বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়ক বলতে বাঙালি একজনকেই বোঝে। তিনি উত্তম কুমার। স্টাইল, লুক, অভিনয়ে এমন সময়ে পর্দায় আসেন তিনি, সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারতবর্ষ তাকে লুফে নেয় রীতিমতো। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ অবধি যার অধিকাংশ ছবি ফ্লপ, যাকে ডাকা হতো ফ্লপ মাস্টার নামে, ক্রমান্বয়ে হয়ে ওঠেন মহানায়ক।
১৯২৬ সালে জন্ম, অভাবের সংসারে কলকাতার পোর্ট ট্রাস্টে কেরানির চাকরি করেন। তখন থেকে থিয়েটারে আসা যাওয়া। অভিনয় দেখে ফিল্মপাড়ার বাবুরা ডাক দেন। কিন্তু ভাগ্যের শিঁকে ছেড়ে না। ১৯৫৩ তে করলেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ব্যস, আর পিছু ফিরতে হয়নি।
সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় উত্তম কুমারের ‘নায়ক’ সিনেমা দেখে তৎকালীন বিখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলর রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবি দুটের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও তাকে কোনোভাবেই মাপা যাবে না এসবের মাপকাঠিতে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটা অঘোষিত লড়াই ছিল তার। কিন্তু, দু’জন জুটি বেঁধে বাঙালি দর্শককে উপহার দেন নয়টি চলচ্চিত্র। কথা প্রসঙ্গে সৌমিত্র একবার উত্তম কুমারকে বলেন, আমরা বুড়োর রোল করলে তবেই না ভালো বুড়োদের পাবে দর্শক।
উত্তম কুমারের আর বুড়ো হয়ে ওঠা হয়নি। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার শুটিংয়ে স্ট্রোক করলে নেওয়া হয় কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে। প্রাণান্ত চেষ্টার পরেও ডাক্তাররা প্রিয় মহানায়ককে বাঁচাতে ব্যর্থ। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ৫৩ বছর বয়সে নামে নায়কের জীবন নামক সিনেমার মহা পর্দা।