শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শেষবারের মতো গ্রামছাড়া হয়েছেন যারা, তাদের সঙ্গে সাক্ষাতকারে জানা যায়, দিনের বেলা ডেকে বাড়িতে থাকতে বলে সবাইকে। আর কোনও সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়।এরপর গভীর রাতে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ও গুলি ছুড়ে মানুষ হত্যা করে তারা। রাখাইনের প্রতিটি গ্রাম নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গামুক্ত করতে এই নয়া কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
পালিয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা এই বিপন্ন মানুষেরা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকারচেয়ারম্যানদের ডেকে নিয়ে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলে। এরপর গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। আগুনে পুড়তে থাকা বাড়ি থেকে বের হয়ে রোহিঙ্গারা যখন অন্ধকারে ছোটাছুটি করেন, তখন তারা গুলি ছুড়ে হত্যা করে।
গত শনিবার সকাল ১১ টায় টেকনাফের লম্বাবিল থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন জাফর আলম (৪০)। তার বাবার নাম জাকির হোসেন। জাফর আলম মংডুর মরিকং এলাকার চেয়ারম্যান। টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় বসে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে এলাকার চেয়ারম্যান। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)সঙ্গে আমার প্রতিদিন কথা হতো। আমার মোবাইল নম্বর তাদের কাছে ছিল। তারা আমাকে ফোন দিয়ে ডাকতো। আমি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতাম। যেকোনও বিষয়ে তাদের নির্দেশনা থাকলে আমাকে দিয়ে তা এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতো। আমি সেই অনুযায়ী সবাইকে চলাফেরা করতে বলতাম। প্রতিমাসের ৮ ও ১৬ তারিখ প্রতিটি এলাকার চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মংডুতে তারা বৈঠক করতো।
জাফর আলম বলেন, ‘‘গত ৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ বিজিপি’র বড় অফিসার আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমাকে বলে, ‘আর কোনও সমস্যা নেই। এখন তোমরা সবাই বাড়িতে থাকো। আর কোনও ঝামেলা হবে না। ঝামেলা হলে হট লাইন ৫৫২ অথবা আমার মোবাইল নম্বরে ফোন দেবা। তোমরা কেউ বাংলাদেশে যাবা না।’ রাত ৯টা পর্যন্ত আমার সঙ্গে তার কথা হয়। এসময় মরিকং এলাকায় যে বিজিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করেন, তিনিও সঙ্গে ছিলেন। কথা বলে আমি রাত ৯ টার দিকে বাড়িতে আসি। এরপর রাত ১২টার দিকে শুনি, পাশের গ্রামে আগুন দিয়েছে। তখন আমরা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে প্রতিবছর প্রতিটি ঘরের সদস্যদের গণনা করা হয়। ছবি তোলা হয়। পরের বছর সেই ছবির সঙ্গে বর্তমান বছরের সদস্যদের মেলানো হয়। ওই সময় কোনও বাড়তি সদস্য দেখলেই তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। এমনকি গণনার সময় কেউ ঘরের বাইরে থাকলে, তাদেরও খুঁজে বের করে আনতে হয়। তা না হলে পুরো পরিবারকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের (সেনাবাহিনী) সন্দেহ, ছেলেরা বড় হলেই সন্ত্রাসী হবে।