অবশেষে জাতীয় দলে ফিরলেন এনামুল হক বিজয়, আবুল হাসান রাজু ও মোহাম্মদ মিঠুন ও সানজামুল ইসলাম। দল থেকে বাদ পড়া এ চার ক্রিকেটার নতুন বছর শুরু করবেন টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। গতকাল আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। সর্বশেষ ব্যর্থতায় ভরা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন দাস, মুমিনুল হক সৌরভ, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ ও শফিউল ইসলামসহ ৫ ক্রিকেটার। এছাড়াও ইনজুরি থেকে ফিরলেও যথেষ্ট ফিট না থাকায় সুযোগ হয়নি প্রতিভাবান তরুণ ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। সহ-অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দলে নতুন মুখ হিসেবে স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু ও পেসার আবু জায়েদ রাহীর নাম শোনা গেলেও তাদের জায়গা হয়নি। তাই দলে ছিল না কোনো নতুন মুখের চমক। তবে তরুণ তারকা তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকারের বাদ পড়া ছিল দলের অন্যতম চমক। এ দু’জনের বাদ পড়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘সৌম্য আমাদের সব ফরমেটেই খেলেছে। ওর প্রতিভা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে ওর বর্তমান যে ফর্ম তা ধারাবাহিকতার মধ্যে নেই। তাই ওকে একটু ব্রেক দিয়েছি। আশা করি দ্রুতই ফর্মে ফিরে আসবে। তাসকিনকে বাদ দেয়ারও কারণ ফর্ম। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ভালো করেনি। আশা করি ঘরের ক্রিকেটে ভালো করে দলে ফিরবে। আর যারা দলে ফিরেছে তাদের ঘরের ক্রিকেটে ভালো করার কারণেই।’ ১৫ই জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে শুরু হবে ত্রিদেশীয় সিরিজ।
ওয়ানডে দলে রাখা হয়েছে টেস্টে নেতৃত্ব হারানো মুশফিকুর রহীম। তার থাকা না থাকা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকলেও দলের সেরা উইকেট কিপার ও ব্যাটসম্যান হিসেবে তার উপর আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা। তবে তার বিকল্প উইকেটকিপার হিসেবে দলে আছেন বিজয় ও মিঠুন। কিন্তু দলের ব্যাটিং শক্তি বাড়াতেই এ দু’জনকে দলে রাখা। প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘মুশফিক ওয়ানডেতে কিপিং করবে। সে আমাদের সেরা পছন্দ। বিজয় ও মিঠুন কিপিং করে। এছাড়া ওরা ভালো ফিল্ডারও। যদি প্রয়োজন হয় অবশ্য তারা কিপিংটাও সামলাতে পারবে।’
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়াতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ছিলেন বিজয়। কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে ইনজুরিতে পড়লে দেশে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকে তিনি আর জাতীয় দলে কোনো সুযোগই পাননি। তবে হাল ছাড়েননি এনামুল। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ, এনসিএল ও বিসিএলে পারফরম্যান্স করে গেছেন। সর্বশেষ এনসিএলে খুলনার হয়ে তিনি হাঁকান ডাবল সেঞ্চুরিও। মূলত ঘরের ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে দলে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ মিঠুন ২০১৪ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর সে বছর মাত্র ২টি ম্যাচ খেলেই বাদ পড়েছিলেন। তারপর তিন বছর অপেক্ষা করতে হলো তার জাতীয় দলে ফিরতে। বিশেষ করে এবার রংপুর রাইডার্সের হয়ে বিপিএলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে দারুণ পারফরম্যান্স করেন তিনি। ১৫ ম্যাচে ২৯.৯০ গড়ে এক ফিফটিতে ৩২৯ রান করেন এ ব্যাটসম্যান। ছিলেন সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যেও। ফিরেছেন সিলেট সিক্সার্সের হয়ে ১০ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে দারুণ সফল ছিলেন আবুল হাসান রাজু। ২০১২ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল সিলেটের এ পেসারের। কিন্তু সেখান থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৬ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেলেও ছিলেন উইকেট শূন্য। তবে টেস্টে ব্যাট হাতে তার আছে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড। মূলত তার পেস আক্রমণের সঙ্গে ব্যাটিংটাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মাশরাফি বিন মুর্তজার পেস বিভাগে রাজু ছাড়াও আছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকা তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দলে রাখা হয়েছে রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দলে থাকলেও ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি একটি ম্যাচও। এরই মধ্যে ইনজুরি কাটিয়ে বিপিএলে ফিরেছেন। খুব ভালো কিছু করতে না পারলেও ফিট ফিজের উপর ভরসা রেখেছেন নির্বাচকরা। অন্যদিকে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে স্পিন আক্রমণ সামলাবেন পরীক্ষিত তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়াও তৃতীয় স্পিনার হিসেবে দলে রাখা হয়েছে সানজামুল ইসলামকে। অনেকটাই ঠিক ছিল নাজমুল ইসলাম অপুর খেলার কথা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সানজামুলের কাছ থেকে ব্যাটিং সুবিধার কথাই ভাবা হয়েছে। গেল বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার ওয়ানডে অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে বল হাতে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। তবে এরপর তার আর সুযোগ হয়নি। ছিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও।
ঘরের মাঠে সিরিজে সাধারণত ১৪ সদস্যেরই দল ঘোষণা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে ২ জন বাড়তি ক্রিকেটার রাখা প্রসঙ্গে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘আসলে এখানে আমাদের ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে ফাইনাল পর্যন্ত। যে কারণে একজন বাড়তি ক্রিকেটার দলে রাখা। আর ইমরুল কায়েসের আঙুলে একটু ব্যথা আছে সেটিও আমাদের বিবেচনাতে রাখতে হয়েছে।’