‘ডানকার্ক’ এক বিস্ময়কর মুগ্ধতার নাম

0

মুভিঃ ‘ডানকার্ক’ (Dunkirk)

পরিচালকঃ ক্রিস্টোফার নোলান

অভিনয়ঃ ফিয়োন হোয়াইটহেড, টম হার্ডি, মার্ক রাইল্যান্স, কেনেথ ব্রানাঘ এবং আরো অনেকে।
ডানকার্ক

‘ডানকার্ক’ এক বিস্ময়কর মুগ্ধতার নাম! ‘ডানকার্ক’ বদ্ধ এক জেল থেকে মুক্তি পাবার নাম! ‘ডানকার্ক’ এক অমর সৃষ্টির নাম!

মুভিটা IMAX এ দেখার পর থেকে যে ঘোরের মধ্যে ঢুকেছি, সেখান থেকে বেরোতে পারছি না। একে তো আমার ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার’ জনরাটা খুবি ভাল্লাগে। তার উপরে নোলান এর ক্যারিশ্মা। অদৃশ্য এক হাত যেন আমাকে টেনে নিয়ে গেছে মুভি থিয়েটারে। দু’ঘন্টা সিটে সেঁটে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমি নিজেই আটকা পড়েছি ঐ দ্বীপে।

এই মুভি দেখার এর ইতিহাস সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল না। ১৯৪০ সালে ফ্রান্সের ডানকার্ক নামের এই জায়গায় একপাশে জার্মান দের আর আরেক পাশে সমুদ্রের পরিবেষ্টনে আটকা পড়ে প্রায় ৪০০০০০ ব্রিটিশ আর ফ্রেঞ্চ সেনা। মাত্র ২৬ মেইল দূরে থাকা ‘বাড়ি’ যেন হয়ে উঠেছিল দুর্লভ এক গন্তব্যের নাম। ভয়ানক সেই পরিস্থিতি থেকে এক অসাধারণ রেস্কিউ মিশন শেষে বাড়ি ফেরে সেই সেনারা। এই গল্পটাই নোলান তাঁর অসাধারণ মুভি মেকিং দৃষ্টিকোণ থেকে কি অসাধারন ভাবে যে তুলে ধরেছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না।

নোলানের মুভি মেকিং এর একটা ধাঁচ আছে। তাঁর মুভি বানানোর স্টাইল দেখে আমার সবসময় মনে হয় যে একটা বড় কাঁথার বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন রঙের অনেকগুলো সুতো বুনা শুরু করেন; কিভাবে কিভাবে যেন শেষে এসে সব সুতো মিলে একটা অদ্ভূত সুন্দর ডিজাইন তৈরি হয়! আমি মুভি দেখতে যাবার আগে ভাবছিলাম, যুদ্ধের মুভিতে এটা কিভাবে করবেন নোলান?! তিনি ঠিকই সুতোগুলো গেথে এক অসাধারন চিত্রকর্ম যেন তুলে ফেললেন তাঁর নিজস্ব ক্যানভাসে।

প্রথম দৃশ্যে এক যুবক দেখতে বাচ্চার মত ব্রিটিশ সেনা টমির কোনরকমে জার্মান শ্যুটারদের গুলি থেকে নিজেকে বাচিয়ে ফেরার থেকে শুরু। আবার ক্যাপ্টেন ডসন এর ছোট্ট মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়া ব্রিটিশ চ্যানেল পেরিয়ে মৃত্যুকূপ ডানকার্কের দিকে সাহসী অগ্রসর আর ঐদিকে আকাশে দুজন দুঃসাহসী ফাইটার পাইলটের হার না মানা সাহসিকতার গল্প মাটি/পানি আর আকাশ এই তিনদিক থেকে সুতো বোনা শুরু করে ঠিকই একটা জায়গায় এসে মিশে গেছেন নোলান!

হ্যান্স জিমারের মিউজিক! ওহ! অ্যা ট্রিট! প্রতিটা সিনকে কি অসাধারণ বাস্তবে রুপ দিয়েছে মিউজিক আর চিত্রায়ন। সাথে নোলানের টিমের কি অভিনয়। মুভির ডায়লগ তো আমার কাছে মনে হয়েছে খুবি কম। কিন্তু কি সাস্পেন্স! বিশেষ করে টম হার্ডিকে পাইলট হিসেবে মুখে মাস্ক পড়া অবস্থায় অনেকটাই বেনের মত মনে হয়েছে শুধু একটু উলটো আর তা হল এখানে সে এক অসাধারণ সাহসী নায়ক! রাইল্যান্স , মার্ফি আর যুবা ফিয়োনের অভিনয় প্রতিটা মুহুর্তে আপ্নাওকে ভাবিয়ে তুলবে তাদের অবস্থায় থাকলে কি হত!!!

নোলানের বাকি সব মুভির মতই এই মুভিও আপনাকে একের অধিক বার দেখতে হবে। তবে এবার বুঝার সুবিধার কারনে নয়; মুগ্ধতার কারনে!

চোখ জুড়ানো এই মাস্টারপিস এখন পর্যন্ত আই এম ডিবি তে ৮.৭ পাওয়া যা মুভির কোয়ালিটির সাথে একদম সার্থক!
মাস্ট মাস্ট ওয়াচ! হ্যাপি ডানকার্কিং মুভি লাভার্স!

লেখকঃ Abir Rezwan Shuvo

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে