পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর পূর্ব হতেই শহর, বন্দর গড়ে উঠেছ। এর মধ্যে কোনোগুলো এখনো টিকে আছে, কোনোগুলো কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে। এরকমই এক হারিয়ে যাওয়া এক শহর নিয়ে বলব যেটা গড়ে উঠেছিল রহস্যে ঘেরা নান মাদল দ্বীপে।
প্রশান্ত মহাসাগরের পুর্ব পাশে কয়েক হাজার দ্বীপ মিলে গড়ে উঠেছে বিশাল আকারের দ্বীপপুঞ্জ, যার নাম মাইক্রোশিয়া। মাইক্রোশিয়া দ্বীপপুঞ্জের পনপেই নামক দ্বীপের পূর্ব দিকে রয়েছে নান মাদল। এটি আস্ট্রলিয়া থেকে ১৬০০ মাইল ও লস এঞ্জেলস থেকে ২৫০০ মাইল দূরে অবস্থিত।
নান মাদল নামের অর্থ মাঝখানের জায়গা। এর চারদিকে অসংখ্য খাল জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই জন্য এই জায়গার এরূপ নাম হতে পারে বলে অনেক গবেষক ধারণা করেন।
ধারণা করা হয় এখানে ১০০০ জনের মত মানুষ বাস করত। আবার অনেকে মনে করেন সর্বোচ্চ ৫০০ এর মত মানূশ ছিল। এখানে সুসজ্জিত শহর ছিল। কেন মানুষ এত দূরে শহর গরে তুলেছিল আর কোনো আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়া কিভাবে সুসজ্জিত নগর গড়ে তুলেছিল তা এক আশ্চর্যের বিষয়।
নান মাদলকে ঘিরে রয়েছে বহু ছোট বড় দ্বীপ। এসব দ্বীপ খালের সাহায্যে একে অপরের সাথে যুক্ত। শহরটিকে রহস্যময় করে তুলেছে পাথরের প্রাচীর। শহরের চারদিকে রয়েছে দেড় কিলোমিটার লম্বা ও আধ কিলোমিটার চওড়া পাথরের প্রাচীর। এ দ্বীপে ৯৭ টি পাথর ঘেরা ব্লক রয়েছে। ব্লকগুলোর দেয়াল ২৫ ফুট লম্বা, ১৭ ফুট চওড়া। আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিটি ব্লক একইরকম জ্যামিতিক আকারে সাজানো আছে। একেকটি পাথরের ওজন ৫০ টনের মত। পাথরের তৈরি অসাধারণ শিল্পকর্ম মানুষকে অভিভূত করে।
এ পাথরগুলো কিভাবে এখানে এল তার সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন পানিতে ভেসে এসেছে পাথরগুলো। তবে এ ধারণার সাথে সবাই একমত না, কারণ এত বড় পাথর পানিতে ভেসে আসা কঠিন। আশেপাশে কোন খনি নেই, তাই খনি থেকে আসাও সম্ভব না। স্থানীয় লোকজন ভাবেন কোনো কালো জাদু বা অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে এগুলো এখানে এসেছে। তবে এসব কথা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। নান মাদলে এসব পাথর কিভাবে এখানে এসেছে তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো প্রত্নতাত্তিকগণ জানতে পারেন নাই।
নান মাদল বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরি। ধ্বংসস্তুপে অসংখ্য মন্দিরের অবশেষ, অসংখ্য সমাধি, পানি সংরক্ষণাগার, উপাসানালয় পাওয়া গেছে। এসব উপসানালয়ের সাথে মায়া সভ্যতার উপসানালয়ের মিল আছে।
নান মাদল নিয়ে বহু ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ ‘মু’ এখানে ছিল। নান মাদলই মু এর অংশ কিনা তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় নি। অনেকে মনে করেন ‘লেলুহ’ শহরটি যারা তৈরি করেছিল তারাই নান মাদল তৈরি করেছেন। তবে কার্বন টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় নান মাদল অনেক বেশী পুরাতন। তাই উক্ত ধারণাটি সঠিক নয়।
মাঝ সুমুদ্রের মধ্যে এরকম একটা দ্বীপে কিভাবে মানুষ বেঁচে ছিল তা খুব আশ্চর্যের বিষয়। রেডিও কার্বন টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ শহরের জন্ম। একসময় এ দ্বীপ জনশূন্য হয়ে যায়। কীভাবে জনশূন্য হয়ে যায় তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে অনেকে ধারণা করেন নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাবে এ এলাকার মানুষ অন্য জায়গায় চলে যায় বা মৃত্যু ঘটে। উনিশ শতকীর দিকে এ দ্বীপ পুরপুরি পরিত্যক্ত হয়।
১৯৮৫ সালে যুক্তরাস্ট্র সরকার এ পরিত্যক্ত নগরীকে জাতীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কো এটাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
তথ্যসুত্রঃ
ন্যশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল এবং নানান আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা