১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত রাশিয়া প্রথম স্পুটনিক নামের একটি স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৭৭ কিলোমিটার দূরে সফলভাবে স্থাপন করতে সমর্থ হয়। এর ব্যাসার্ধ ছিল মাত্র ২৩ ইঞ্চি। এত ছোট উপগ্রহটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাব ফেললো বিশাল আকারে। রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে বাড়লো শত্রুতা! আমেরিকা মনে করল, স্যাটেলাইট দিয়ে রাশিয়া পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, সবিকিছু দেখতে চায়। আর এটি পৃথিবী থেকে এত দূরে যে কোন অস্ত্র দিয়ে একে ধ্বংস করাও সম্ভব নয়। আমেরিকাও বিপুল অর্থ সম্পদ বিনিয়োগ করে বিজ্ঞানী, গবেষকদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে। মাত্র ১৮ মাস আমেরিকা মহাকাশে তাদের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।
এছাড়া ফ্রান্স ১৯৬৫ সালে, চায়না ১৯৭০ সালে, ভারত ১৯৭৫ সালে, পাকিস্তান ১৯৯০ সালে, ইসরায়েল ১৯৮৮ সালে, মালয়েশিয়া ১৯৯৬ সালে, সিঙ্গাপুর ১৯৯৮ সালে, ইরান ২০০৫ সালে, ভিয়েতনাম ২০০৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১২ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আকাশে ছাড়ে। বর্তমানে ৫৬ টি দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। আজ রাতে বাংলাদেশ হবে নিজস্ব স্যাটেলাইট এর ৫৭তম দেশ।
তবে মাত্র ১২টি দেশের রয়েছে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষমতা। দেশগুলো হল – রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড, ভারত, ইসরাইল, ইরান, উত্তর কোরিয়া, ইউক্রেন ও নিউজিল্যান্ড)। অন্যান্য দেশকে স্যাটেলাইট আকাশে ওড়ানোর জন্য এই দেশগুলোর কোন একটির সাহায্য নিতে হবে।
এই স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এক বিরাট সাফল্য। এর ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। ইন্টারনেট, টেলিভিশন, টেলিযোগাযোগ, ভৌগলিক নিরাপত্তা সবকিছুতে এসেছে অভিনব পরিবর্তন। অবশ্য সেই সাথে বাড়িয়েছে শত্রুতাও। স্যাটেলাইট কে যুদ্ধবাজ, ক্ষমতাধর দেশগুলো কাজে লাগাচ্ছে সামরিক কাজেও।রাডার ইমেজিং, শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যাটেলাইট।
এখন পর্যন্ত মহাকাশে পাঠানো আনুমানিক স্যাটেলাইট সংখ্যাঃ রাশিয়ার প্রায় ১৪৬০, আমেরিকার প্রায় ১২৫০, চায়নার ২৭০, জাপানের ১৫০, ভারতের ১৭৫ , ফ্রান্সের ৬০, জার্মানির ৫০, ইংল্যান্ডের ৪০, পাকিস্তানের ৩ , ইসরায়েলের ১১, ইরানের ১ , সৌদি আরবের ১২টি।
তবে বর্তমানে কার্যক্ষম স্যাটেলাইট আছে আমেরিকার প্রায় ৬০০, রাশিয়ার ১৫০, চীনের ১৮০।
তাহলে বাকি স্যাটেলাইট গুলোর কি অবস্থা?
বিভিন্ন দেশ এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২০০ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। এর মাত্র ১৫০০টির মত বর্তমানে কার্যক্ষম। বাকি ২৭০০ এর মত স্যাটেলাইট অকেজো হয়ে গেছে। অকেজো হয়ে এগুলো মহাকশেই রয়ে গেছে। ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফিরিয়ে আনা অনেক জটিল ব্যাপারও বটে। ফিরিয়ে আনা হবে নাকি মহাকাশে কোনভাবে ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব সেটাও নিশ্চিত নয়। এই বিপুল সংখ্যক অকেজো স্যাটেলাইট মহাকাশে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। স্যাটেলাইট বিস্ফোরিত হয়ে ছোট ছোট টুকরা হয়ে ছড়িয়ে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এই ২৭০০ অকেজো স্যাটেলাইট এর ভর ২০ লাখ কেজিরও বেশি!
রাতের আকাশের দিতে তাকিয়ে একবার ভেবে দেখুন তো এই অসংখ্য তারকারর মাঝে ২৭০০ টি অকেজো কৃত্রিম উপগ্রহও আছে! আছে ২০ লাখ কেজি ধাতব আবর্জনা!