শাহ ইমদাদুল হক অপু। “সিহা মার্কেটিং এজেন্সি’ ও ‘সিহা মার্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। উদ্যোগতা জীবনের নানান অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন নিউজইনসাইড২৪.কমের এর সাথে। তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন ইসমাইল উদ্দীন সাকিব।
শুরুর গল্পটা জানতে চাই, ব্যবসা করবেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
কলেজ জীবন শেষ করার পর থেকেই আমি চাকরি জীবন শুরু করি। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করেছি। ৮ বছর চাকরি জীবনে একটাই ইচ্ছে ছিলো নিজে কিছু করব। ভার্সিটি স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করার কিছু পরিকল্পনা ছিল। প্রত্যেকটা স্টার্টআপ সফলতা পাওয়ার জন্যই অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আমিও তাদের মতোই একজন। চাকরি ছেড়ে হঠাৎ করে নিজে ব্যবসা শুরু করব, এই সিদ্ধান্তটা নেয়া ছিল সব থেকে কঠিন একটা কাজ। তবে আল্লাহর অশেষ রহমত আর নিজের আত্মবিশ্বাস এগুলোই আমাকে ব্যবসা শুরু করার জন্য সহায়তা করেছে।
ব্যবসার এত এত মাধ্যম থাকতে ই-কমার্সে আসলেন কেন?
ই-কমার্স হলো এখন সময় উপযোগী ব্যবসা। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতে পারবেন। একটা ব্যবসা যখন শুরু করা হয় তখন সেটি নিয়ে ভাবনার শেষ থাকে না। গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য যোগাড় করতে হবে, কোন জিনিস তাদের পছন্দ হবে, কোনটি হবে না, কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে সবার কাছে পৌঁছানো যায় এইসব নিয়ে খুব অল্প সময়েই সমাধান করে দেয় ই-কমার্স ব্যবসা । সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে এটা ২৪ ঘন্টায় গ্রাহকের জন্য খোলা রাখা সম্ভব। ফলে গ্রাহক তার নিজের সুবিধা সময় অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে পারে।
মার্কেটিং এজেন্সি নিয়ে কিছু বলুন। বর্তমান তরুণদের মধ্যে ফ্রিল্যান্স পেশা হিসেবে এর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ। এর ভবিষ্যৎ কেমন?
আমাদের SIHA Marketing Agency শুরু হয় গত জানুয়ারি ২০২০ সালে। এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৩০ টা কোম্পানির সাথে কাজ করতে পেরেছি। যার মধ্যে আমাদের ২ টা প্রজেক্টের কাজ চলছে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। আগামী ২০২৫ এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আমরা আমাদের SIHA Marketing Agency এর ব্রাঞ্চ অফিস খোলার পরিকল্পনা করছি। বর্তমান তরুণরা ফ্রিলেন্সিং পেশা হিসেবে আমাদের মার্কেটিং এজেন্সি তে ও কাজ করছে, ফলে তারা পড়ালেখার পাশাপাশি সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। পাশাপাশি তাদের কাজের একটা অভিজ্ঞতা ও নিচ্ছে যেটা পরবর্তীতে তার চাকরির জন্য অনেক উপকার হবে।
আমরা তরুণদের নিয়ে কাজ করার জন্য আগ্রহী। তরুণদের কাজের প্রতি ডেডিকেশন এবং আধুনিক চিন্তাভাবনা আমাদের কাজগুলোকে সহায়তা করছে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে তরুণদের আত্মবিশ্বাসী এবং কঠোর পরিশ্রমী করে তাদের ভালো একটা অবস্থান তৈরী করে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি এবং এটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন? কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে এই সেক্টরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ই -কমার্সের কল্যাণেই আজ আমরা ঘরে বসেই সব হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের সময় অপচয় এখন কম হচ্ছে।
করোনার কারণে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্যের গুণগত মান এবং সময়মত পণ্য ডেলিভারি পক্রিয়ার কাজ যদি সম্পূর্ণ করা হয় তবে বাংলাদেশে ই-কমার্স এর চাহিদা আরো ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাবে এবং সেটা শহর থেকে একটা সময় গ্রাম গুলোতে ও পৌঁছে যাবে বলে মনে করি। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এই সেক্টরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বেকার নিরসনের কাজের দিকেও কিন্তু ব্যপক ভূমিকা রেখেছে। ভালো খারাপমিলিয়েই সব হয়। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এই সেক্টরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভালো কাজ করছে তাদের উৎসাহ প্রদান করাটাই উচিত বলে মনে করি।
শুরুর দিকে কোন ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
অনেকের সাথেই নিজের ব্যবসার কার্যক্রম এর কথা বলি, কিন্তু আমাদের কোম্পানির কোন কাজের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অনেকেই আমাদের সাথে কাজ করতে রাজি ছিলোনা। একটা স্টার্টআপ কোম্পানি শুরু করার পর কোন কাজ না পাওয়া,সেই সময়টা সব থেকে কষ্টের এবং চ্যালেঞ্জের। সেই কষ্টটাকে চেপে এবং চ্যালেঞ্জটাকে সফলতায় পরিণত করার জন্য নিজের চাকরির অভিজ্ঞতা, আর আত্মবিশ্বাস সাথে নিয়ে আরো বেশি সময় দেয়া শুরু করলাম ব্যবসার জন্য।
প্রথমে কোম্পানির মালিকদের এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছি, তারা আমাদের সাথে কাজ করলে, আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে তাদের কোম্পানির জন্য কাজ করবো এবং তারা আমাদের থেকে মানসম্মত কাজ পাবে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আমরা আমাদের প্রথম কাজ পাই।
এবং খুব সফলতার সাথেই আমরা তাদের কাজ সম্পূর্ণ করি। ব্যবসার কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে সঠিকভাবে জানানো এবং প্রথম কাজ পাওয়াটাই সব থেকে চ্যালেঞ্জের ছিল আমার জন্য। আমরা আমাদের মানসম্মত কাজের মাধ্যমেই সেই চ্যালেঞ্জ গুলোকে টপকাতে পেরেছি।
একজন আদর্শ ব্যাবসায়ীর ঠিক কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে বলে আপনি মনে করেন ?
সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, একজন ব্যবসায়ী যে কাজটা করবে সেই কাজটাকে মন থেকে ভালোবেসে করতে হবে এবং তাকে অবশ্যই নিরলস পরিশ্রমী এবং ধৈর্যশীল হতে হবে। ব্যবসার কাজগুলো সততার সাথে করতে হবে। একজন ব্যবসায়ীর উভিত কমিটমেন্ট রক্ষা করা এবং কাজের প্রতি ডেডিকেট হওয়া, আন্তরিক হওয়া।
তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
আমাদের দেশের তরুণদের পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে যোগদান করার একটা প্রবণতা অনেক বেশি। অথচ পড়ালেখার পাশাপাশি সময়গুলো তারা আড্ডায় অথবা অন্য কোন ভাবে ব্যায় করছে। তরুণদের জন্য আমার একটাই পরামর্শ থাকবে, পড়ালেখার পাশাপাশি যতটুকু সময় পাবে ততটুকু সময় কাজের পিছে যেন ব্যয় করে। সেটা চাকরি করে হোক অথবা ব্যবসা করে হোক। অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণদের আরো অনেক ভূমিকা রাখা উচিৎ।