দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রীকে হত্যা করার পর হিন্দি সিরিয়াল দেখে শেখা পদ্ধতিতে মাথা কেটে নদীতে ভাসিয়েদিয়েছেন ইব্রাহিম আলী বাবু (৩০) নামে এক পাষণ্ড। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ভাদুঘর এলাকায়। মাথাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুরুলিয়া নদী থেকে এক নারীর বস্তায় ভরা মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, মরদেহটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ভাদুঘর এলাকার ইব্রাহিম আলী বাবুর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের (২২)।
পরে ২৬ এপ্রিল বাবুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেন। বাবুর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) জিয়াউল হক বলেন, চার বছর আগে রমজান আলীর ছেলে ইব্রাহিম আলী বাবু ও একই জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে ইয়াসমিনের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে ঘর আলো করে এসেছে একটি কন্যা সন্তান। বিয়ের সময় তিন লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ইয়াসমিন দেনমোহরের টাকা বাড়াতে বাবুকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলছিল।
ঘটনার দিন রাতে বাবু ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ইয়াসমিন তাকে আবার ওই টাকার কথা বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াসমিনের গলায় ফল কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করেন বাবু। এতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলে ইয়াসমিন জীবন বাঁচাতে চিৎকার শুরু করেন। তখন বাবু নাক, কান চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে ইয়াসমিনকে হত্যা করেন।
বাবুর বরাত দিয়ে জিয়াউল আরো জানান, এরপর বাবু নিজেকে বাঁচাতে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে শেখা পদ্ধতিতে ইয়াসমিনের মরদেহ গুমের চেষ্টা করেন। সেখানে দেখানো মতো, বাবু মাথা কেটে একটি ব্যাগে রাখেন এবং দেহের বাকি অংশ বস্তায় ভরে রাখেন। ফজরের আজানের পর একটি অটোরিকশায় করে ইয়াসমিনের দেহের দুই অংশ কুরুলিয়া নদীর দুই স্থানে ফেলে দেন। এরপর তার শাশুড়িকে ফোন করে জানান, ইয়াসমিনকে তিনি তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাসে তুলে দিয়েছেন।
কিন্তু দিন শেষেও ইয়াসমিন বাবার বাড়ি না পৌঁছায় তার বাবা-মা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ২২ এপ্রিল পুলিশ কুরুলিয়া নদী থেকে এক তরুণীর মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করলে ইয়াসমিনের মা-বাবা গিয়ে সেটি তাদের মেয়ের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল কবির বলেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছি। চাঁদপুর থেকে সাত সদস্যের বিশেষ ডুবুরি দল এসেও মাথাটি উদ্ধার করতে পারেনি।