ফিফার নিয়ম অনুযায়ী রক্তাক্ত খেলোয়াড়কে মাঠে খেলতে দেওয়া হয় না। তুর্কি রেফারি মাচেরানোর কাছে এসে কথাটা বলার সাহসই হয়তো পাননি। মাচেরানো যেভাবে পাথরমুখ করে লড়ে যাচ্ছিলেন, আজ শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও লড়ে যেতেন। থামানো যেত না তাঁকে!
দলের নেতা আসলে মাচেরানোই। লিওনেল মেসি মুখচোরা। সেই স্বভাব তো আর বদলানো যাবে না। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে বানিয়েছেনই শুধু পায়ে ফুটবল দিয়ে কথার ফুল ফোটানোর জন্য। তবু মাচেরানোর কাছ থেকে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী মেসিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর মাচেরানো নিজে এগিয়ে এসে তখনকার বার্সেলোনা সতীর্থের কাঁধে তুলে দিয়েছেন এই বাহুবন্ধনী। আর্জেন্টিনার বাহুবন্ধনী তো ১০ নম্বরেরই প্রাপ্য।
যতই অস্বীকার করা হোক, কোচের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ ঘটে গেছে এই দলে। মাচেরানো কী করেছেন। গত কয়েকটা দিন দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে গেছেন। কখনো কোচের সঙ্গে বসছেন। কখনো কথা বলছেন দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। আজকের ম্যাচের নেপথ্য কোচ নাকি তিনিই। না হলে সাম্পাওলিকে ৪-৪-২ ছকের মতো সরল সমীকরণে একাদশ সাজাতে রাজি করানো প্রায় অসম্ভব ছিল।
তাঁর কারণে আর্জেন্টিনা ভুগেছে, এও সত্যি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দুটি গোলে ভূমিকা আছে মাচেরানোর গতি হারিয়ে ফেলা। আজও দলকে ডোবাতে বসেছিলেন। তাঁর কারণেই পেনাল্টি পেয়েছে নাইজেরিয়া। যদিও ফাউলটা মেনে নিতে পারছিলেন না কিছুতেই। পারছিলেন না, ওই এক পেনাল্টি গোলের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার রূঢ় বাস্তবতা দুয়ারে যে উঁকি দিয়েছে, তাও মানতে।
এ কারণে এমন ক্ষত নিয়েও খেলে যাচ্ছিলেন। পেনাল্টির ওই ভুলটুকু আর প্রথমার্ধে তাঁর পা থেকে বার তিনের বল কেড়ে নেওয়া বাদে কী করেননি আজ। খেলেননি কোথায়! ৩৫-এ পা দিয়েও কী জানটাই না লড়িয়ে দিলেন! খেলার মাঝবিরতিতে টানেলে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে, আর ঝাঁজালো ভাষণ দিচ্ছেন মেসি…এই অবিশ্বাস্য দৃশ্যের জন্মদাতাও হয়তো তিনি। যখন মেসির সঙ্গে বেরিয়ে আসছিলেন, কী যেন বললেন ডেকে। হয়তো মনে করিয়ে দিলেন, ‘লিও, যে গোলটা করেছিস, এরপর দলকে কিছু বল। তুই-ই পারবি!’