মারিয়া শারাপোভা। আবেদনময়ী দেহ শৈলী, দুরন্ত শারীরিক ভাষা, কেতাদুরস্ত লাইফস্টাইল, শৈল্পিক ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড আর রিভার্সের দারুণ সমন্বয়ে হয়ে উঠেছেন টেনিস নামক খেলার আদর্শ বিজ্ঞাপন। তাকে শুধু ভালোবাসতে পারেন তার খেলায় বিমোহিত হয়ে। এর সাথে যখন মিলিত হয় চেহারার মাধুর্য ও ঠোঁটের মায়াবী হাসি, তখন মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তৎকালীন জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুতে সবচেয়ে বেশিবার খোঁজ করা নামটি মারিয়া শারাপোভা! এতে বোঝা যায়, তিনি ভক্তদের কতটা প্রিয়!
১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল রাশিয়ার ন্যাগান শহরে জন্ম নেন মারিয়া শারাপোভা। বাবা ইউরি শারাপোভ, মা ইয়েলিনা শারাপোভ। শারাপোভার বয়স যখন চার, বাবার বন্ধু সাবেক নাম্বার ওয়ান ইয়েভগনি কাফেলনিকভের বাবা অ্যালেকজান্ডার কাফেলনিকভ তাকে উপহার দেন একটি টেনিস র্যাকেট। স্থানীয় টেনিস কোর্টে শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা, হাতেখড়ি বলা চলে যাকে। কিছুদিন পর সান্নিধ্য পান রাশিয়ার নামি কোচ ইউরি ইউতকিনের। তিনি শারাপোভার সুপ্ত প্রতিভার আঁচ করতে পেরেছিলেন, তাই ছোট শারাপোভাকে পাঠিয়ে দেন কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার টেনিস কমপ্লেক্সে। রত্ন চিনতে নাভ্রাতিলোভার ভুল হয়নি। মারিয়ার নতুন ঠিকানা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিক বোলেত্তেইরি টেনিস একাডেমি। আন্দ্রে আগাসী-মনিকা সেলেসের মতো বিখ্যাত তারকারা উঠে এসেছেন টেনিসের ‘গ্রেট ওয়াইড হোপ’ খ্যাত এই একাডেমি থেকে। সময় তখন ১৯৯৪। বাবার হাত ধরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্টের ফ্লোরিডায়। মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইউরি দেশ ছাড়লেও ছিল না পর্যাপ্ত পরিমাণ সঞ্চয়। অর্থের অভাবে মেয়ের খেলাধুলায় যাতে কোনো প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে তাই তিনি থালাবাসন ধোয়ার চাকরি নেন।
জন্মদাতার এহেন ত্যাগ শ্রম বিফলে যেতে দেন নি শারাপোভা। ২০০৪ সালে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জিতেন। সেই সময় বয়স মোটে সতেরো চলছিলো। ২০০৫ সালে প্রথমবার উঠেন র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। তত দিনে কষ্টের দিনগুলো পেছনে ফেলে নতুন সূর্যের আঁচ গায়ে মাখতে শুরু করেন শারাপোভা। তারপর ২০০৬ সালে ইউএস ওপেন, দুই বছর পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে টেনিসে নিজের আসন পাকা করে নেন শৈশব থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং আর স্ট্যাম্প সংগ্রহের শখকে লালন করা শারাপোভা। সফলদের ক্যারিয়ার থামিয়ে দিতে ইঞ্জুরি বরাবরই চেষ্টা করতে থাকে। তার বেলায়ও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২০০৭ সালে কাঁধের ইঞ্জুরি মাথাচাড়া দেয়। কোর্টে নামতে পারেননি পুরো এক বছর। কিন্তু তিনি ফিরেছেন। ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে পূর্ণ করেন আরাধ্য ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম (মেজর চারটি গ্র্যান্ড স্লামের সবগুলো জিতলে তাকে ক্যারিয়ার স্লাম বলে)। ২০১৪ সালে জিতেন ২য় ফ্রেঞ্চ ওপেন, যা কি-না তার পঞ্চম গ্র্যান্ড স্লাম।
২০১৬ সালে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ হোন। ডাক্তারের পরামর্শে ১৫ বছর বয়স হতে শ্বাসকষ্টের ওষুধ হিসেবে সেবন করে আসছেন এটি, কথার সত্যতা মেলাতে বেঁচে গেছেন। এক সময় যার খেলার খরচ যোগাতে বাবাকে মাজতে হয়েছিল থালা বাসন, সেই শারাপোভা ১১ বছর ছিলেন সর্বোচ্চ উপার্জন করা নারী ক্রীড়াবিদ। মারিয়া শারাপোভার গল্পটা রূপকথার মতোন। উত্থান- পতন, নানান চড়াই-উৎরাই পার করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। মানুষকে জানানোর প্রয়োজন উপলব্ধি করেছেন, সেই তাড়না থেকে বের করেন বই। ২৯টি ডব্লিউটিএ মেজর টাইটেল জেতা মারিয়া শারাপোভা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করেন নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ- আনস্টপেবল : মাই লাইফ সো ফার। যাতে উঠে এসে চমকপ্রদ গল্পগাঁথা।