প্রাচীন মিশরে আধুনিকতা : নারী (১ম পর্ব)

1
মিশরে আধুনিকতা

কয়েক হাজার বছরের পূর্বের বিশ্ব আর আজকের বিশ্বের মধ্যে কালের পার্থক্য যতুুটুকু তার চেয়ে বেশি পার্থক্য উন্নয়নের। এটাই স্বাভাবিক, সময়ের সাথে পরিবর্তন। পৃথিবীর শুরু থেকেই রহস্যের বড় অংশ নিজেদের অধিকারে রেখে দিয়েছে মিশরীয়রা। সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট অধ্যায় থেকে সব থেকে ঘৃনিত অধ্যায় সবকিছুই প্রাচীন মিশর ইতিহাসে বিদ্যমান। প্রাচীন সভ্যতাসমূহের মধ্যে প্রাচীন মিশরে নারীর মর্যাদা ছিল সর্বাধিক। প্রাচীন বিশ্বের সকল সভ্যতা,সকল দেশে যখন নারীদের তুচ্ছভাবে দেখা হতো ঠিক তখন মিশরীয়রা সব থেকে বেশি অধিকার দিয়েছে নারীদের! প্রাচীন বিশ্বের অন্যান্য সমাজে যখন নারী পুরুষের ইচ্ছার অধীন অথচ প্রাচীন মিশরে কোনও পুরুষ বিবাহের প্রস্তাব দিলে একজন নারীর তা প্রত্যাখান করার অধিকার ছিল! কোনও প্রকার বল প্রয়োগ ছিল সেই যুগের মিশরীয় আইনের পরিপন্থি। নারীর এমন কী বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার পর্যন্ত ছিল। আইনের ব্যাপারে, যে কোন ধরনের অভিযোগ করার জন্য সরাসরি নারীরা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারতো। সেই কালে মিশর সভ্যতায় নারীদের এরকম অবস্থান কিঞ্চিত বিস্ময়ের! প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল ফারাওদের শাসনামল শুরু হওয়া থেকে।
মিশরে আধুনিকতা
আজ থেকে প্রায় ৫০০০ হাজার বছর আগে। ফারাওদের সময়কাল বিস্তৃত ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অবধি। তখনকার বিশ্বে মিশরকে সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী রাজ্যে পরিনত করেছিলো ফারাওরা। যা খুব অল্প সময়েই প্রাচীন বিশ্বের বিস্ময় ও শ্রদ্ধা অর্জন করে নিয়েছিলো। সাধারন মিশরীয়দের চোখে একজন ফারাও ছিলেন ঈশ্বর-সরূপ। ফারাওদের স্ত্রীরাও ছিলো মানুষের কাছে দেবীতূল্য। যেহেতু অধিকারের দিক থেকে নারীদের অবস্থান সুদৃঢ় ছিলো সে কারণেই ফারাও স্ত্রী রা ফারাওদের সম্পদের ভাগ পেতেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে একজন রানী ফারাও অবধি হতে পারতেন। পরিপূর্ণ ফারাও না হলেও দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার আদেশেই রাজ্য পরিচালিত হতো। প্রচীন বিশ্বে এরকম অভিনব নিয়ম কানুন ফারাওদের অনন্য মর্যাদার অধিকারী করেছিলো। প্রাচীন মিশরের মানুষের বিশ্বাস ছিল- জীবনের উদ্দেশ্য হল পারিবারিক আনন্দ ও সুখ লাভ করা আর পরিবারের লোকজনই হল সে আনন্দের অন্যতম উৎস। এবং পরিবার আলো করে রাখে একজন নারী। ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’ বিশ্বাষটা ঠিক এরকমই। সংসারের সর্বময় কর্তা একজন পুরুষই থাকতেন তবে নারীদের উপস্থিতি সকল ক্ষেত্রেই পরলক্ষিত হতো।

পুরুষ কর্তা ভিন দেশে ব্যবসার কাজে গেলে নতুবা সরকারি কাজে বাইরে থাকলে সংসারের সব দ্বায় দ্বায়িত্ব একজন নারীর নেওয়ার অধিকার ছিলো। প্রাচীন মিশরে মেয়েদের বিয়ে হত অল্প বয়সে। বারো থেকে চৌদ্দের মধ্যে। প্রাচীন মিসরীয় সমাজে সন্তানের বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যার ধরুন নববধুর প্রধান লক্ষ্য থাকতো একজন ভালো স্ত্রী ও সন্তানের মা হওয়া।

কয়েকটি সূত্র মিলিয়ে প্রাচীন মিশরের স্ত্রীদের দৈনন্দিন কাজের একটা তালিকা পাওয়া যায়-

* দিনে দু-বার পানি আনতে হতো। বাড়ির আঙিনায় থাকত মাটির পিঁপে, সেই পিঁপে পানি দিয়ে ভরতে হত।

* শণ দিয়ে তৈরী কররতে হতো সু্তা আর সেই সুতায় বুনতে হতো কাপড় ।

* মেয়েরা মাঠে কাজ করতে পারতো। তবে মজার ব্যাপার হলো মেয়েদের কাজের জন্য ধারালো কিছু দেওয়া হতো না। যার ফলে মেয়েদের কাজ ফসল বুনা পর্যন্ত ছিলো তারা ফসল কাটতে পারতো না। তারপর শস্য ঝাড়াই-বাছাই করত এবং পরে শস্য মাড়াই করত।

* পুরুষের জন্য মদ (বিয়ার) তৈরি করত নারীরাই । এ জন্য বিভিন্ন লতাপাতা থেকে রস এবং বাদাম থেকে তেল বার করত। * আরেকটা মজার ব্যাপার ছিলো, মেয়েরা ময়লা কাপড় ধুতো না। তার কারণ, নোংরা কাপড় নীল নদে ধুতে হত। আর নীল নদে ছিল কুমিরের ভয়!

* আর সবচে মজার ব্যাপার হলো কখনও কখনও মেয়েদের শোক মিছিলের জন্য ভাড়া করা হতো। মাথায় ধুলো মেখে চিৎকার করে কাঁদার জন্য মেয়েরা ভালো পয়সাও পেত। সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইচ্ছে করলে মেয়েরা বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারত। তবে সে কাজ বিনামূল্যে ছিল না, কাজের জন্য মেয়েরা বেতন পেত। মেয়েরা, এমন কী, ব্যবসাবানিজ্যও করতে পারত। তবে সরকারি দপ্তরে তারা কোনও কাজ পেত না। বলা যায় জনবলের ভিত্তিতে পুরুষের মতো ঠিক সমান অধিকার দেওয়া হতো নারীদের। অবাক করার মতো বিষয় হলো এসবই সত্য!

পরের পর্বে নারীদের আইনি অধিকার, সম্পদের অধিকারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

লেখকঃ এ এস এম মিজান

ধর্ষণকারীকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে নির্বীর্য বানানো কি প্রাচীন মিশরীয় আইনের বর্বরতা ছিলো? (২য় পর্ব)

1 মন্তব্য

  1. ইতিহাস জানতে চাই।তথ্য তো কিছুই পেলাম না।নারীর মর্যাদা ভাই আপনি একায় গেয়ে গেলেন।এটা তেমন ভালো লাগে নি।তবে পরের পর্বে আশা করি চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে আমাদের খুশি করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে