সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ার আফরিন অঞ্চল থেকে তুর্কি বাহিনীকে হটিয়ে দিতে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছেন ওয়াইপিজির যোদ্ধারা। এরপরও অভিযান থেকে পিছু হটবে না তারা।
তুরস্ক দেশটির স্বাধীন কুর্দিস্থানের দাবিতে সংগ্রামরত কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে মনে করে। আর পিকেকের বর্ধিত অংশ বলে মনে করা হয় ওয়াইপিজিকে। তবে স্বাধীনতাকামী কুর্দিদের সমর্থনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সিরিয়ায় কুর্দিদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঠনের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরীয় অঞ্চল আফরিনে ওয়াইপিজি কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর পর থেকে সেখানে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার বেসামরিক লোক পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার মানবাধিকারকর্মীরা। তবে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের খবর নাকচ করে দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু।
তুরস্কের অভিযান নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত সোমবার এক বিশেষ আলোচনার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে তুরস্কের অভিযানের ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আলোচনা শুরু পর তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, ‘সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়ায় পিকেকের একটি রাষ্ট্রের কাঠামোর মতো কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করা মেনে নেব না।’
এর আগে আফরিনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা অভিযান থেকে পিছু হটব না। আমরা আমাদের রাশিয়ার বন্ধুদের বিষয়টি বলেছি। এ ব্যাপারে আমরা সম্মতিতেও পৌঁছেছি।’
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার আফরিনের শানকাল, কোরনে, বালি ও আদাহ মানলির পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চল কিটা, কোরডো ও বিবনো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তুরস্কের সেনারা। তবে তুরস্কের এমন দাবি অস্বীকার করে ওয়াইপিজি বলেছে, তারা তুরস্কের সীমান্তে পাল্টা রকেট হামলা চালিয়েছে।
‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ নামের তুরস্কের এই অভিযানের অংশ হিসেবে রোববার তুরস্কের স্থল বাহিনী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করে। তাদের সঙ্গে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) বিদ্রোহীরাও যোগ দেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, সিরিয়ার ভেতরে ৩০ কিলোমিটারজুড়ে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভিযানটি চালানো হচ্ছে।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইএস সদস্যরা যেন ফিরে আসতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াইপিজির নেতৃত্বে সিরিয়ায় বিশেষ ওই সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঠনের কথা বলে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় তুরস্কের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।