সিদ্ধান্ত নিতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে

0
করোনা Corona

শরীফুল হাসান

ভারতে গত চারমাসের মধ্যে যেদিন সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত বাংলাদেশে সেদিন দেড়বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৬৩ জন। আক্রান্ত ১১ হাজার ৫২৫ জন যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পরিস্থিতি আসলে ভয়াবহ। তবে আমরা বেশিরভাগ মানুষই বোধহয় সেই ভয়াবহতা বুঝতে পারছি না।
আতঙ্কের বিষয় হলো, শুধু ঢাকা নয়, গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। বগুড়ায় ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২০ জন মারা গেছেন। সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। এক দিনে এটি শনাক্তের নতুন রেকর্ড। খুলনা ও চট্টগ্রামেও শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি। অনেক জেলায় অপেক্ষা করেও ওয়ার্ডে জায়গা হচ্ছে না সাধারণ রোগীদের। আবার অক্সিজেন দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকালই বলেছে, রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে সামনে অক্সিজেন নিয়ে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সামনে যে আরও ভয়ঙ্কর দিন আসবে সন্দেহ নেই। আমাদের প্রস্তুতি কী? আমাদের উপজেলা জেলা কিংবা বিভাগীয় হাসপাতালগুলোও কী প্রস্তুত? আমাদের জনগণেরই বা করনীয় কী?
অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ মানে আমাদের কাছে শুধু লকডাউন। কঠোর লকডাউন চলছে। আর সেই লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহনের চলাচল বেড়েছে বলে জানাচ্ছে গণমাধ্যম। এমনকি আগারগাঁও, বছিলা, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্নস্থানে যানজটও নাকি ছিল। একদিকে যেমন গাড়ি বেড়েছে অন্যদিকে গলিগুলোতে সবসময় আড্ডা লেগেই থাকছে।
এই যদি হয় লকডাউন তাহলে সামনে কী হবে? আর শুধু লকডাউন দিয়ে কখনোই সমাধান নয়। এ কারণেই গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেলের কথা লিখেছিলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা ছিল জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ। সেখানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সামাজিকভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ হয়েছে।
বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ৫০০টির মতো কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এসব কমিটি মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব মানা ও মানুষকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করতে কাজ করে। ফলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমতে শুরু করে। আমার কাছে মনে হয় এই মডেলই সমাধান। প্রত্যেকটা এলাকায় এমন কমিটি হতে পারে। স্কাউট, বিএনসিসিসহ স্বেচ্ছাসেবীদের নামানো যেতে পারে। তারা একদিকে সবাইকে সচেতন করবে, মাস্ক পরতে বলবে আরেকদিকে দিতে হবে গণহারে টিকা।
টিকা দেওয়ার জন্য বয়স ৪০ থেকে ৩৫ বছরে নামানো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে আমি এখনো মনে করি দেশের সব লোককে দ্রুত টিকার আওতায় আনা ছাড়া বিকল্প নেই। যে করেই হোক সেটা করতে হবে। প্রয়োজনে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেই টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোন এলাকার কোন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের লোক কবে কোথায় টিকা নেবে সেটা জানাতে হবে।
টিকার পাশাপাশি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতেই হবে। ঢাকার বাইরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। অক্সিজেন-আইসিইউ জরুরী। বিশেষ করে সামনে কোরবানি, ঈদ। আরও অনেক লোক ছুটবে। আমাদের বিপদের আরও বাকি।
আফসোস, আমরা অনেক সময় পেয়েছিলাম। অন্যদের দেখেও আমার শিখলাম না। যথাযথ প্রস্তুতি নিলাম না। ভারত থেকে করোনা এসে ছড়িয়ে পড়বে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল সেটাই হলো। স্বাস্থ্যসেবা তো পরের কথা, আমি মনে করি করোনা পরীক্ষাতেও আমরা এখনো যথেষ্ট পিছিয়ে। যেখানে প্রতিদিন লাখ পরীক্ষা করার কথা সেখানে এখনো পরীক্ষা ৩৬ হাজার। আমি মনে করি, আমাদের এখন অনেক বেশি পরিমানে এন্টিজেন টেস্ট করা দরকার। শহরে, গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র। একইভাবে প্রত্যেকটা এলাকায় কোভিড নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবী দল করা দরকার।
আমাদের নীতি নির্ধারক, সরকার, রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষ সবাইকে বুঝতে হবে, এবারের সংকটটা ভয়াবহ। আমার মনে হয় আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আগে চলুন আমরা ডাবল মাস্ক পরি। নিয়ম মানি। খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হই। সবাই সবার পাশে থাকি।মনে রাখবেন, আমরা যদি মাস্ক না পরি, টিকা না দেই, হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে না পারি তাহলে ভারতের মতো আমাদের দেশটাও মৃত্যুপুরিতে পরিনত হবে।
তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি আমরা সবাই নিয়ম মানলে, সরকার ও নীতি নির্ধারকরা যথাসময়ে যথা সিদ্ধান্ত নিতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো রাখুন। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।