সিদ্দিকুরকে চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর

0

“পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে” চোখ হারাতে বসা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে নিজের একটি চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর কবীর নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
সিদ্দিকুর

গত ১ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ ইচ্ছার কথা জানান জাহাঙ্গীর। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘দৃষ্টির জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ। আমার বিনীত নিবেদন। দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুরের জন্য আমার একটি চোখ দান করতে চাই। তবুও আলোর মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে অন্ধত্ব বরণ করার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক একটি স্বপ্নবাজ তরুণ। সরকার এবং তার পরিবার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি আমার একটি চোখ উৎসর্গ করতে চাই। সিদ্দিকুরের পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমার চোখের বার্তাটি তার কাছে পৌছে দেয়ার জন্য।’

এ ব্যাপারে জানতে জাহাঙ্গীর কবীর এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে চোখ। সবকিছু প্রসেসিং হলে আমি আমার একটি চোখ দান করব। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে এটা বলেছি”
তিনি আরো বলেন “পৃথিবীতে টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হল চোখ। চোখ ছাড়া একজন মানুষ মৃতপ্রায়। তার কোন মূল্যায়ন থাকে না। ব্যক্তিগত জীবনে সে স্বস্তি পায় না। আমি সেটা গভীরভাবে চিন্তা করলাম। যদি একটা চোখে সিদ্দিকুর দেখতে পায় তার বাকি জীবনটা একটা পথে থাকবে। যদি একেবারে না দেখে তাহলে জীবনের কোনো মানেই থাকবে না, বেঁচে থাকার কোনো মানেই থাকবে না-এটা অনুধাবন করেই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।”

জাহাঙ্গীর কবীরের সাথে আরো কথা বলে জানা যায় গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে। তার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। সাত ভাই-বোনের পরিবারের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন জাহাঙ্গীর।

চোখ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবরা বারণ করলেও তাদেরকে বুঝিয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “পরিবারকে আমি ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও আমি পরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আমার বন্ধু-বান্ধবরাও অনেকে বারণ করেছে। আমি তাদের বুঝিয়েছি যে, আমি এক চোখ দিয়েও চলতে পারব।’

জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘একচোখ দিয়ে দিলে আমার সমস্যা হবে না। গত দু’দিন থেকে একচোখে দেখার প্র্যাকটিস করছি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেয়ার আগে আমি তিন ঘন্টা এক চোখ বন্ধ করে শুধুমাত্র অন্য চোখ দিয়ে হেটেছি, কাজ করেছি। দেখেছিলাম, একচোখে মানুষ কতটুকু দেখে। যদিও একটু সমস্যা হয় তারপরেও আমি চলতে পারব, “সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে”

চোখ দানের বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্দিকুরের কয়েকজন বন্ধুকে অবগত করেছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে শেখ ফরিদ, সাঈদ ভাইসহ সিদ্দিকুরের কয়েকজন বন্ধুর সাথে কথা হয়েছে। তারা সিদ্দিকুর এবং তার মা’কে বিষয়টি জানিয়েছেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুরের বন্ধু আবু সাঈদ জানান “আজ সিদ্দিকুর ভাইয়ের অপারেশন হল। বিকেলে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে সরাসরি কথা হল। এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলা হবে। তবে আগে অপেক্ষা করবো সিদ্দিক ভাইয়ের চোখের সর্বশেষ কি ফলাফল আসে। এজন্য ৫-৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে।”

এদিকে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে সিদ্দিকুরের চোখের অপারেশন হয়েছে বলে জানা যায়। শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপাল এই অপারেশন করেন। সিদ্দিকুর মানসিকভাবে সুস্থ ও শক্ত আছেন ও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। সিদ্দিকুরের সঙ্গে রয়েছেন তার বড়ভাই নওয়াব আলী ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল আহসান মেনন।

সিদ্দিকুরের চোখের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ডা. জাহিদুল আহসান বলেন, চোখের আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই জেনেও চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেছেন। এক অথবা দুই শতাংশের মতো যতটুকু সম্ভাবনা আছে তা এখনই বলা যাবে না। এজন্য দুই থেকে চার দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে