কোন কারণ ছাড়াই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ছয় ছাত্রী। পরিবারের পীড়াপীড়িতেও বিদ্যালয়ে যেতে নারাজ। অবশেষে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতেই যৌন নিপীড়নের শিকার । প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে শিক্ষা বিভাগ। ঘটনা টি ঘটে মেহেরপুরের গাংনীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন,এসব কিছুতে তার হাত নেই, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন দপ্তরি নিয়োগ নিয়ে এই ষড়যন্ত্র। ওই নিয়োগে তিনি স্থানীয় একটি ছেলের পক্ষ নেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁকে নিয়োগের পক্ষে থাকায় স্থানীয় নেতাদের রোষানলে পড়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রশাসন, বিদ্যালয় ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩৩৫ শিক্ষার্থীর ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছয়জন। বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছয় ছাত্রী সম্প্রতি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রথম দিকে কেউ বিষয়টির তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তবে টানা সপ্তাহখানেক স্কুলে না যাওয়া ও তাদের আচরণে পরিবর্তনের বিষয়টি অভিভাবকেরা খেয়াল করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে যৌন নিপীড়নের কথা খুলে বলে।
এরপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগটি যায় উপজেলা প্রশাসনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়। গত মঙ্গলবার উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল বিন হাসান ও তাজমিরা খাতুন ভুক্তভোগী ছাত্রীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ফয়সাল বিন হাসান বলেন, ‘আমরা অভিযোগকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। একজন ছাত্রীর মা ও বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। অপর আরেকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তদন্তের ফল ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হবে।’
এদিকে ঘটনার শিকার এক ছাত্রীর অভিভাবক একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন। তাতে ওই অভিভাবকের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ফোনালাপ। তাতে প্রধান শিক্ষককে মাফ চাইতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিষয়টি মিটিয়ে ফেললে ৩০ হাজার টাকা দিতে চান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, এখন অনেকেই অভিযোগ দিচ্ছে। এর আগে কেউ এমন অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে গত বুধবার কমিটি জরুরি সভা করেছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধিকতর তদন্ত চলছে। এমন অভিযোগের মধ্যেই প্রধান শিক্ষক ১৮ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ভারত যাওয়ার কথা বলে ছুটি নেন, তবে তিনি দেশেই আছেন। ছুটিতে থেকেও ২১ মার্চ (বুধবার) স্কুল পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। আবার ছুটি শেষ হলেও ২২ মার্চ কর্মস্থলে যোগ দেননি। ইউএনও বিষ্ণুপদ পালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।