নতুন নাটক হোয়াইট হাউসে!

0

এবার প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।এই নিয়ে তাঁর গত সাত মাসে মোট আটজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হয় পদত্যাগ করলেন, নতুবা পদচ্যুত হলেন। ব্যাননের প্রস্থানের মধ্য দিয়ে নতুন চিফ অব স্টাফ জন কেলি ‘প্রাসাদ লড়াইয়ে’ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজের ক্ষমতা দৃঢ় করতে সক্ষম হলেন।

শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদী বলে পরিচিত ব্যানন খোলামেলা বর্ণবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেন। ব্রাইটবার্ট নিউজের প্রধান হিসেবে তিনি তীব্র ‘শ্বেত জাতীয়তাবাদী’ প্রচারণার নেতৃত্ব দেন। অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের অভাবিত বিজয়ের পেছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। শুরু থেকেই ব্যানন হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে নিজের এক ভিন্ন ক্ষমতাবলয় সৃষ্টির চেষ্টা চালান এবং অন্য দুই প্রধান কুশিলব, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও সাবেক চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।

এটি অবশ্য ব্যাননের পতনের একমাত্র কারণ নয়। যে আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, ট্রাম্প তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুত স্পষ্ট হয়ে যায় যে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ব্যানন যত সহজে আগুন জ্বালাতে সক্ষম, আগুন নেভাতে ততটা নয়। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি একের পর এক ‘বিজয়’ ছিনিয়ে আনবেন। কার্যত ঘটেছে উল্টোটা। গত সাত মাসে একটিও বড় কোনো সংসদীয় সাফল্য তাঁর খাতায় নেই, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সে ব্যর্থতার দায়ভার ব্যাননেরও। ক্ষমতায় আসা মাত্র ব্যাননের পরামর্শে ট্রাম্প তথাকথিত ‘মুসলিম নিষিদ্ধ’ ঘোষণা জারি করেন, আদালতের নির্দেশে যা হয় স্থগিত রাখতে হয়, অথবা শুধু অংশবিশেষ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। ত্রিদেশীয় বাণিজ্য চুক্তি নাফটা ও আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তিও ব্যাননের পরামর্শেই তড়িঘড়ি করে বাতিল করা হয়। ব্যাননপন্থীদের চাপে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে এক অঘোষিত বাণিজ্য যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েন।

ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের সহিংসতার ঘটনায় এতে জড়িয়ে পড়া উভয় পক্ষকে একই পাল্লায় রেখে যে মন্তব্য করে ট্রাম্প এখন বিপদে পড়েছেন, তার পেছনেও রয়েছেন ব্যানন। হোয়াইট হাউস সূত্র বলেছে, ব্যাননের পরামর্শেই ট্রাম্প সহিংসতার জন্য ‘সব পক্ষকে’ দায়ী করেন। এর ফলে ট্রাম্প নিজের দলেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

পদচ্যুতির দুই দিন আগে একটি উদারনৈতিক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে ব্যানন বিভিন্ন প্রশ্নে ট্রাম্পের অনুসৃত নীতির পরিপন্থী অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন। এটি তাঁর অপসারণের একটি কারণ হলেও বিদায়ের ঘণ্টা আগেই বেজে উঠেছিল। পদত্যাগপত্র জমা দিয়েই ব্যানন তাঁর পুরোনো কর্মক্ষেত্র ব্রাইটবার্ট নিউজে ফিরে গেছেন। রক্ষণশীলদের মধ্যে প্রভাবশালী এই ওয়েবসাইট তাঁর প্রত্যাবর্তনকে ‘নায়কোচিত’ আখ্যা দিয়েছে। পদচ্যুতির পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ব্যানন বলেন, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু হয়েছিল, তা এখন ‘মৃত’। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অনেকেই ব্যাননের প্রস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, শুধু ব্যাননকে বাদ দিলেই হবে না, হোয়াইট হাউসে অন্য যেসব শ্বেত জাতীয়তাবাদী রয়েছে, তাঁদেরও বাদ দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে