পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। দ্বিতীয় নেতা বলতে কেউ নেই তাঁর দলে। তৃণমূল বলতে মমতা। আর মমতা বলতে তৃণমূল। অন্যান্য দলে যেমন দ্বিতীয় বা তৃতীয় জাতীয় নেতা থাকেন, তা অনুপস্থিত তৃণমূলে। এই দলে প্রথম ও শেষ কথা এই মমতাই। তিনি যা বলেন, সেটাই দলের বেদবাক্য।
সেই মমতাই এবার বেছে নিলেন তাঁর উত্তরসূরি। যদিও তৃণমূল ত্যাগী সাংসদ মুকুল রায় যখন দলে ছিলেন, তখন তাঁকেই বলা হতো তিনিই দলের দ্বিতীয় নেতা। মমতার পর তাঁর স্থান। কার্যত, দল কিন্তু সেভাবে কোথাও এ কথা বলেনি। মানুষের মুখে মুখে আর সংবাদমাধ্যমের ভাষায় মুকুল রায়কে দেওয়া হয়েছিল মমতার পরের স্থান।
কিন্তু মুকুল রায় চলে যাওয়ার পর আর সেভাবে মানুষের মুখে বা দলের মধ্যে উচ্চারিত হয়নি মমতার পর দলের দ্বিতীয় নেতা কে? কারণও ছিল। যে দলের একচ্ছত্র নেত্রী মমতা, সেখানে কেনইবা আসে দ্বিতীয় নেতার নাম? তাই তো তৃণমূলের কেউ আর উচ্চারণ করেনি কার স্থান মমতার পর?
কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল শুক্রবার হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকে ছাত্র-যুব সম্মেলনে মমতা জানিয়ে দিলেন, ‘আমার পরে অভিষেক-শুভেন্দুরা আরও ৫০ বছরের প্রজন্ম তৈরি করবেন।’
এ কথা দ্বারা মমতা কী বোঝাতে চেয়েছেন? দলের নেতৃত্বে তাঁর পরই রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আর সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতার ভাইয়ের ছেলে। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মমতার রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তিনি এখন মমতার কাছের মানুষ। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা ছিলেন তিনি।
তাই দলকে রক্ষা ও শক্তিশালী করতে মমতা এবার এই দুই যোদ্ধার হাতে তুলে দিতে চাইছেন দলের হাল। অথচ যুব তৃণমূল কংগ্রেসের এ সময় শীর্ষে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মাঝে অবশ্য শুভেন্দুর প্রতি মমতার সম্পর্ক একটু ভাটা পড়ে। আর তখনই মমতা সেই ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে অভিষেককে যুব তৃণমূল কংগ্রেসর সভাপতির আসনে বসান। তখনই রাজ্যব্যাপী রাজনৈতিক মহলে এই গুঞ্জন শুরু হয়, মমতা তার দলের পতাকা ধরে রাখার জন্য নিজের ভাইয়ের ছেলে অভিষেককে এই পদে বসিয়েছেন। শুধু কি তা-ই, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনোনয়ন দিয়ে জিতিয়ে আনেন। অন্যদিকে, অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আসন থেকে জিতিয়ে আনেন শুভেন্দু অধিকারীকে। তবু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে শুভেন্দুকে সরিয়ে অভিষেককে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের শীর্ষ আসনে বসানোর পর কিন্তু শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্কটা অত গভীর ছিল না। ভেতরে ছিল একটা ঠান্ডা লড়াইও।
এখন অবশ্য সেই লড়াই নেই। দুজনে কাছাকাছি এসেছেন। পাশাপাশি বসছেন। আর এরপরেই গতকাল ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে ছাত্র-যুব সম্মেলনে মমতা জানিয়ে দিলেন, দলের হাল ধরবেন অভিষেক-শুভেন্দু। আগামী ৫০ বছর ধরে এই হাল ধরে তৈরি করবেন পরবর্তী প্রজন্ম।
যদিও মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন শুভেন্দুকে। তাই একই মঞ্চে উপস্থিত থাকা অভিষেক-শুভেন্দুকে নতুন বার্তা দিলেন মমতা। এই সভায় অবশ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলতে দ্বিধা করেননি যে দলের মধ্যে এখনো একচ্ছত্র নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনই তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘আমাদের দলে এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর বলে কিছু নেই। সবটাই দলনেত্রী। তবে এদিন শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু তাঁর বক্তব্যে অভিষেককে অভিনন্দন জানানো ছাড়া আর কিছুই বলেননি। তবু মমতা যেভাবে অভিষেক-শুভেন্দুকে দলের আগামীর মুখ বলে মন্তব্য করেছেন, তা এখন রাজনৈতিক মহলে নতুন করে নজর কেড়েছে।