শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দফতর থেকে এ কথা জানানো হয়, “সব জাতি-গোষ্ঠীর নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করে আফগানিস্তানে একটি ঐকমত্যের সরকার গঠন করবে তালেবান। কেয়ারটেকার ধাঁচের এ সরকারে সব পক্ষের অংশগ্রহণ থাকবে।”
মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই নতুন সরকার গঠন সম্পন্ন করতে চায় তালেবান। সেই লক্ষ্যেই প্রাথমিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমানে উপপ্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার, তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ছেলে ও অন্যতম উপপ্রধান মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা ও উপপ্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। এর মধ্যে প্রথম দুজন গত সপ্তাহে রাজধানী কাবুলে ফিরে আসেন।
তালেবান সূত্রগুলো বলেছে, নতুন সরকার নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে অন্তত এক ডজন নাম বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারে ‘আমিরুল মুমিনিন (বিশ্বাসীদের নেতা)’ বলে একটি পদ তৈরি করা হবে যিনি ‘ইসলামিক ইমিরেট অব আফগানিস্তান’র প্রধান হিসাবে নেতৃত্ব দেবেন। পদটিকে প্রেসিডেন্টের বিপরীত ভার্সন।
আফগানিস্তানে পরবর্তী সরকারের আমির পদে কে বসবেন, সে বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেননি তালেবান নেতারা। তবে সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার ওই পদে বসতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
সে ক্ষেত্রে সরাসরি সরকারি পদে না বসে ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনির মতো ‘সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা’র কাজ করবেন বর্তমান তালেবান প্রধান হায়বাতুল্লা আখুন্দজাদা। মূল কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে থাকছে বিচার, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তথা গোয়েন্দা বিভাগ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, অর্থ, গণপূর্ত, তথ্য ও কাবুলবিষয়ক বিশেষ বিভাগ।
সূত্রগুলোর মতে, মন্ত্রণালয়গুলোতে তাজিক, উজবেকদের মতো জাতি-গোষ্ঠীগুলোর নেতাসহ নতুন নতুন মুখ আনতে চায় তালেবান। সেই লক্ষ্যেই গত কয়েকদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এর নেতারা। ইতোমধ্যে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্তত পাঁচ মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মোল্লা গুল আগা ইসহাকজাইকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী। মোল্লা ইব্রাহিম সদরকে ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হেমাত আখুন্দজাদাকে দেওয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব।
এছাড়া গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন নাজিবুল্লাহ। কাবুল গভর্নর হিসাবে মোল্লা শিরিন ও রাজধানী কাবুলের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হামদুল্লাহ নোমানিকে।এই লক্ষ্যগুলো সামনে রেখেই গত সপ্তাহে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয় ‘লয়া জিরগা’ বা গ্রেট কাউন্সিল। যাতে অংশ নেন সংগঠনের প্রায় ৮০০ খ্যাতনামা আলেম বা পণ্ডিত।
কাউন্সিলে ভবিষ্যৎ সরকারের রূপরেখা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার তথা নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। এই কাজ অর্পণ করা হয় সংগঠনের তিন উপপ্রধানের দুজন তথা মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব ও সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে। এই দুই নেতার একজন নতুন সরকারের প্রধান হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।