রাজীবের মৃত্যুতে মর্মাহত হাইকোর্ট, ক্ষতিপূরণের আদেশ আগামীকাল মঙ্গলবার

0
হাত হারানো রাজিব

রাজধানীতে দুই বাসের চাপে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে আদেশ দেবেন উচ্চ আদালত। এজন্য মঙ্গলবার রাজীবের খালা জাহানারা পারভীনকে হাইকোর্টে উপস্থিত হতে হবে।

সোমবার আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘রাজীবের মামার কাছে শুনেছি তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। শুধু একটু জমি আছে, তবে ঘর নাই। ১৪ ও ১২ বছরের দুই ভাই আছে। কিন্তু বাবা মা নাই। রাজীবই তাদের দেখাশুনা করতো।’ এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের কথা বলেন।

ব্যারিস্টার কাজল আদালতকে বলেন, ‘রুল জারির পর বিআরটিসির আইনজীবী মনিরুজ্জামান আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিআরসিটি ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। এছাড়া স্বজন পরিবহনের একজন পরিচালকও আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারাও ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি রাজীবের খালা আমাকে ফোনেও জানিয়েছেন। তার চিকিৎসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে খরচ দিয়েছে সরকার।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘রাজীবের মৃত্যুতে পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আমরা মর্মাহত। টাকা দিয়ে তো জীবনের মূল্য হয় না। কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বললেওতো আর জীবন ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে পরিবারের বিষয়টি দেখতে হবে।’

আইনজীবী বলেন, এই ঘটনার আইনের মধ্য দিয়ে বিচার হতে হবে। তখন আদালত বলেন, মিশুক মুনীরের মামলাটা দেখতে পারেন। এ সময় রুহুল কুদ্দুস পাইপে পড়ে নিহতের ঘটনায় শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশের কথা আদালতে অবহিত করলে এ সময় আদালত বলেন, সেটা তো ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। এখন দেখতে হবে যদি কেউ ইনটেনশনালি মার্ডার করে তখন তো ৩০২ তে মামলা হওয়া অমূলক নয়।

আইনজীবী বলেন, আইন কমিশন চেয়ারম্যান প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ট্রাফিক আইনের সংশোধন চেয়েছেন, অর্থাৎ এ ঘটনা সবাইকে স্পর্শ করেছে।

আদালত রাজীবের দুই ভাইয়ের বয়স জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, একজনের ১৪ ও অপরজনের বয়স ১২ বছর। এতে আদালত বলেন, ‘আমরা দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের আদেশ দেব। কিন্তু কার অনুকূলে দেব?’

রুহুল কুদ্দুস বলেন, তাদের মামা ও খালা আছে। এ পর্যায়ে আদালত রাজীবের খালাকে মঙ্গলবার হাজির হয়ে একটি আবেদন করতে বলেন।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় দুই বাসের চাপে পড়ে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক স্বজন পরিবহন এবং বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা প্রদান, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব। এরপর রোববার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজল।