সাংবাদিক মাইকেল ওলফের লেখা বইতে ব্যানন বলেন, ২০১৬-র জুনে হওয়া ওই বৈঠকে রাশিয়ানরা হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে বিধ্বংসী তথ্য দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার ও হোয়াইট হাউজের শুরুর দিনগুলোতে ট্রাম্পের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যাননের এমন উদ্ধৃতি মার্কিন গণমাধ্যমে হই চই ফেলে দেয়। এরপরই কট্টর ডান বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ব্যাননের কড়া সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের চাকরি হারানোর পর সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক বইয়ে ব্যানন নির্বাচনী প্রচারের সময় একদল রাশিয়ানের সঙ্গে ট্রাম্পপুত্র ডোনাল্ড জুনিয়রের বৈঠককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ বলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন রূঢ ভাষায় তার সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজিস্টের সমালোচনা করলেন, খবর বিবিসির
“আমার বা আমার কাজের সাথে ব্যাননের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ওকে যখন বরখাস্ত করা হল, কেবল চাকরিটাই গেল না ওর, মাথাটাও গেল,” বুধবার দেয়া বিবৃতিতে বলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের যে পর্যায়ে ব্যানন যুক্ত হয়েছেন, তার আগেই রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানোর কঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“এখন সে তার নিজের পথে আছে, স্টিভ শিখবে জয়ী হওয়া সহজ নয়, যতটা সহজ আমি দেখিয়েছি। এদেশের নাম না জানা অসংখ্য নারী-পুরুষ যে ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছিল, তাতে স্টিভের অবদান ছিল সামান্যই,” বলেন ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বার্তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যানন গত বছরের অগাস্টে প্রেসিডেন্টের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট পদ হারিয়েছিলেন। এরপর তিনি ফের ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্ট নিউজ এজেন্সির প্রধান হন।
ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই হোয়াইট হাউজের পদ হারিয়েছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ইঙ্গিত দিলেও, ব্যানন সেসময় বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে বাইরে থেকে সাহায্য করার পরিকল্পনা আছে তার।
হোয়াইট হাউজ ছাড়লেও ফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যাননের প্রায়ই নানান বিষয়ে কথা হত; আলাবামায় সিনেট নির্বাচনের দিন ১৩ ডিসেম্বরও দু’জনের মধ্যে ১৫ মিনিট ধরে কথা হয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে।
সেদিনের নির্বাচনে ব্যানন সমর্থিত রিপাবলিকান রয় মুর রক্ষণশীলদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসন থেকে পরাজিত হয়ে ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলেন।
বুধবার সাংবাদিক মাইকেল ওলফের লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ বইটি প্রকাশিত হলে ফের ট্রাম্প-ব্যানন সম্পর্কের কথা মার্কিন গণমাধ্যমে আলোচিত হয়।
ওই বইতেই ব্যানন ২০১৬-র জুনে রাশিয়ানদের সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের বৈঠককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ ও ‘দেশপ্রেমহীন’ অ্যাখ্যা দেন।
রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডোনাল্ড জুনিয়রের ওই বৈঠকে ট্রাম্পজামাতা ও উপদেষ্টা জারেড কুশনার এবং তখনকার প্রচার ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্টও উপস্থিত ছিলেন বলে গত বছর প্রকাশিত বেশকিছু ইমেইলে দেখা গেছে।
ব্যানন এ প্রসঙ্গে মাইকেল ওলফকে বলেন, রাশিয়ানদের সঙ্গে ওই বৈঠকের পরপরই এফবিআইএ-র উচিত ছিল প্রচার শিবিরের তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প শিবিরের সঙ্গে রুশ সংযোগ গত বছরের পুরোটা সময়জুড়েই আলোচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ও বিচার বিভাগেরও তদন্ত চলছে। ট্রাম্প অবশ্য শুরু থেকেই এ ধরণের কোনো সংযোগের কথা অস্বীকার করে আসছেন। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিনও।