বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। সেই সাথে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দ্বারস্থ হবে পিএলও। এর আগে পিএলও গত মাসে জানিয়েছিল, রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে দেওয়া স্বীকৃতি তারা প্রত্যাহার করে নেবে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় পিএলওর নির্বাহী কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠকের পর পিএলও জানায়, অধিকৃত ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক পর্যায় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য ফিলিস্তিন সরকারকে তারা বলেছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার খবর অনুসারে, পিএলওর নির্বাহী কমিটি আরেকটি উচ্চতর কমিটি গঠন করতে চাইছে। যার উদ্দেশ্য হবে ইসরায়েলকে দেওয়া পিএলওর স্বীকৃতি বাতিল করা।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ধরে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় নিজেদের রাষ্ট্র গঠন করতে চেষ্টা করে আসছে। তা জানা সত্ত্বেও একতরফাভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ফিলিস্তিনি নেতারা। ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী এবং স্বাধীনতাকামী দল হামাসের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সেনারা। বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে গাজা ও পশ্চিম তীরে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে অবস্থান পরিবর্তনে পিএলওর ওপর চাপ বেড়েছে। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে হয় পিএলওর নির্বাহী কমিটির ওই বৈঠক।
বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএলও। এতে বলা হয়, ইসরায়েলে অবৈধ বসতি স্থাপন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ফিলিস্তিনিদের জাতিগত হত্যার বিষয়ে বিচারিক তদন্ত শুরু করতে আইসিসিকে অনুরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, ইসরায়েলি রাজনীতিক, সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক বিচারপ্রক্রিয়ায় আনা। ফিলিস্তিন সরকার ২০১৫ সালে আইসিসির কাছে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের নথি দাখিল করে। কিন্তু ফিলিস্তিনের অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শুরু করেনি আইসিসি।
পিএলওর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেবেন।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পিএলও সেন্ট্রাল কাউন্সিলের বৈঠকে অসলো চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করার হুমকি দেওয়া হয়।
বৈঠকে পরামর্শ আসে, ইসরায়েল যদি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগের সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেয়, যাতে পূর্ব জেরুজালেম হবে রাজধানী, তবে অসলো চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসাই হবে যথাযথ সিদ্ধান্ত।
পিএলও ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশের বেশি বেসামরিক ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় এবং ফিলিস্তিনের অর্থনীতির ওপর পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।