রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট চলছে। ১১টি ভিন্ন টাইমজোনের বিশাল দেশ রাশিয়ায় পূর্বাঞ্চলে গ্রিনিচ মান সময়ে (জিএমটি) শনিবার রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ইউরোপের অংশে থাকা রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে গ্রিনিচ মান সময়ে (জিএমটি) রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে। এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও তিনিই জিতবেন— এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা এক প্রকার নিশ্চিত। তাই দেশটিতে নির্বাচন নিয়ে প্রচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো উত্তেজনা ছিল না। তবে এবারের নির্বাচনে পুতিন আগের মতো শক্তিশালী ম্যান্ডেট পাবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে পুতিনের বড় লড়াই হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার পাল্টা জবাবে ভোটের বাক্স থেকে নিজের জন্য শক্তিশালী ম্যান্ডেট আদায় করা। এ ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন বাক্সে পড়া ভোটের অন্তত ৭০ শতাংশ সমর্থন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত জরিপ সংস্থা রাশিয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআইওএম) জানিয়েছে, তাদের জরিপ অনুযায়ী, পুতিন প্রায় ৬৯ শতাংশ ভোট পেতে পারেন। বাকি ভোট পাবেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। জরিপের ফল পুতিনের প্রতি দেশটির জনগণের বড় সমর্থনকেই সামনে তুলে ধরে। পাশাপাশি আরও একটা বিষয়ও স্পষ্ট করে, দেশটিতে তার কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার সঙ্গে সামান্য হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা রাখতেন একমাত্র ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলেক্সি নাভালনি। তাকে আগেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সেন্ট্রাল ইলেক্টোরাল কমিশন (সিইসি) তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়।
পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সাতজন হলেও মূলত তিনজনকেই সামনে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত রিয়েলিটি শোর তারকা ও সাংবাদিক কেসেনিয়া সবচাক। তিনি ক্রেমলিনেরই মনোনীত প্রার্থী বলে মনে করছেন অনেকে। ভিসিআইওএমের জরিপে বলা হয়, নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাবেন পাভেল গ্রুডিনিন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান। তবে ভিসিআইওএমের জরিপে নির্বাচনে পুতিনের বর্তমান সাত প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউ কখনও ১০ শতাংশের সমর্থন পাননি।
নির্বাচনের ফল যে পুতিনের পক্ষেই যাচ্ছে এ নিয়ে শুরু থেকেই পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে দেশের ভেতরে তেমন আগ্রহ নেই জনগণের মধ্যে, দেশটির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পশ্চিমা দেশগুলোতেও এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠেনি। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচন নিয়ে সমাবেশের পাশাপাশি রেডিও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও পুতিনও তেমন জোরেশোরে কোনো প্রচারে নামেননি। একদিন মাত্র একটি সমাবেশে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অংশ নেন। কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও তিনি যোগ দেননি।
তবে এবার বিরোধীদের নেতা নাভালনি ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। এর প্রভাবে এবার প্রয়োজনীয় ৭০ শতাংশ ভোট পাওয়ার টার্গেট হাত ফসকে যেতে পারে পুতিনের এবং শক্তিশালী ম্যান্ডেটের অভাবে সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন পশ্চিমাদের।
এদিকে পক্ষত্যাগী গুপ্তচর হত্যাচেষ্টায় পুতিন প্রশাসনের জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাজ্য থেকে রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাও নির্বাচনের ভোটে ছায়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে একটি ভিডিও ভাষণে পুতিন দেশটির জনগণকে পিতৃভূমিকে ভালোবাসার আহ্বান জানান। আগামীকাল সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার রাষ্ট্র পরিচালনার মতো জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান পুতিন।
তবে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া ক্রিমিয়াতেও এবার প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সেখান থেকে প্রকৌশলী আন্দ্রে লুকিনিখ বলেছেন, পুতিনই একমাত্র প্রার্থী, যিনি কঠিন সময়েও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারেন। মস্কোর শিক্ষার্থী ইউলিয়া ডুঝেভাও সমর্থন করছেন পুতিনকে। পুতিন ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছেন তাতে ওই শিক্ষার্থী অভিভূত। কিন্তু অন্যরা বলেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, রাশিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন।