মিটিং শব্দটির সাথে যেমন অফিস শব্দটি চলে আসে, ঠিক তেমনি ছাত্র জীবনেও বিভিন্ন মিটিং এখন নিত্য দিনের ব্যাপার। তাইতো আজকের লেখায় থাকছে মিটিংকে সার্থক করার ৪ টিপস!
একটি মিটিং কে সার্থক করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে হবে।
১। মিটিং এর প্রস্তুতি
মিটিং শুরু করার আগে মিটিং এর জন্য পরিপুর্ণ প্রস্তুতি দরকার। খুবই সহজ কিছু কাজের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। প্রথমে আপনাকে মিটিং এর উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে। মিটিংটা কেন দরকার? মিটিং হলে আপনার কাজে কি ধরনের সুবিধা হবে এটা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর মিটিং এ কারা অংশ নিবে তা ঠিক করতে হবে। মিটিং এর জন্য সকল ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। যেমনঃ রুম ভাড়া করা, বসার ব্যবস্থা রাখা।
মিটিং এ যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, সেগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজাতে হবে। মিটিং এর সময় নির্ধারণ ও কতক্ষণ মিটিং হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
মিটিং পরিচালনার জন্য লোকবল নিয়োগ করতে হবে। মিটিং পরিচালনার সময় নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে জনবল নিযুক্ত থাকবে।
(i) মিটিং এ একজন লিডার থাকবেন। লিডার মিটিং শুরুর সময় মিটিং সম্পর্কে একটা ধারণা দিবেন উপস্থিত সদস্যদের।
(ii)একজন ফেসিলিটেটর (facilitator) থাকবেন যিনি মিটিং কিভাবে পরিচালিত হবে, কার পরে কে কথা বলবেন, সবাই কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন কিনা এসব বিষয় খেয়াল রাখবেন।
(iii) একজন মিটিং এর মিনিটস নিবেন। যিনি মিটিং মিনিটস নেন তাকে Scribe বলে। একটা মিটিং চলাকালে যেসকল ঘটনাগুলো ঘটে বা যেসকল তথ্যের আদান প্রদান হয়, সেসকল তথ্যের লিখিত রেকর্ড বা সংকলনই হল মিটিং মিনিটস।
(iv)একজন টাইমকিপার থাকবেন। মিটিং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য টাইমকিপারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
২। কিভাবে মিটিং পরিচালনা করবেন
মিটিং এর শুরুতেই মিটিং এর নিয়মগুলো বলে দিতে হবে। যেমনঃ মোবাইল বন্ধ রাখা, কতক্ষণ মিটিং চলবে ইত্যাদি। মিটিং সার্থক করতে হলে নিম্লিখিত নিয়ম মেনে চলতে হবে
(i) মিটিং এ কি কি বিষয়ে কথা হবে তা মিটিং শুরুর আগেই লিস্ট করে রাখতে হবে এবং মিটিং এ ওটা অনুসরন করতে হবে।
(ii)মিটিং যেই বিষয়ে সেই বিষয়ে ফোকাস রাখতে হবে। অনেক সময় মিটিং বহিঃর্ভূত বিষয় আমরা খেয়ালে বা বেখেয়ালে ঢুকিয়ে ফেলি। এটা করা যাবে না। ফেসিলিটেটরকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
(iii)সবাই যেন মিটিং এ কথা বলতে পারে যেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(iv)ভার্চুয়াল প্রতিবন্ধকতা যেমন ধীর গতির ইন্টারনেট, উপযুক্ত ডিভাইসের ঘাটতি ইত্যাদি যেন সৃষ্টি না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। যদি সমস্যা তৈরি হয় তাহলে কীভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে তা ঠিক করে রাখতে হবে।
৩। মিটিং এর সমস্যা সমাধান
একটা মিটিং করতে গিয়ে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত ৮ টি কমন সমস্যা পাওয়া গেছে। এগুলো হল
(i) কিছু মানুষ মিটিং শুরুর পরে আসে ও শেষ হবার আগেই চলে যায়।
(ii) কিছু মানুষ সর্বদা মিটিং এ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অন্যদেরকে সুযোগ না দিয়ে নিজেই কথা বলতে চায়।
(iii) অনেকে একই কথা বারবার বলে।
(iv) অনেক সময় একটা জায়গায় গিয়ে আটকিয়ে যায়। কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
(v) অনেকে মিটিং এ চুপ থাকে। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম কথা বলে। মিটিং এ সন্তোষজনক অবদান থাকে না।
(vi) অনেকে মিটিং কে পাশ কাটিয়ে চলে। ভাব এমন থাকে যে মিটিং এ আসতে না পারলেই ভালো।
(vii) মিটিং এ অনেক সময় ঝগড়া, দ্বন্দ সৃষ্টি হতে পারে।
(viii) অনেক সময় মিটিং এ হট্টগোল ও হৈচৈ সৃষ্টি হয় এবং মিটিং পুরোপুরি বাধাগ্রস্থ হয়। এ অবস্থায় ঐ মিটিং থেকে কোন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত আসে না।
এসব সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
৪। মিটিং শেষ করা
এ পর্যায়ে এসে নিম্নোক্ত কাজ করতে হবে।
(i)মিটিং এ কি কি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অল্পকথায় গুছিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
(ii) উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা সম্পর্কে আলোকপাত করতে হবে।
(iii)পরবর্তী মিটিং এর সময় নির্ধারণ করতে হবে।
(iv) মিটিং ফিডব্যক গ্রহণ করা।
(v) সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করতে হবে।
মিটিং শেষ হবার পর মিটিং সার্থক হয়েছে কিনা বুঝার জন্য নিম্নোলিখিত প্রশ্নগুলি নিজেকে করবেন
(i) যাদের আসার কথা ছিল তারা এসেছিল কি?
(ii) অধিকাংশ মানুষ মিটিং এ ভূমিকা রাখতে পেরেছিল কি?
(iii) যাদের উপর মিটিং পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তারা ঠিকভাবে মিটিং পরিচালনা করতে পেরেছে কি?
(iv) মিটিং শেষে সবার কাছ থেকে ফিডব্যাক নেওয়া হয়েছে কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হা হয় তাহলে আপনার মিটিং সার্থক।