টাকার উপর ভাসমান এবং নির্ভরশীল এই দুনিয়ায় বসবাস করতে হয় বলেই টাকার পেছনে ছুটতে হয় প্রতিনিয়ত।আর অক্লান্ত পরিশ্রমের সুফল তখনি পাওয়া যায় যখন আপনি আপনার টাকার উপর ঘুমোতে পারেন,যখন আপনার নিজেরই ধারনা থাকে না আপনার ধন সম্পদের পরিমাণ কত! যদি আমাদের কাওকে জিজ্ঞেস করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ধনির ব্যক্তি গুলোর নাম সম্পর্কে তাহলে আমারা চোখ বন্ধ করেই কয়েকজনের নাম বলে দিতে পারবো যেমন:-বিল গেটস,মার্ক জাকারবার্গ ইত্যাদি।কিন্ত আপনাদের কি আদৌ ধারনা আছে যে,বিল গেটস কিংবা মার্ক জাকারবার্গ এর চেয়ে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যাকে বলা হয় টাকার কুমির !এমন একজন পরিবার যে পরিবারের ধন সম্পদের দিক দিয়ে সবার চেয়ে উপরে।
স্টোরি :-
জেকব রথসচাইল্ড এবং তার পরিবার
Lord Jacob Rothschild.
তিনি এমন একজন ব্যক্তি যে কিনা চায় আপনি তার সম্পর্কে অজানা থাকুন।বিশ্বের মানচিত্রে তার অবস্থান থাকলেও তার কারি কারি টাকা সম্পর্কে বিশ্ব জানুক এবং মন্তব্য করুক সেটা তিনি কখনোই চান না।তার এই গোপনীয়তার কারনে আজ পর্যন্ত তার মোট সম্পত্তির ধারনা পাওয়া যায় নি। তবে অনেক সাংবাদিক একত্রিত হয়ে তার বর্তমান সম্পদের কিছুটা গুনতে পেরেছে।এই প্রাচুর্যের খ্যাতি শুধু তার একার নয় বরং তার পরিবারের সবাই।রথস চাইল্ডের পারিবারিক ব্যবসায় হিসেবেও এটি সুখ্যাত।তাদের পরিবার ৫০০ বছর এর আগ থেকেও এই ব্যবসায়ের সাথে জরিত।বর্তমানের ব্যাংক গুলোর মুল ব্যবসার ধরনই রথস চাইল্ডের পারিবারিক ব্যবসায় ছিল।তাদের পুর্ব পুরুষের কাজ ছিল দামি এবং বিলুপ্ত কয়েন বিক্রি করা।পাশাপাশি সমাজের ধনি মানুষরা বিপদের সম্মুখিন হলে তাদের টাকা ধার দেয়া এবং উচ্চ মুল্লের সুদ আদায় করা। ১৮ শতক এর একটা সময় আসে যখন আমশেল রথসচাইল্ড তাদের ব্যবসায় কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যান।তিনি তার পাচ পুত্রকে পাঠিয়ে দেন পাচটি দেশে।তাদের পরিকল্পনা ছিল গুপ্তচরের মত কিভাবে টাকা বানানো যায়।তা নিয়ে তাদের গবেষণার শেষ ছিল না।
তার পাচ পুত্রকে ইউরোপের সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর গুলাতে যেমন:- নেপলস (ইটালি), প্যারিস (ফ্রান্স) , ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) ও লন্ডন (ইংল্যান্ড) পাঠিয়ে দেন।তারা সেখানে গিয়ে রাজ-পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতো এবং তাদের যুদ্ধের সময় বিপুল পরিমানে লোন দিত।ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন তাদের ব্যবসায় বাড়তে লাগলো।যেমন:-ফ্রান্স এর সাথে ইংল্যান্ড এর যুদ্ধ চলছে চাইল্ডের এক ছেলে ফ্রান্সের সরকারকে লোন দিচ্ছে আরেক ছেলে ইংল্যান্ড এর সরকারকে।এইভাবে যেই জিতুক বা হারুক না কেন তাদের টাকার বস্তা কেবল ফুলেই উটছে।তাদের এই ব্যবস্থার কারনে ইউরোপের নানা যুদ্ধের পেছনে তাদের হাত ছিল বলে ধারনা করা হয়।তারাই বিভিন্ন শাসককে উসকানি দিয়ে টাকা ধার দেয়ার লোভ দেখিয়ে যুদ্ধ লাগাতো।বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে বা কোন দেশের বা শহড়ের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন সেটা তারা খুব ভাল করে জানতো।এর ভিত্তিতে পরবর্তী ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতো তারা।ইউরোপের সবকটি নামি দামি শহড় গুলোতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ছড়ানো ছিল সর্বদা।এইভাবেই তারা তাদের ধন সম্পদের পরিমাণ বাড়ায়!
ওয়াটারলুর যুদ্ধে ব্রিটিশদের টাকার যোগান দিচ্ছিল রথসচাইল্ডদের ব্যাংক। ব্রিটিশ রথচাইল্ড ব্যাংকের প্রধান নাথান রথসচাইল্ড একটা চাল চাললেন। স্পাইয়ের মাধ্যমে খবর পেলেন ব্রিটিশরা জিতে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সস্তা দরে স্টক এক্সচেঞ্জে সব ব্রিটিশ শেয়ার বেচা শুরু করলেন! তাদের দেখাদেখি বাকি সব লোকেও তাদের শেয়ার বেচা শুরু করলো, তারা ভেবেছিল রথসচাইল্ডরা তো আর ভুল করবে না! ওদিকে নাথানের লোক গোপনে সব শেয়ার সস্তায় কিনে নিচ্ছিল। নাথানের লন্ডন ফেরার পরের দিনই জানা গেলো বৃটিশদের জয়ের কথা। একদিনেই নাথানের সম্পদের পরিমান বেড়ে গেলো ২০ গুণ। নাথান রথচাইল্ডের হাত দিয়ে এভাবে বৃটিশ অর্থনীতি চলে এলো একটি মাত্র পরিবারের হাতে।
রথচাইল্ডদের টাকার জোরের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যারন রথসচাইল্ড ব্রিটিশ সরকারকে লোন দেন এই শর্তে, যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জন্য নিজস্ব দেশ তৈরি করতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড বেলফোর রাজি হয়ে যে ঘোষণা দেন এই ইস্যুতে তা “বেলফোর ঘোষণা” নামে পরিচিত। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণে বলা হয়, পৃথিবীতে ইসরাইল একমাত্র দেশ যা টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে!
কত তাদের টাকার পরিমাণ?
যেহেতু কয়েকশ বছর ধরে এই পক্রিয়া চলে আসছে সেহেতু তাদের অগুনিত ভান্ডার গুনার মতো ক্ষমতা কারো নেই।আগেই বলা হয়েছে তারা তাদের টাকার পরিমান জনসম্মুখে প্রকাশ করেন না।এইটা তাদের পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।কয়েকবছর আগে একজন সাংবাদিক তাদের মোট সম্পদের কিছুটা ধারনা দেন।ধরা হয় তাদের মোট পারিবারিক সম্পত্তির পরিমান ২০ ট্রিলিয়ন ডলার এরও বেশি।
দিনের পর দিন এই সংখ্যার হার কেবল বাড়ছেই।বর্তমানে এর পরিমাণ কত তা কারো পরিষ্কার ধারনা নেই।
বিশ্বের অনেক সেন্ট্রাল ব্যাংক এর মালিক তারা নিজেই।একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা গুনতে তাদের খুব একটা সময় লাগে না।এমন অনেক নামি দামি ব্যাংক বা ব্যবসায় প্রতিস্টানে তাদের শেয়ার আছে।যা দিনের পর দিন বাড়ছেই।তেল,কয়লা,বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে তাদের বিনিয়োগ আছে বলে ধারনা করা হয়।
২০১৫ সালে এই ক্ষমতাধর পরিবারের সদস্যের বাংলাদেশে ভ্রমনের খবর মেলে।তাদের বিচক্ষনতা ছিল বাংলাদেশে ব্যবসায়।আবশ্য এর পর আর কোন আপডেট পাওয়া যায় নি।
সুতরাং এই একটি পরিবার যাদের উপরে কেও নেই।বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর রাজ করছেন এই এই পরিবার বিগত ৫০০ বছর ধরেই।
হয়তো সব দেশেই! আধুনিক কালের জন্য এটাকে একটা দুর্বলতা বলা চলে।একটি পরিবারের কাছে এত সম্পদ জমা হওয়াটা আসলেই ভাবনার বিষয়।বিভিন্ন সময়ে পরিপেক্ষিতে অনেক থিওরির উতপত্তি হলেও কাজে লাগেনি একটিও।
লেখক: এমদাদুল হক মিলন