আন্তর্জাতিক ফুটবলে এতদিন সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন আলি দাইয়ি। দেশের হয়ে ১০৯ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসনে আসীন ইরানের সাবেক তারকা। তবে সিংহাসনটি বোধ হয় শিগগিরই ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাঁকে। তবে তিনি যে মানুষটির কাছে সিংহাসন হারাতে চলেছেন তিনি যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! এমন কারও কাছে নাকি হার মানতেও আনন্দ।
কয়েকমাস আগে থেকেই সিআর সেভেন দাইয়ির কাঁধে গরম নিশ্বাস ফেলছেন। ২০২০ ইউরোতে ইতোমধ্যে ২ ম্যাচে ১টি এসিস্ট ও ৩ গোল করে ফেলেছেন পর্তুগিজ স্ট্রাইকার, এখন পর্যন্ত টূর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এখন আলী দাইয়িকে টপকে যেতে তার দরকার আর মাত্র ৩টি গোল।
তবে কি আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ইউরোতেই করে ফেলবেন রোনালদো? সিআর সেভেন এর পক্ষে এটি করা মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।
ইরানের অন্যতম সেরা তারকা আলী দাইয়ি। ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইরানের হয়ে ১৪৯ ম্যাচে ১০৯ গোল করেছেন। একটা সময় তো মনে করা হতো ইরানি তারকার গড়া এ রেকর্ড হয়তো কখনোই ভাঙবে না। কিন্তু রোনালদো এরই মধ্যে ১৭৭ ম্যাচে ১০৭টি গোল করে ফেলেছেন। তাই যেকোনো সময়ই ভেঙে যেতে পারে বর্তমান রেকর্ড। হয়তো এ ইউরোতেই! কিন্তু রোনালদোর কাছে নিজের গৌরবের কীর্তি হারিয়ে আলী দাইয়ি বরং রোমাঞ্চিত, ‘রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। রোনালদো হলো এমন একজন ফুটবলার যার সত্যিই এই রেকর্ডটি ভাঙার সামর্থ্য রয়েছে। ওর সামর্থ্যের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। ক্রিশ্চিয়ানো একজন ফুটবলার যার প্রশংসা করার প্রয়োজন নেই।’
তার সময়ে এশিয়ান ফুটবলে অন্য খেলোয়ারদের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন দাইয়ি। তিনি ইরানকে মহাদেশীয় পর্যায় থেকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়া ইউরোপে খেলা এশিয়ান ফুটবলারদের অন্যতম পথিকৃৎ ও এই সাবেক স্ট্রাইকার।
অনেক এশিয়ান প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল তৎকালীন ইরান। বিশ্বকাপ খেলেছে ১৯৯৮ ও ২০০৬ সালে। সেই জয়গুলোর অন্যতম কারিগর ছিলেন দাইয়ি। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইরানের ৭-০ গোলে জয়ের ম্যাচে একাই করেন ৫ গোল। ক্যারিয়ারজুড়ে প্রতিপক্ষের জালে ৪ বার করে ৪ গোল করেছেন। যার একটি ২০০১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয় পর্বের ম্যাচে গুয়ামকে ১৯-০ ব্যবধানে হারানোর সেই ম্যাচ।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ইরানের বিখ্যাত জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত ছিলেন দাইয়ি। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার পর ৩৭ বছর বয়সে বুট জোড়া তুলে রাখেন দাইয়ি।
ইরানের প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন ইউরোপে। খেলেছেন আর্মেনিয়া বিলেফেল্ড, বায়ার্ন মিউনিখ ও হার্থা বার্লিনে। ফুটবল ছাড়ার পর কোচিংয়ে গিয়েও আলোচনায় ছিলেন সোজাসাপ্টা কথাবার্তার জন্য। বর্তমানে ৫২ বছর বয়সী দাইয়ি ইরানের জীবন্ত কিংবদন্তি।
খেলার বাইরেও নানাভাবে সফল সাবেক স্ট্রাইকার। বর্তমানে ক্রীড়া সামগ্রীর ব্যবসা করছেন তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করা দাইয়ি।