যুদ্ধাংদেহী মনোভাব থেকে পিছিয়ে আসছে না ভারত কিংবা চীন! দুই পরাশক্তি কি যুদ্ধের দিকেই এগোচ্ছে তবে?

0

শিলিগুড়ি করিডোরের কিছু দূরে ই চীনা ও ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাদের গোলযোগপূর্ণ সীমানার নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছে। যুদ্ধের আশংকায় নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার আরো সমৃদ্ব করছে দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন। এ দেখে এটাই স্পষ্ট যে দুই দেশ ই একটি অবিসম্ভাবী যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া চীন

চীন ও ভারত দু দেশই এ বিরোধকে হিমালয়ে প্রাধান্য বিস্তারের খেলা হিসেবেই দেখছে। দু’দেশের মধ্যে বহুকাল ধরেই গোলযোগ চলে আছে যার সর্বশেষ প্রকাশ ঘটে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে যখন কোনো দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হয়নি।

এখন এমন একটি চীনা নির্মাণ প্রকল্প সড়ক নির্মাণ করতে চাইছে যা দিয়ে ৪০ টন মালবাহী যান চলাচল করতে পারবে। এ সড়কটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ চলাচল পথের(চিকেন নেক) প্রতি হুমকি এবং ভারতকে তার মিত্র ভুটান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দিবে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়, এ নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে চীন যখন বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে তখন ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের পরিখা সজ্জিত করছে।

পোষ্ট আরো বলে, নতুন বাংকার নির্মাণ করা হচ্ছে, আগাম চীনা হামলা ঠেকাতে মাইন পাতা হচ্ছে, কৌশলগত স্থানে মেশিন গান বসানো হচ্ছে এবং সৈন্যরা দিনে কমপক্ষে দু’বার যুদ্ধ মহড়া দিচ্ছে।

ভারত ও ভুটান উভয়েই এশিয়া জুড়ে বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প ভিত্তিক ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে এবং চীন এখন দু’ দেশের দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে চায় তাদের অবস্থান দেখে তাই ধারণা।

ভারতের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান হিসেবে অবসরে যাওয়ার আগে উত্তরপূর্বাঞ্চলে একটি ডিভিশনের কমান্ডার থাকা মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, তারা ভুটানকে দেখানোর চেষ্টা করছে যে কে হিমালয়ে যুদ্ধ ডেকে আনে। তিনি আরো বলেন “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা ভুটানের আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা করতে সক্ষম”। তিনি বলেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে আমরা ভুটানকে রক্ষা করতে পারি। আর সে কারণেই আমরা চুম্বি উপত্যকায় বর্তমান ভূখন্ড ও কৌশলগত সুবিধা না হারাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
৯,৮০০ ফুট উচ্চতায় ভারতীয় সৈন্যরা অবস্থান নিয়ে বসে আছে এবং নিচে চীনাদের দিকে নজর রাখছে যারা রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
সিং বলেন, চীনাদেরকে থামানো আমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে তারা শিলিগুড়ি করিডোরের দিকে এগোবে এবং আমাদের উত্তরপূর্ব অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

এদিকে সংখ্যাগত দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতর সেনাবাহিনীর অধিকারী চীন ঘোষণা করেছে যে তারা যে কোনো মূল্যে সীমান্ত রক্ষা করবে এবং তাদের দৃঢ়সংকল্পের ব্যাপারে ভারতের কোনো ভুল ধারণা করা উচিত নয়।

চীন যেখানে তার এ পদক্ষেপকে প্রাধান্য বিস্তার এবং প্রধান নির্মাণ প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে তখন ভারত একে দেখছে তার জাতীয় অখন্ডতার প্রতি হুমকি হিসেবে। তবে কোনো পক্ষই মারাত্মক যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে আগ্রহী নয় এখন পর্যন্ত।
উইলসনস সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মাইকো কুগেলম্যান এ যুদ্ধের ব্যাপারে দি সাইফার ব্রিফকে বলেন, “চীন ও ভারতের মধ্যকার এক বড় যুদ্ধ ব্যাপক অর্থনৈতিক কূটনীতি থেকে অর্জিত তাদের সকল সাফল্য নস্যাৎ করে দিতে এবং তা দু’ দেশের স্বার্থের বিরাট ক্ষতি করতে পারে”।

আশার কথা যে প্রায় তিনশ’ কোটি জনসংখ্যা ও পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দু’টি দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার আগে আসন্ন ব্রিকস ( ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) সম্মেলনে মুখরক্ষার জন্য বিরোধ অবসানে উভয়েই একটি পথ খুঁজতে পারে বলে ধারণা করা হয়।আর এটাকেই যুদ্ধ থেকে সরে আসার শেষ পথ হিসেবে দেখছে সবাই।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে