করলেন দান্তে। এরপরে ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে, জিয়ানলুইজি বুফনকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ালেন নেইমার, সালভাদরের গ্যালারিতে লক্ষ লক্ষ মানুশ একসাথে গেয়ে উঠলো ‘ওলে ও ব্রাজিল’, কমেন্ট্রেটর ঘোষণা করলেন, ‘দ্য বয় ইজ আ সুপারস্টার’। সেমিতে উরুগুয়ের সাথে ২-১ গোলের জয় পায় ব্রাজিল। ফাইনালে তারা হারায় তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে, ৩-০ গোলে। নেইমার নিজে গোল করেন, ফ্রেডকে দিয়ে গোল করান। ৪ গোল, ২ এসিস্ট, র‍্যাংকিংয়ে ২২ নম্বরে থাকা ব্রাজিলকে কনফেডারেশন কাপ জিতিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার হন নেইমার।

সেই থেকে রুপকথার শুরু। ব্রাজিলের লক্ষকোটি মানুশের কণ্ঠে একটিই শুধু নাম–নেইমার। বিশ্বকাপের আসর বসে নেইমারের নিজের দেশে, শত কোটি দর্শক দেখতে উন্মুখ, কী করেন তাদের পোস্টারবয় নেইমার। নেইমার হতাশ করে নাই। বিশ্বকাপের ওপেনিং ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার সাথে করেন জোড়া গোল, গ্রুপ স্টেজের লাস্ট ম্যাচে ক্যামেরুনের সাথেও করেন জোড়া গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে তার নেওয়া কর্নার থেকেই গোল পান সিলভা। তারপর সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। যা নিয়ে আপনারা ট্রোল করেন, সেই পড়ে যাওয়া। আর উঠে দাঁড়াতে পারে নাই নেইমার। এবং তার ফলাফল কী হয়েছিলো, ব্রাজিল কেন, বিশ্ববাসীও তা কোনদিনই ভুলতে পারবে না। জার্মানির সাথে বেলো হরিজন্তের স্টাদিও মিনেইরোতে সেদিন ম্যাচ শুরুর আগে নেইমারের জার্সি হাতে সিজার আর লুইজের অঝোর কান্নাই প্রমাণ করে, নেইমারের উপর কতোটা নির্ভরশীল ছিলো ওই দলটা। আর এই অতি নেইমার নির্ভরতাই সেই টুর্নামেন্টে তাদের কাল হয়েছিলো, জন্ম দিয়েছিলো ‘মারাকানাজো’র পরে ব্রাজিল ফুটবলের সবচাইতে কালো দিনটার। এতকিছুর পরেও, সেই টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বল বিজয়ীদের শর্টলিস্টে নাম ওঠে নেইমারের, তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিশাবে পান ব্রোঞ্জ বুট; জায়গা পান ওয়ার্ল্ড কাপের সেরা একাদশে।

দিন গেল। দুঙ্গা আবার ব্রাজিল দলের কোচ হলেন। এলো ২০১৫ কোপা আমেরিকা। প্যারাগুয়ের সাথে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো ব্রাজিল, ফলাফলে ২০ বছর কনফেডারেশন কাপে কোয়ালিফাই করতেই ব্যর্থ হলো তারা, অথচ তারা ছিলো এই টুর্নামেন্টের গত তিন আসরের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬-র কোপায় পেরুর সাথে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়লো ব্রাজিল, কোপা আমেরিকায় ১৯৮৫ সালের পরে এই প্রথম গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে ব্রাজিল। ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৮-র কোয়ালিফায়ারও শুরু হয়ে গেছে ততদিনে, প্রথম ম্যাচেই চিলির সাথে ২-০ গোলে হেরে বসে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে। প্রথম ৬ ম্যাচের তিনটিতেই ড্র, দুইটিতে জয় এবং একটা হার নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থানে নেমে আসে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়।

ব্রাজিল ফুটবলের এই নয়া দুর্দিনে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নেন টিটে। টিটের অধীনে ২০১৪-র ভেঙে পড়া ব্রাজিল আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে আর কোন ম্যাচ না হেরেই, সর্বপ্রথম দল হিশাবে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট কাটে ব্রাজিল, চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারায় ৩-০ তে। বিশ্বকাপের এই কোয়ালিফায়ার রাউন্ডেও ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ গোল করেন নেইমার, সাথে দুই এসিস্ট। মাঝে, ২০১৬ সালের অলিম্পিকে ব্রাজিল জেতে প্রথম গোল্ড মেডেল। সেই টুর্নামেন্টে নক আউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচে গোল করেন নেইমার, ৪ গোল ও ১ এসিস্ট নিয়ে হন দলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। জার্মানির সাথে ৪-৫ এ জেতা টাইব্রেকারে উইনিং শটটাও নেন তিনি। ক্যাপ্টেন হিশাবে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন।

গত ফেব্রুয়ারিতেই মার্শেইয়ের সাথে এক ম্যাচে ভয়াবহ ইনজুরিতে পড়েন নেইমার। তার বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই শঙ্কা দেখা দেয়। পরবর্তীতে ফিজিও জানান যে, তিনি ওয়ার্ল্ড কাপ খেলতে পারবেন। তিনমাস পর মাঠে নামেন নেইমার। ওয়ার্ল্ড কাপের আগে আগে ক্রোয়েশিয়া আর অস্ট্রিয়ার সাথে খেলা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে গোল পান। ওয়ার্ল্ড কাপে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও, দ্বিতীয় ম্যাচেই গোল করেন নেইমার, পরের ম্যাচে তার কর্নার থেকেই গোল পায় ব্রাজিল।

২০১৪ সালে রোমারিও বলেছিলেন, নেইমার হবে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ স্কোরার, পেলেকেও ছাড়িয়ে যাবে ও। নেইমার ধীরে ধীরে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন। কোস্টারিকার সাথে অতিরিক্ত মিনিটের গোলে রোমারিওকে ছাড়িয়ে হয়ে গেছেন ব্রাজিলের অলটাইম থার্ড লিডিং স্কোরার। ব্রাজিলের হয়ে ৮৮ ম্যাচে তার গোল ৫৬। সামনে আছেন কেবল দ্য ফেনোমেনন (৬২), আর সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে (৭৭)! দেশের জার্সি গায়ে সবসময় সফল এই ফুটবলার বিশ্বকাপের মঞ্চেও এগিয়ে তার সময়ের দুই গ্রেট লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর চেয়ে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ১৯ ম্যাচে মেসির গোল ৬, এসিস্ট ৫; প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ১৬ ম্যাচে গোল ৭, এসিস্ট ২। বিপরীতে তাদের অর্ধেকেরও কম, মাত্র ৮ ম্যাচ খেলে নেইমারের গোলসংখ্যা ৫, এসিস্ট ২। শুধু অভিনয় করে আর মাঠে পড়ে গিয়ে এমন রেকর্ড গড়া সম্ভব না।

আগেই বললাম, ব্রাজিল ‘ওয়ান ম্যান শো’র দল কোনদিনও ছিলো না। ব্রাজিলে একাধিক স্টার প্লেয়ার সবসময়ই ছিলো এবং বিশেষ কারুর উপর নির্ভর করে নয়, দলগত খেলা খেলেই ব্রাজিল সবসময় বিশ্বকাপ জিতেছে। ফলে কৌটিনহো আর নেইমার, কে কার চেয়ে ভাল, এই তুলনা চলে না। আসলে, নেইমার উইংগার, তার কাজ গোল করা; কৌটি এটাকিং মিডি, তার কাজ প্লেমেকিং। দুইজনের খেলার এরিয়া, দায়িত্ব এবং ফলেই ধরণ আলাদা আলাদা। তাই তুলনা করা চলে না দুজনের। তারপরেও, আমরা কৌটিনহোর ক্যারিয়ারটাও একটু দেখে নেব। মজার ব্যাপার, কৌটিনহোর জাতীয় দলে অভিষেক হয় নেইমারের দুই বছর আগেই, ২০১০ সালে। মানো মেনেজেসের কাছ থেকে স্কলারি ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে, স্কলারির ব্রাজিল দলে জায়গা হয় নাই ওর, জায়গা হয় নাই ২০১৪-র বিশ্বকাপ দলেও। বিশ্বকাপের পরে, আবারো দুঙ্গার দলে ডাক পায় কৌটিনহো। মূলত তখন থেকেই ভাগ্য খুলতে শুরু করে কৌটিনহোর। আর টিটে দায়িত্ব নেওয়ার পরেপরেই, ব্রাজিল দলে এবং বিশ্ব ফুটবলে কৌটিনহো হয়ে ওঠে এক উদীয়মান চমকের নাম। কৌটিনহোর উত্থান মূলত ২০১৬-র কোপা আমেরিকায়, হাইতির বিপক্ষে সেই টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৩৯ ম্যাচে কৌটির গোল ১২ টি। কিন্তু গোল দিয়া তার খেলা বিচার করা যাবে না, কারণ আগেই বলেছি, কৌটি মিডফিল্ডার। তার কাজ মূলত প্লেমেকিং। এবারের বিশ্বকাপ কৌটির আসল উত্থানের মঞ্চ, পূর্ণ বিকাশের মঞ্চ। আর সেই মঞ্চে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি।

এবারের বিশ্বকাপে নেইমার কি খুব খারাপ খেলেছে? আমার মনে হয় না। অবশ্যই ওর কাছে আমাদের এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি। কিন্তু একেবারে খারাপ খেলে নাই নেইমার। প্রথম ম্যাচটা বাজে খেলছে, কিন্তু তারে সেদিন ১২ বারেরও বেশি ফাউল করা হয়, এই তথ্যটাও মাথায় রাখা লাগবে। গত বিশ্বকাপের স্মৃতি নেইমার বা ব্রাজিল–কেউই ভোলে নাই এখনও। দ্বিতীয় ম্যাচে নেইমার একের পর এক এটাক তৈরি করেছে, কখনও জেসুসের সাথে, কখনও কৌটির সাথে জুটি করে, শুধু গোলটাই হচ্ছিলো না। শেষমেশ গোলও পাইছে। আর শেষ ম্যাচে ফেলিপে লুইজের সাথে জুটি করা নেইমার ছিলো আরো ভয়ংকর। ওই ম্যাচে নেইমার থিয়াগো সিলভার গোলে এসিস্ট করেন। বারবার আক্রমণ তৈরি করেও ফিনিশিংয়ে ব্যর্থ হয় নেইমার। কিন্তু সে ম্যাচে ৯ টি টেক-ওয়ান ছিল নেইমারের, যা এবারের ওয়ার্ল্ড কাপে এক ম্যাচে যৌথ সর্বোচ্চ। ওই ম্যাচে ৯ টা সাক্সেসফুল ড্রিবল ছিলো নেইমারের, ছিল ৪ টা কী-পাস। ‘হুস্কোরড’-র জরিপে ওই ম্যাচে তার রেটিং ছিল ৯.২২, ফিফার অফিশিয়াল রেটিং ছিল ৮.৫, দুইটাই সেই ম্যাচে ব্রাজিলের পক্ষে সর্বোচ্চ। এবারের ওয়ার্ল্ড কাপে সর্বোচ্চ ৪২ টি ড্রিবলিং এটেম্পট নেইমারের, কাছাকাছি আছেন মেসি, তার ড্রিবলিং এটেম্পট ২৮ টি। আমার ধারণা, নেইমাররে নিয়া এবার তিতের আলাদা কোন প্ল্যানিং আছে। ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে ভালো শিক্ষাই নিয়েছেন টিটে। ডিফেন্সের ভুল আর অতি নেইমার-নির্ভরতার খেসারত দিতে হয়েছিলো ব্রাজিলকে জার্মানির সাথে। টিটে প্রথমেই ডিফেন্স শক্ত করলেন, এক ম্যাচে ৭ গোল খাওয়া ব্রাজিল গত ২৪ ম্যাচে খেয়েছে মাত্র ৬ গোল। অতি নেইমার-নির্ভরতা কাটিয়ে, দলগতভাবে খেলার সেই পুরাতন ঐতিহ্যে ফেরা ব্রাজিলের সফলতার জন্যে ছিল অতি জরুরি। টিটে সেটা করলেন, খুঁজে বের করলেন দুই তরুণ জেসুস আর ফিরমিনোকে, টিটের দলে কৌটিনহো হয়ে উঠলো আস্থার প্রতীক। এগুলি এমনিই হয় নাই। নেইমাররে বিশ্রাম দেওয়া, তাকে ছাড়া ম্যাচ জেতার প্রাক্টিস, সবই করেছেন টিটে।

এবারের বিশ্বকাপেও তারে নিয়া কোচের স্ট্রাটেজি একটু আলাদা বলে আমার ধারণা। ২০১৪ বিশ্বকাপে দেখছি, নেইমার অনেক ফ্রিলি খেলতে পারছে। এবারের ওয়ার্ল্ড কাপে অবস্থা ভিন্ন। নেইমার এখন সুপারস্টার, তারে ঘিরেই থাকে অন্য দলগুলির মূল পরিকল্পনা। টিটে তাই নেইমারের উপর বাজি ধরেন নাই। টিটের টেকনিকটা এখানে একটু আলাদা। খেয়াল করবেন, এই ওয়ার্ল্ড কাপে নেইমার দৌড়ায় কম, বল পেলেই থেমে যায়, প্লেমেকিং আর বিপক্ষ দলের প্লেয়ারদের ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করে, স্পেশ তৈরি করে জেসুস আর কৌটির জন্য। যা মনে হয়, নেইমারকে নিয়া টিটের প্ল্যান এমন, নেইমার-নির্ভর দল হওয়া যাবে না। অন্যন্য দলগুলা যেহেতু এখন নেইমাররে মাথায় রাইখাই প্ল্যান সাজাবে, নেইমার সেক্ষেত্রে একটা ফাঁদ হিশাবে থাকবে। সবাই যখন নেইমাররে আটকাতে ব্যস্ত থাকবে, সেই সুযোগটা নেবে জেসুস, কৌটি বা পাওলিনহো। নেইমাররেই গোল দিয়ে ম্যাচ জেতাতে হবে, তেমন কথা নাই। টিটের এই প্ল্যানের কারণেই সম্ভবত নেইমাররে এবার একটু ভিন্নরকম রোলে দেখা যাচ্ছে, ড্রিবলিং এবং কী পাসের দিকে বেশি মনোযোগী দেখা যাচ্ছে। তবে, ইনজুরির কারণেই হোক, বা যেকারণেই হোক, এসব দায়িত্বও যে নেইমার পুরোপুরি পালন করতে পারেন নাই, এটা সত্যি। আবার, গ্রুপ পর্বে ম্যাচ বাই ম্যাচ, নেইমার যে অনেক বেটার পারফরমেন্স দিছে, এও সত্যি।

লেখা বড় হয়ে গেলো। নেইমাররে নিয়া এত বড় লেখা লেখার উদ্দেশ্য খুব বেশিকিছু না। মাত্র একটা ম্যাচে খারাপ খেলা আর কিছু আনফরচুনেট ইস্যু নিয়া যেসব রাইভাল ফ্যান আর ব্রাজিলের যেসব প্লাস্টিক ফ্যান নেইমাররে মাত্রাতিরিক্ত ট্রোল করতেছেন, এমনকি কৌটিনহোরে ‘বেটার দ্যান’ বানিয়ে দিচ্ছেন, যারা নেইমাররে ‘একটা হাইপমাত্র’ বলে ব্যঙ্গ করছেন, যারা ‘নেইমার কী করছে’ বলে মূর্খের মত প্রশ্ন তুলছেন, তাদের সামনে নেইমার কী, হোয়াট হি মিনস টু ব্রাজিল এন্ড ইটজ ফ্যানস, শুধুমাত্র এটা তুলে ধরার জন্যেই এই লেখা।

২০০২ এর গোল্ডেন জেনারেশনের পতন দেখছি আমরা, ২০০৬ আর ২০১০ এ। র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে আস্তে আস্তে ২২ এ আসতে দেখছি ব্রাজিলকে। একটা পুরো প্রজন্ম বিলুপ্ত হয়ে, শুরু থেকে দেখেছি নতুন আরেকটা প্রজন্ম, নতুন আরেকটা ব্রাজিলের উত্থান, যার শুরুটা ছিল ২০১৩-র কনফেডারেশন কাপ থেকে। আর এই ব্রাজিল, এই নতুন ব্রাজিল, তারুণ্যনির্ভর তারকাহীন অনিশ্চিত এই ব্রাজিলরে ২২ নম্বর র‍্যাংকিং থেকে কনফেডারেশন কাপ জেতানো, ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে তোলা, ২০১৬-তে প্রথমবারের মত অলিম্পিক জেতা আর ২০১৮ বিশ্বকাপে, কোয়ালিফায়ারে বাদ পড়ার মত অবস্থা থেকে তুলে এনে সর্বপ্রথম রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করানো, একটা তরুণ দলরে ধীরে ধীরে আজকের শক্তিশালী ব্রাজিল করে তোলা, ২০০৭ সালে কাকার পরে প্রথম কোন ব্রাজিলিয়ান প্লেয়ার হিশাবে ব্যালন ডি অরের শর্টলিস্টে আসা (আশা করি ব্যালন ডি অর জিততেও আর বেশিদিন বাকি নাই), এই সমস্ত অর্জনের নেতৃত্বে যে আছে, তার নাম নেইমার। তাই নতুন প্রজন্ম, যারা ২০০২ এর গোল্ডেন জেনারেশনের বিলুপ্তির সাক্ষী, যারা ভাঙাচোরা অবস্থা থেকে কনফেডারেশন কাপ জয়ের সাক্ষী, যারা স্তাদিও মিনেইরোর সেই ‘ঘৌস্ট অফ 7-1’ এর সাক্ষী, তাদের কাছে নেইমার মানে শুধু একজন ট্যালেন্টেড প্লেয়ার না, নেইমার তাদের কাছে নতুন দিনের ব্রাজিল দলের প্রধান কারিগর, এই দশকে ব্রাজিলের প্রথম লিজেন্ড। নেইমার যদি আর কোন গোল নাও করে কোনদিন, এই প্রজন্ম কখনোই ভুলতে পারবে না নেইমাররে, কোনদিন চাইবে না কারুর সাথে কম্পেয়ার করতে। দুঃখের দিনের কান্ডারির সাথে অন্য কারুর তুলনা চলে না। উই লাভ নেইমার, দ্য পোস্টারবয় অব নিউ ব্রাজিল। লাভ এন্ড রেস্পেক্ট।

লেখক : তুহিন খান