১৮৮৮ সাল, পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলে রাতের আঁধারে ফিরছিলো ক্যাথেরিন এডওয়ে নামক এক যৌনকর্মী! হঠাৎ তীব্র চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে প্রতিবেশীদের, রাস্তায় এসে সবাই দেখতে পায় অদ্ভুত ভাবে খুন হয়েছে ক্যাথরিন! তার পেটের নাড়িভূড়ি বেরিয়ে আছে, এলোপাথারি ভাবে কুপিয়েছে খুনী। সেবছর একই পদ্ধতিতে খুন হয়েছিলো পূর্ব লন্ডনের চার যৌণকর্মী। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ধরতে পারেনি খুনীকে। খুনীর নাম দিয়েছিলো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড – জ্যাক দ্য রিপার।
The fifty most amazing crimes of the last 100 years বইতে একমাত্র জ্যাক দ্য রিপারের কোনো ছবি নেই! জ্যাকের ছবির জায়গায় রয়েছে বিশাল এক বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। ১২৭ বছরেও জ্যাক দ্য রিপারের কোনো হদিস বের করা যায়নি। হোয়াইট চ্যাপেলের ঘটনার পর পুরো লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক!
হাজার হাজার মানুষকে জেরা করে ছেড়ে দেয় পুলিশ, রাতে কালো হ্যাট পড়া কোনো ব্যক্তিকে দেখলেই মহল্লার পাহারাদারেরা সংঘবদ্ধ আক্রমণ শুরু করতো। অবস্হা বেগতিক দেখে চাকরীতে ইস্তফা দিলেন পুলিশ কমিশনার।
মাত্র একমাস শান্ত ছিলো পরিবেশ, তারপরই আবার খুন! মাত্র বিশ বছর পেরুনো এক তরুণীকে টুকরো টুকরো করে পাঁজর সহ আলাদা করে ফেলা হলো। পরবর্তী বছর ১৮৮৯ সালে হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় আরো দুইজন পতিতা প্রাণ হারায় নির্মম ভাবে।
এসময় জর্জ বার্নার্ড শ পুলিশ বরাবর একটি চিঠি লেখেন – যেখানে তিনি নিশ্চিত করেই বলেন ‘হত্যাকারী অবশ্যই একজন সমাজ সংস্কারক যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে নিশ্চিত কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে।’
রিপারের শেষ খুনটা ছিলো ডর্সালিস স্ট্রীটে। মেরী নামক এক যুবতীকে খুন করেছিলো রিপার! সেই খুন হবার রাতে মেরি গুনগুন করে গান গাইছিলো এবং বারবার এক আগন্তুক কে ডাকছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে লোকটা ছিলো খাটো, মুখে পাকানো গোঁফ, পরণে চমৎকার পোষাক, হাতে পার্সেলের মতো কিছু একটা ঝুলছিলো তার!
মেরিকে আনুমানিক শ খানেক টুকরো করে জ্যাক দ্য রিপার রক্তে ভেজা কাপড় নিয়ে লন্ডনের বুকে হেঁটে চলে গিয়েছিলো – কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই!
পুলিশ বিভাগ অবশ্য দাবী করেছিলো জ্যাক দ্য রিপার ছিলো একজন স্যাডিস্ট মানে মানসিক রোগী। যেই সিরিয়াল কিলারের কাজই ছিলো যৌণ কর্মীদের যন্ত্রণা দিয়ে এবং ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়ে মৃত্যুবরণ করানো।
পুলিশ বিভাগ সন্দেহ করেছিলো পোল্যান্ডের অধিবাসী স্লেভেন ক্লুসোউইস্কি নামক এক ব্যক্তিই ছিলো জ্যাক দ্য রিপার! হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হবার সময় সে নাপিতের কাজ করতো হোয়াইট চ্যাপেলে!
তবে এ বিষয়েও কোনো তথ্য প্রমাণ নেই।
ডোনাল্ড ম্যাককরিন নামক এক লেখক The Identity of Jack The Ripper নামক বইতে উল্লেখ করেন – জ্যাক দ্য রিপার কে রাশিয়ান জারের পুলিশেরা লন্ডন পাঠিয়েছিলো ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে আশ্চর্য্য উপহার দেবার জন্য।
এখন ২০১৭ সাল ….. জ্যাক দ্য রিপার আজও রয়ে গেছে ইতিহাসের এক রহস্যময় চরিত্র। কেও জানেনা তার প্রকৃত পরিচয় , কেও আবিষ্কার করতে পারেনি – কি ছিলো জ্যাকের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
