সবকিছু যেন হতাসাময় তামিমকে ছাড়া!

0

বাংলাদেশ দল ব্লুমফন্টেইনের ম্যানগাউং ওভালে যখন ফিল্ডিং অনুশীলন করছে, তামিম ইকবাল তখন দলছুট। বৃষ্টিতে তড়িঘড়ি তা শেষ করতে বাধ্য হয় দল। দোতলায় ড্রেসিংরুমের সামনে ব্যালকনি থেকে দাঁড়িয়ে চিত্কার করেন মুশফিকুর রহিম, ‘নেট প্র্যাকটিস হবে না?’ তাঁর পাশে দাঁড়ানো তামিমকে কী অসহায়ই না লাগে!

সবকিছু যেন হতাসাময় তামিমকে ছাড়া

প্রথম টেস্টের বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এই অভিযানে এই ওপেনার নেই যে!

দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে প্রস্তুতি ম্যাচেই প্রথম ব্যথা পান বাঁ ঊরুর পেশিতে। পচেফস্ট্রুম টেস্ট খেলা নিয়ে সংশয় ছিল তাই যথেষ্ট। কিন্তু তামিম ঠিকই থাকেন একাদশে। ফিল্ডিং করার সময় একই জায়গায় চোট লাগে আবার। তবু তা নিয়েই প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন। ম্যাচ শেষে পচেফস্ট্রুমেই সেই ব্যথার জায়গা স্ক্যান করা হয়। ব্লুমফন্টেইনে এসেও আরেক দফা স্ক্যান।

সেই প্রতিবেদন এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে। এ জাতীয় ব্যথা সারতে যে তিন থেকে চার সপ্তাহের মতো সময় লাগে, সেটিও জেনে গেছেন তাঁরা। প্রথম টেস্টে তামিমের খেলার সম্ভাবনা তাই প্রায় শূন্যের কোঠায়।

কিন্তু এখনই তা হয়তো প্রতিপক্ষকে জানাতে চাইছেন না। সফরে দলের ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীন তাই তামিমের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষার কথাই বললেন, ‘তামিমের খেলা না-খেলা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা কাল (আজ) পর্যন্ত দেখব। ফিজিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই বোঝা যাবে ও খেলতে পারবে কি না। ’ তামিমের না থাকার বার্তাটি অবশ্য এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে প্রোটিয়া ক্যাম্পে। যদিও এ নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি ফাস্ট বোলার ডায়ানে অলিভিয়ের। কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাই বলে যান, ‘তামিম খেলবে কি না, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। ওদের দলে আরো অনেক ভালো ক্রিকেটার রয়েছে।

তা হয়তো রয়েছে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে এর প্রতিফলন কই! এমনিতেই বিশ্রামের কারণে সাকিব আল হাসান টেস্ট স্কোয়াডে নেই। ছিটকে গেলেন তামিমও। পেছনে আবার ৯০ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন। সামনে ব্লুমফন্টেইনের পেস বোলিং সহায়ক উইকেট। সব মিলিয়ে বেশ বেকায়দায় বাংলাদেশ। স্কোয়াডের ব্যাটসম্যান স্বল্পতাও এ ক্ষেত্রে সাহায্য করছে না তাদের।

স্কোয়াডে ব্যাটসম্যান-বোলারদের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দল ঘোষণার সময়ই। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়ার কারণে রাখা হয় পাঁচ পেসার। সঙ্গে দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। এই সাত বোলারের পাশাপাশি লিটন দাশকে স্পেশালিস্ট উইকেটরক্ষক ধরলে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান মোটে সাতজন। যে সাতের মধ্য থেকে ছিটকে গেলেন তামিমও। ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মমিনুল হক, মাহমুদ উল্লাহ, মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান এই ছয় ব্যাটসম্যান তাই একাদশে ঢুকে যাচ্ছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তা ইমরুল রানখরায় থাকা সত্ত্বেও; সাব্বির প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই বাজেভাবে আউট হওয়ার পরও, সৌম্যের ইনজুরি সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। শেষজন অবশ্য কাল ‘খেলার জন্য প্রস্তুত তো’ প্রশ্নের উত্তরে নেটে অনুশীলনে ঢুকতে ঢুকতে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘খেলার জন্যই তো এসেছি।

তামিম না থাকায় সৌম্যের সেই খেলার গুরুত্বটা এখন আরো বেড়ে গেছে নিঃসন্দেহে।

কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের জ্বলে ওঠাও। পচেফস্ট্রুমে প্রথম ইনিংসের বোলিংয়েই ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ, সেটি দল থেকে স্বীকার করা হোক বা না হোক। তিন উইকেটে ৪৯৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, উইকেট না পেলেও যেন রান আটকে রাখা বোলিং করতে পারে। সে কারণেই তো দুই দিনে ছয় শ রান না হওয়ায় খুশি ছিলেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু টেস্টে কি এমন রান আটকে রাখা বোলিংয়ে সাফল্য সম্ভব? কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমের সামনে এলেন দলের মূল পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু এ নিয়ে কিছু বলতেই পারেন না তিনি, ‘এটার কোনো উত্তর নেই। ’ এটুকুন তবু তো মুখে বলেছিলেন। টেস্ট জেতা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর সেরেছেন কিছু না বলেই। অর্থাৎ এরও কোনো উত্তর নেই।

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মন্দের ভালো মুস্তাফিজই। এখানেও দল নির্ভর করবে তাঁর ওপর। ‘এই উইকেট সেভাবে দেখিনি। পাশ দিয়ে গেছি। মনে হচ্ছে, গত ম্যাচের উইকেটের চেয়ে এটা অনেক ভালো’—মুস্তফিজের উপলব্ধি। তবে উইকেটের ওপর নির্ভর করে থাকতে নারাজ তিনি, ‘আমি উইকেট দেখে খুশি হই না। বল অনেক দ্রুত যাবে বলে যে আমি খুশি, এমন না। খেললে আমার কাজ হলো, আমি কিভাবে ভালো করব। আমি ভালো করলে দলের উপকার হবে। ’ নিজের সামর্থ্যের ওপরই আস্থা রাখতে চান তিনি, ‘প্রথম টেস্টে উইকেট ছিল একটু ধীরগতির। আমরা তো ওদের মতো অত জোরে ১৪০-এ বোলিং করি না। চেষ্টা করেছিলাম, আমার যে বৈচিত্র্য আছে, সেগুলো করার। তাতে হয়তো ভালো হয়েছে।

সেই ভালো করার দায় এখন পুরো বাংলাদেশ দলের। তামিম না থাকার কারণে সেটি আরো বেশি করে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে