পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে মঙ্গলবার তুরস্ক সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার সকালে ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পৌঁছেছেন বলে খবর দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইয়ানি শাফাক। তুরস্কের প্রথম পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণকাজ উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি এ সফর করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুরস্কের প্রথম পরমাণু স্থাপনা ‘আকুইয়ু’ এর উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার আঙ্কারায় জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির দুই দিনের সফলে তুরস্কে পৌঁছেছেন। আঙ্কায় প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।আকুইয়ু পরমাণু স্থাপনাটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রোজাটম নির্মাণ করবে। তুর্কি এ স্থাপনায় চারটি ইউনিট থাকবে এবং প্রতিটি ইউনিট ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। পরমাণু স্থাপনাটি নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার কোটি ডলার এবং প্রতিষ্ঠানটি বছরে আট হাজার ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। পরমাণু স্থাপনাটি নির্মাণের বিষয়ে ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের চুক্তি হয়েছিল।
আল-জাজিরা টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দুটি ইউনিটের কাজ শেষ করা হবে যা থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। পরবর্তীতে বাকি দুটি ইউনিটের কাজ শেষ করা হবে। স্থাপনাটি পুরোপুরি চালু হলে সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা তুরস্কের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে শুধু ইস্তাম্বুল শহরেই।
পরমাণু স্থাপনাটি চালু করার জন্য প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সাল এবং পূর্ণ মাত্রায় চালু হবে ২০২৫ সালে। স্থাপনাটি নির্মাণের জন্য পুরোপুরি কাজ শুরু হলে ১০ হাজার লোক নিয়োগ পাবে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে সেখানে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি চাকরির সুযোগ পাবে। এ স্থাপনায় কাজ করার জন্য তুরস্কের ২৪৮ জন ছাত্রকে রাশিয়ায় লেখাপড়া করানো হয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে ৩৫ জন ছাত্র গ্র্যাজুয়েট হয়েছে যাদের লেখাপড়া শেষ করতে সময় লেগেছে সাড়ে ছয় বছর।
চতুর্থ বারের মতো পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ফের ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, রবিবার (১৮ মার্চ) নির্বাচন শেষে ৭৩.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন পুতিন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে ২য় অবস্থানে রয়েছেন বামপন্থী দলের পাভেল গ্রুদিনিন। এছাড়া ন্যাশনালিস্ট লিব্যারাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি ৬.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩য় এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সেনিয়া সোবচাক ২.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছেন। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকেও এবার পুতিনের বোট বেড়েছে। সেবার পেয়েছিলেন ৬৪ শতাংশ ভোট। এবার গতবারের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
ভোটগ্রহণ শেষে পুতিনের ক্যাম্টেইন টিম জানিয়েছিল, নির্বাচনে পুতিন অসাধারণভাবে জয় লাভ করবেন। এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ মোট ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ায় ১১টি টাইমজোনে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
মোট ৯৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে রাশিয়ায় বসবাসরত ১০ কোটি ৮০ লাখ এবং রাশিয়ার বাইরে বসবাসরত ২০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। রাশিয়ার বাইরে থাকা রুশ ভোটাররা ৪০০ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। তবে বৈরি রাষ্ট্র ইউক্রেন তার দেশে থাকা রাশিয়ান ভোটারদের ভোটে অংশ নিতে দেয়নি। ক্রিমিয়া ও সেভাস্তোপল নৌবন্দর রাশিয়ার কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদেই ইউক্রেন এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
অন্য প্রার্থীরা হলেন- পাভেল গ্রুদিনিন (কমিউনিস্ট পার্টি), কাসেনিয়া সোবচাক (সিভিল ইনিশিয়েটিভ), ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি (লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টি), সের্গেই বাবুরিন (অল পিপলস ইউনিয়ন) মাক্সিম সুরিয়াখিন (কমিউনিস্টস অব রাশিয়া), বোরিস তিতভ (পার্টি অব গ্রোথ) এবং গিগোরি ইয়াভলিনস্কি (ইয়াভলোকো)।