মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ইয়াবা গডফাদারদের ঘাঁটির সন্ধান

0
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ইয়াবা গডফাদারদের ঘাঁটির সন্ধান

একটি মামুলি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোঁজ মেলে দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবা নেটওয়ার্কের। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর মতোই অবস্থা। বেরিয়ে আসে তাদের গোপন ইয়াবা সাম্রাজ্যের অবিশ্বাস্য সব তথ্য-উপাত্ত। অনেকটা গুপ্তধনের মতোই মাদক সম্রাটদের ব্যাংকে টাকার পাহাড় ও বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পদের খোঁজও মেলে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর টেকনাফের তিন বিত্তশালী ইয়াবা গডফাদার ও তার সহযোগীরা একে একে ধরা পড়ে সিআইডির জালে। একযোগে নানামুখী অভিযান চালানো হয় গডফাদারদের ঘাঁটিতে। এভাবে শক্তিশালী সফল অপারেশনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় তিন ইয়াবা গডফাদারের পুরো নেটওয়ার্ক। ধরা পড়ে তিন গডফাদারসহ ২২ সহযোগী। তাদের ঠিকানা এখন কারাগার।

একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে সিআইডি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছা থাকলে শুধু ইয়াবা ক্যারিয়ার নয়, তাদের পুরো নেটওয়ার্ক হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব। তবে ধরা পড়া এ রকম গডফাদার তো হাতেগোনা কয়েকজন নয়, যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা থাকে তাদের সংখ্যাও এখন অনেক।

তদন্ত শুরু হয় যেভাবে: নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল শরিফ হোসেন ও আক্তার কামাল নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’জনের কাছ থেকে মোট আট হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

তারা জানায়, এসব ইয়াবার মালিক নিশা আক্তার নামের এক নারী। তারা শুধু বাহক। বেশির ভাগ মাদক মামলার মতোই ঘটনা এ পর্যন্ত হতে পারত। কিন্তু ফতুল্লা থানার দুটি মামলা নিয়ে সিআইডি হঠাৎ আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাদের কাছে খবর ছিল রিমান্ডে আসামিরা যে নিশা আক্তারের নাম বলছে তিনি সাধারণ কেউ নন। তিনি দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবা গডফাদার ফরিদুল আলমের সহযোগী।

জানা যায়, ফরিদুল টেকনাফ থেকে মোবাইল ফোনে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার ইয়াবার সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার আরও গভীরে গিয়ে অনুসন্ধানের জন্য মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ ইউনিট (অর্গানাইজড ক্রাইম)।

এরপর প্রযুক্তি ও স্থানীয় সোর্স ব্যবহার করে নিশা আক্তার ও ফরিদুল আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলে। এ জন্য টেকনাফেও সোর্স নিয়োগ করা হয়। একপর্যায়ে সফল হয় সিআইডি। ফরিদুল ও নিশা দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়। তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরপর দুটি মামলারই চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়।